Published : 05 Mar 2025, 01:26 PM
ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজা পুনর্গঠনের জন্য ৫৩০০ কোটি ডলারের মিশরীয় এক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন আরব নেতারা।
মঙ্গলবার মিশরের রাজধানী কায়রোতে আরব নেতাদের এক জরুরি সম্মেলনে পরিকল্পনাটি অনুমোদিত হয়।
গাজা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘মধ্যপ্রাচ্য রিভিয়েরা’র বিকল্প বলে মনে করা হচ্ছে এই পরিকল্পনাকে। মিশরীর পরিকল্পনায় গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তুচ্যুতি এড়ানো হয়েছে।
আল আরাবিয়া নিউজ জানিয়েছে, গাজার পুনর্গঠনের অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য আরব নেতারা একটি ট্রাস্ট ফান্ড স্থাপনেও সম্মত হয়েছেন। পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক চাঁদার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি চালিয়ে নিতে ট্রাস্ট ফান্ড ‘সব দাতা দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া আর্থিক প্রতিশ্রুতি গ্রহণ’ করবে।
এতে আরব নেতারা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখণ্ড থেকে বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো উদ্যোগের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ওই সব প্রচেষ্টাকে আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন তারা।
সম্মেলনে নিজের বক্তৃতায় সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, রিয়াদ ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার লঙ্ঘনকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে এবং ফিলিস্তিনি সমস্যার দ্বি-রাষ্ট্রীক সমাধানকে সমর্থন করে।
তিনি আরও বলেছেন, গাজার পুনর্নির্মাণকালে গাজাবাসীদের সেখানে রেখেই তা করতে হবে। অপরদিকে গাজার পুনর্নির্মাণের সময় গাজাবাসীদের তৃতীয় একটি দেশে পুনর্বাসনের কথা বলেছে ওয়াশিংটন আর সম্ভবত স্থায়ীভাবে।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আব্দেলাত্তি জানিয়েছেন, তার দেশ তাদের গাজা পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনার জন্য আগামী শুক্রবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি সম্মেলনে যোগ দেওয়া মুসলিম দেশগুলোর কাছে সমর্থন চাইবে।
আব্দেলাত্তি বলেছেন, “৭ মার্চ জেদ্দায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারাশেনের (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেও আমরা এই পরিকল্পনা অনুমোদনের চেষ্টা করবো যেন এটি একইসঙ্গে আরব ও ইসলামিক পরিকল্পনা হয়ে ওঠে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য কোনো দেশে পুনর্বাসন করে যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভূখণ্ডটি পুনর্নির্মাণ করবে, এমন এক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে শঙ্কা মিশর, জর্ডান ও উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর। ট্রাম্পের প্রকল্পের বিকল্প কী হতে পারে, তা নিয়ে এই আরব রাষ্ট্রগুলো প্রায় এক মাস ধরে আলোচনা করছিল।
আরব নেতাদের সম্মেলনের চূড়ান্ত খসড়া প্রজ্ঞাপন রয়টার্স দেখেছে, তাতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি বাস্তুচ্যুত করার মার্কিন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তা আল-সিসি জানিয়েছেন, কায়রোতে আরব নেতাদের সম্মেলনের শেষ দিন গাজা নিয়ে মিশরের প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়েছে।
তার এই ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে গৃহীত প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। অপরদিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির সমালোচনা করেছে।
মিশরীয় পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় হোয়াইট হাউজ বলেছে, আরব রাষ্ট্রগুলো গাজার বাস্তবতাকে আমলে নেয়নি আর ট্রাম্প তার প্রস্তাবে অটল আছেন।