Published : 25 May 2025, 12:24 PM
বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় দিনে রাশিয়া ও ইউক্রেইন প্রত্যেকে ৩০৭ জন করে সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কো ও কিইভ।
এ মাসের মাঝামাঝি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হওয়া শান্তি আলোচনায় দুই পক্ষ এক হাজার করে বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে কয়েক দিনব্যাপী এ বন্দি বিনিময় চলছে।
সমঝোতা অনুযায়ী উভয় পক্ষ এক হাজার করে বন্দি ছেড়ে দিলে তা হবে যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়ের ঘটনা। এই বন্দি বিনিময়ের পথ ধরে ইউক্রেইনে যুদ্ধরত দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা নতুন ধাপে উন্নীত হবে বলে আশা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের।
শনিবার আলাদা আলাদা করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দ্বিতীয় দিনের বন্দি বিনিময়ের ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“আগামীকাল আমরা আরও বেশি আশা করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের যারা রাশিয়ার হাতে রয়েছে তাদের প্রত্যেককে ফিরিয়ে আনা,” টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন জেলেনস্কি।
রয়টার্স টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত ইউক্রেনীয় সেনারা ইউক্রেইনের অভ্যন্তরে একটি নির্ধারিত স্থানে বাস থেকে নামছেন, তাদের বেশিরভাগেরই গায়ে নীল ও হলুদ জাতীয় পতাকা জড়ানো ছিল। এসময় বাইরে অপেক্ষারত পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
ইউক্রেইনের সেনাসদস্য দিমিত্র হাভ্রিলেঙ্কো তার ছেলে ও মা’কে দীর্ঘক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকেন।
“সত্যি কথা বলতে আমি স্তম্ভিত। ১৭টা কঠিন মাস গেছে, খুবই কঠিন। কিন্তু সব ঠিক আছে,” বলেছেন তিনি।
নিখোঁজ সেনাসদস্যদের ছবি হাতে জড়ো হওয়া অনেক নারীকেও সেখানে দেখা গেছে, তারা মুক্তিপ্রাপ্তদের কাছে নিখোঁজদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছিলেন।
এদেরই একজন ইয়ানা বলেছেন, কেউ তার স্বামীর খোঁজ দিতে পারছেন না। গত বছর রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেইনের অভিযানের পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।
“হয়তো (ছাড়া পাওয়া) ছেলেরা তার ছবি চিনতে পারবে, কিছু তথ্য দিতে পারবে। আমরা এখানে দ্বিতীয় দিনেও আছি। হয়তো আজ (কিছু হবে),” বলেছেন তিনি।
জেলেনস্কির কার্যালয়ের দেওয়া ফুটেজে ছাড়া পাওয়া এক সৈন্যকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে, তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন সামরিক পোশাক পরা এক নারী। স্বাগত জানানোর দায়িত্বে থাকা লোকজন মুক্তি পাওয়া সেনাদের হাতে সেলফোন তুলে দিচ্ছেন, যেন তারা তাদের আত্মীয়পরিজনকে ফোন করতে পারেন।
“বিশ্বাস করতে পারছি না, আমি বাড়ি ফিরেছি,” বলতে শোনা গেছে ছাড়া পাওয়া একজনকে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছাড়া এক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওতে ছাড়া পাওয়া রুশ সেনাদের বাস থেকে নামতে এবং রাশিয়ার পতাকার পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রুশ সাম্রাজ্যের পতাকার সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে।
এবারের বন্দি বিনিময়ের প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়েছে শুক্রবার, সেদিন রাশিয়া ও ইউক্রেইন প্রত্যেকেই ৩৯০ জন করে বন্দিকে ছেড়েছিল, যাদের মধ্যে ১২০ জন করে বেসামরিকও আছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বন্দি বিনিময় করা হবে বলেও জানিয়েছিল তারা।
শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, চলমান বন্দি বিনিময় কার্যক্রম শেষ হলে রাশিয়া দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ থাকবে এমন একটি খসড়া নথি ইউক্রেইনকে দিতে প্রস্তুত।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেও ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ রাশিয়ার দূরপাল্লার ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কেঁপেছে। এদিনের হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছে বলেও ইউক্রেইনের দিক থেকে জানানো হয়েছে।
গত ১৬ মে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ইস্তাম্বুলে তিন বছর পর সরাসরি আলোচনা হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপাচাপিতেই দুই পক্ষ সেদিন ইস্তাম্বুলে বসেছিল।
সেদিনের আলোচনায় এই যুদ্ধ বন্দি বিনিময় ছাড়া আর কিছুতেই সমঝোতা হয়নি। ট্রাম্প অবশ্য এই বন্দি বিনিময়েকেই অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন এবং সমঝোতায় উপনীত হওয়ায় দুইপক্ষকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।