Published : 28 Jun 2025, 11:21 AM
রুয়ান্ডা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) দীর্ঘদিনের ধ্বংসাত্মক সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
বিবিসি লিখেছে, দুই প্রতিবেশীর এই চুক্তির মধ্য দিয়ে কঙ্গোর মূল্যবান খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশাধিকার পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পূর্ব কঙ্গোতে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ‘অবসান, নিরস্ত্রীকরণ ও শর্তসাপেক্ষ সংহতির’ কথা চুক্তিতে দাবি করা হয়েছে।
তবে চুক্তির বিস্তারিত এখনও অস্পষ্ট এবং এর আগে এই অঞ্চলে হওয়া শান্তি চুক্তিগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তবু নতুন চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ও কঙ্গোর প্রেসিডেন্টরা ‘প্রজন্মান্তরের বিজয়’ হিসেবে উপস্থাপন করতে পিছপা হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, “আজ, সহিংসতা ও ধ্বংসের অবসান ঘটছে এবং পুরো অঞ্চল একটি নতুন আশা ও সম্ভাবনার অধ্যায় শুরু করছে।”
ওভাল অফিসে ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ডিআর কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রতিনিধিদের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প চুক্তিটিকে ‘গৌরবময় বিজয়’ বলে বর্ণনা করেন।
চুক্তিতে নিজের স্বাক্ষরের আগে ট্রাম্প বলেন, “এটি একটি বিশাল অগ্রগতি।”
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে চুক্তিতে সই করেন ডিআর কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট দপ্তর বলেছে, “প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তিশেকেদির আরেকটি কূটনৈতিক সাফল্য– সম্ভবত গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট তিশেকেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কগামে একসঙ্গে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ওয়াশিংটন যাবেন বলে আলোচনা রয়েছে, যদিও এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
সমঝোতার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কূটনীতিক জানান, চলতি বছরের শুরুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে শান্তি প্রচেষ্টা শুরু করে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি সংঘাতে লিপ্ত দুই দেশের রাজধানীতে দূত পাঠিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানায়। দোহায় কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টদের মধ্যে বৈঠকের পর একটি যৌথ কমিটি গঠিত হয়, যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল বলে জানান ওই কূটনীতিক।
এ বছরের শুরুতে এম২৩ বিদ্রোহীরা আঞ্চলিক রাজধানী গোমা, বুকাভু শহর ও দুটি বিমানবন্দরসহ পূর্ব ডিআর কঙ্গোর বড় একটি অংশ দখল করলে সংঘাত নতুনভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চায় এবং তার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দেয় বলে কবর প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ব কঙ্গো কল্টানসহ বিভিন্ন মূল্যবান খনিজে ভরা, যা বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক শিল্পের জন্য অপরিহার্য।
বিবিসি লিখেছে, রুয়ান্ডা এম২৩ বিদ্রোহীদের সমর্থন করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ সংক্রান্ত ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে। রুয়ান্ডার ভাষ্য, তাদের সামরিক উপস্থিতি প্রতিরক্ষামূলক, যা হুতু বিদ্রোহী গোষ্ঠী এফডিএলআরের (১৯৯৪ সালের গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত) হুমকি মোকাবিলায় কাজ করে।
রুয়ান্ডার অভিযোগ, কঙ্গো সরকার এফডিএলআরকে সমর্থন যুগিয়ে আসছে, যা কঙ্গো অস্বীকার করে আসছে। কিগালির কাছে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উদ্বেগজনক উপস্থিতি রয়েছে।
গত সপ্তাহে চুক্তির কিছু তথ্য ফাঁস হলে এক বিবৃতিতে ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সংঘাত নিষিদ্ধকরণের’ কথা বলা হয়, তবে নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া উদ্বাস্তু ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের ফিরে আসার বিষয়ে কথা বলা হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযাযী, কঙ্গোর প্রতিনিধিরা রুয়ান্ডার সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে জোর দিয়েছিল, তবে রুয়ান্ডা তাতে সায় দেয়নি। রুয়ান্ডার প্রায় সাত হাজার সেনা রয়েছে কঙ্গোতে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগের দিন রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ার এনডুহুংগিরেহে চুক্তির খসড়া ফাঁস হওয়াকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেন। বলেন, “রুয়ান্ডা অন্যান্য পক্ষকে আলোচনা গোপন রাখার আহ্বান জানিয়েছিল।”
কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সব সেনা প্রত্যাহারের দাবিই মূলত বিবাদের প্রধান বিষয়।
তবে এনডুহুংগিরেহে বলেন, “চুক্তির কোথাও ‘রুয়ান্ডা প্রতিরক্ষা বাহিনী’, ‘রুয়ান্ডার সেনা’ বা ‘প্রত্যাহার’ শব্দবন্ধের ব্যবহার নাই।”
চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগে তিশেকেদির দপ্তর বলে, “চুক্তিতে রুয়ান্ডার সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে... তবে ‘প্রত্যাহার’ এর বদলে ‘অবসান’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ এর অর্থের ব্যাপকতা বেশি।”
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে রুয়ান্ডা সরকারের মুখপাত্র ইয়োল্যান্ডে মাকলো রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে তখনই, যখন এফডিএলআর’কে নিরস্ত করা হবে।“
বর্তমান সংঘাতের প্রধান ভূমিকা রাখা এম২৩ বিদ্রোহীরা আসলে ১৬ বছর আগের একটি ব্যর্থ শান্তি চুক্তির ফল, যা তাদের নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে পারেনি।
গত বছর রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর বিশেষজ্ঞরা অ্যাঙ্গোলার মধ্যস্থতায় দুইবার চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন, যেখানে রুয়ান্ডার সেনা প্রত্যাহার এবং যৌথভাবে এফডিএলআরের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা ছিল। কিন্তু দুই দেশের মন্ত্রীরা শেষ পর্যন্ত তা অনুমোদন করেননি। মার্চ মাসে অ্যাঙ্গোলা মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়ায়।