Published : 10 Jun 2025, 10:36 AM
যুক্তরাষ্ট্রে টিকা বিষয়ক পরামর্শক কমিটির ১৭ সদস্যের সবাইকে অপসারণ করেছেন টিকা নিয়ে সংশয়বাদী হিসেবে পরিচিত দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক সম্পাদকীয়তে বলেছেন, অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিসেসের (এসিআইপি) সদস্যদের ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ টিকার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করেছে।
কেনেডির দাবি, তিনি আমেরিকানদের জন্য ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ টিকা নিশ্চিত করতে চান।
বিবিসি লিখেছে, কেনেডির দীর্ঘদিনের টিকাবিরোধী মনোভাব নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করে আসছেন। তবে সেনেটে তিনি বলেছিলেন, তিনি টিকা ‘সরিয়ে নিচ্ছেন না’।
কেনেডি সোমবার ঘোষণা দেন, এসিআইপির সব সদস্যই ‘অবসরে’ যাচ্ছেন। এই ১৭ সদস্যের মধ্যে আটজন গত জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসনের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বেশিরভাগ সদস্যই বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ।
কেনেডির ভাষ্য, যদি তিনি এই কমিটি ভেঙে না দিতেন, তাহলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারত না।
“এই কমিটি দীর্ঘদিন ধরে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জর্জরিত এবং যে কোনো টিকার অনুমোদনে নামমাত্র সিলমোহরের ভূমিকা পালন করছে।”
কেনেডি দাবি করেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও ওষুধ কোম্পানিগুলোই ‘জনগণের আস্থার সংকট’ সৃষ্টি করেছে, যাকে ‘ভ্রান্ত তথ্য বা বিজ্ঞানবিরোধী মনোভাবের ওপর দায় চাপিয়ে’ ব্যাখ্যা করেন অনেকে।
১৯৯০ ও ২০০০ দশকের উদাহরণ টেনে সম্পাদকীয়তে কেনেডি বলেন, এই স্বার্থের সংঘাত এখনো চলমান।
“এসিআইপির বেশিরভাগ সদস্যই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পয়সাকড়ি পেয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে টিকা বিপণনকারী কোম্পানিও।”
বিবিস লিখেছে, এই পদক্ষেপ কেনেডির শপথবাক্যের সময় দেওয়া আশ্বাসের ঠিক বিপরীত। লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সেনেটর ও চিকিৎসক বিল ক্যাসিডি বলেছেন, এসিআইপিতে কোনো পরিবর্তন না করার আশ্বাস তাকে দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ক্যাসিডি সোমবার এক্স পোস্টে লেখেন, “এখন শঙ্কা হচ্ছে- এসিআইপি এমন লোকে ভরে যাবে, যাদের টিকা নিয়ে কোনো জ্ঞান নেই, কেবল সন্দেহ আছে। আমি কেনেডির সঙ্গে মাত্রই কথা বলেছি এবং তেমনটা যেন না হয়, সেজন্য আমি তার সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাব।”
এসিআইপি সদস্যদের ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ থাকলে তা অনলাইনে প্রকাশ করতে হয়। যদি এমন দ্বন্দ্ব থাকে, তবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।
কেনেডি লিখেছেন, “এসিআইপি সদস্যরা দুর্নীতিগ্রস্ত- এ সমস্যা তেমন নয়। বেশিরভাগই জনস্বার্থে কাজ করতে চেয়েছেন- নিজেদের বোঝাপড়া অনুযায়ী।
“সমস্যা হল- তারা এমন শিল্পঘেঁষা উদ্দীপনা ও দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবস্থার অংশ, যা কেবল শিল্পের স্বার্থ দেখে।”
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সংগঠন আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ব্রুস স্কট বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে, যা অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে।’
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “হামের প্রাদুর্ভাব এবং শিশুদের টিকাদানের হার কমার মধ্যে এই পদক্ষেপ এল। এখন এমন রোগ ছড়ানো সুযোগ পাবে, যা টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।”
বিবিসি লিখেছে, বোর্ড সদস্য হিসেবে কাদের আনবেন তা খোলাসা করেননি কেনেডি। এসিআইপির একটি সভার জন্য আগামী ২৫ জুন দিন ঠিক করা আছে, যেখানে কোভিড, ফ্লু, মেনিনজাইটিস, আরএসভিসহ বিভিন্ন রোগের টিকার সুপারিশ নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা।