Published : 13 Apr 2025, 12:44 PM
চীনের রাজধানী বেইজিংসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল ঝড়ো হাওয়ার কারণে শনিবার শত শত ফ্লাইট বাতিল এবং ট্রেন চলাচল স্থগিত হয়েছে।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টা (গ্রিনিচ সময় ০৩:৩০টা) পর্যন্ত বেইজিংয়ের দুই প্রধান বিমানবন্দরে মোট ৮৩৮টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার (প্রায় ৯৩ মাইল) গতিবেগে বাতাস বয়ে যাওয়ায় রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী বাতাস বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। পুরো সপ্তাহান্তজুড়েই এ ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঝড়ের কারণে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেইজিংয়ের পার্কগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে; শত শত পুরনো গাছ মজবুত করা হয়েছে, আবার কিছু গাছ ছাঁটা হয়েছে ঝুঁকি কমাতে। তবুও এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি গাছ বাতাসে উপড়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভয়াবহ ঝড়ো হওয়ার প্রভাবে রাজধানীর রাস্তাঘাট অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রশাসনের নির্দেশে নাগরিকদের ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষ যারা ৫০ কেজির কম ওজনের, তাদের উড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় তাদেরকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কিছু রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
বাতিল হয়েছে বিমানবন্দরের এক্সপ্রেস সাবওয়ে লাইনসহ বেশ কিছু হাই-স্পিড রেল পরিষেবা। বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু গাড়ি, যদিও কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শহরের ২ কোটি ২০ লাখ বাসিন্দাকে ‘প্রয়োজন ছাড়া ঘর না ছাড়ার’ পরামর্শ দিলে বেশিরভাগ মানুষই ঘরেই অবস্থান নেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, “সবার মধ্যে একটু ভয় ছিল। আজ রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি আমার কল্পনার চেয়ে কিছুটা কম ভয়াবহ।”
সাংহাইয়ের কাছে চেজিয়াং প্রদেশ থেকে আসা এক ব্যবসায়ী বলেন, “ঝড়ের কারণে গত রাত ও আজকের সব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তাই কয়েকদিন পর আবার টিকিট কাটব বলে ভাবছি। এখন বেইজিংয়ে আটকে পড়েছি।”
এই শক্তিশালী বাতাস মঙ্গোলিয়ার উপর সৃষ্ট একটি ঠাণ্ডা ঘূর্ণাবর্ত থেকে এসেছে বলে জানানো হয়েছে। সপ্তাহান্তজুড়ে এর প্রভাব থাকলেও রোববার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বসন্তকালে মঙ্গোলিয়া থেকে বয়ে আসা বালু ও ধুলোর ঝড় চীনে নিয়মিত ঘটনা হলেও, আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব ঝড় এখন আরও তীব্র ও বিধ্বংসী হয়ে উঠছে।
এই ঝড় মোকাবেলায় বেইজিং দশ বছর পর প্রথমবারের মতো ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করেছে। চীন বাতাসের গতি ১ থেকে ১৭ মাত্রায় মাপে।
চীনের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ১১ মাত্রার বাতাস ‘গুরুতর ক্ষতি’ করতে পারে, আর ১২ মাত্রার বাতাস ‘চরম ধ্বংসাত্মক’।
চলতি সপ্তাহান্তে বেইজিং ও উত্তরাঞ্চলে বাতাসের গতি ১১ থেকে ১৩ মাত্রার মধ্যে থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি রবিবার থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।