Published : 27 Sep 2024, 08:05 PM
ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টি লাড্ডু নিয়ে অপ্রীতিকর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর একটি কথাকে কেন্দ্র করে এ বিতর্কের শুরু।
নাইডু বলেছিলেন, রাজ্যের বিখ্যাত তিরুপতি মন্দিরে প্রতিদিন দেবতার ভোগের জন্য যে লাড্ডু চড়ানো হয় এবং তারপর ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, সেগুলোতে পশু এবং উদ্ভিজ্জ চর্বি মেশানো হয়।
তিনি বলেন, যে ঘি (পরিষ্কার করা মাখন) মিষ্টিগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে “গরুর চর্বি, মাছের তেল এবং অন্যান্য অবিশুদ্ধ দ্রব্য” মেশানো থাকে। ভারতে মন্দিরের প্রসাদ সাধারণত নিরামিষ হয়।
প্রথমে বিষয়টিকে খাদ্যে ভেজাল বলেই মনে করা হয়েছিল- যা কর্তৃপক্ষ ভারতে নিয়মিতই মোকাবেলা করে থাকে। কিন্তু নাইডুর বক্তব্যের পর থেকেই বিষয়টি সংবাদ শিরোনাম হয়ে উঠেছে। বড় রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে এবং অন্যান্য মন্দিরগুলো তাদের মিষ্টির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্ধ্র প্রদেশের তিরুপতি মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র স্থান। বালাজি নামে পরিচিত হিন্দু দেবতা শ্রী ভেঙ্কটেশ্বরের জন্য নিবেদিত এ মন্দিরের সম্পত্তির মূল্য কোটি কোটি ডলার এবং এ মন্দিরে প্রতি বছর ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ ভক্ত সমাগম হয়।
তিরুপতি মন্দিরের বিখ্যাত লাড্ডুগুলো ছাতু, চিনি, কাঠবাদাম, কিসমিস, এলাচ এবং বিশুদ্ধ গরুর ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। সেগুলো প্রসাদ হিসাবে ভক্তদের দেওয়া হয়, যা তাদের কাছে দেবতার আশীর্বাদস্বরূপ। লাড্ডুগুলো ভক্তরা বাড়ি নিয়ে গিয়ে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায়। মন্দিরের রান্নাঘরে প্রতিদিন ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি লাড্ডু তৈরি করা হয়।
ফলে নাইডু যে কথা বলেছেন, তাতে ভক্তদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক ধর্মীয় নেতাই কর্তৃপক্ষকে মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে পুরোহিত রামানা দীক্ষিতুলু বলেন, “যেসব মন্দিরে কোটি কোটি ভক্ত আসে, সেসব জায়গায় যাতে এত বড় পাপের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।”
আরেকজন বিশিষ্ট পুরোহিত স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সারস্বতী বলেন, “কোটি কোটি হিন্দুর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আস্থার ওপর এ এক ধরনের আক্রমণ।"
একটি সংবাদ চ্যানেলকে তিনি বলেন, "এ এক সংগঠিত অপরাধ এবং হিন্দুদের জন্য বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। বিষয়টি তদন্ত করা উচিত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
জুনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন নাইডু। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, অশুদ্ধ লাড্ডুগুলো সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রেড্ডির শাসনকালে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। মন্দিরের বোর্ড রাজ্য সরকার পরিচালনা করে এবং মন্দির পরিচালনা প্রধানকে নিয়োগ দেয়।
নাইডু অবিশুদ্ধ লাড্ডু বিতরণের জন্য আগের রেড্ডি প্রশাসনকে দায়ী করায় এই বিতর্ক রাজনৈতিক বৈরিতাতেও রূপ নিয়েছে। রেড্ডি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং নাইডুর বিরুদ্ধে নোংরা রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি বলেছেন, নাইডুকে কঠোরভাবে তিরস্কার করতে হবে।
নাইডু বলেছেন, তিনি ঘি সরবরাহকারী পরিবর্তন করেছেন এবং লা্ড্ডু তৈরির বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছেন, যার নেতৃত্বে আছেন একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে রেড্ডি লিখেছেন, নাইডু মিথ্যাবাদী, তিনি মন্দির ট্রাস্টের ভাবমূর্তি বিকৃত করছেন ভুয়া প্রচারের মাধ্যমে। তিনি বলেন, মন্দিরে ঘি'র পবিত্রতা পরীক্ষার জন্য কোনো ল্যাব নেই। তবে লাড্ডুর চেহারা দেখে এবং গন্ধ শুঁকে অবিশুদ্ধতা শনাক্ত করার অভিজ্ঞতা আছে কর্মকর্তাদের।