Published : 20 Dec 2023, 12:45 PM
কিশোরী মেয়েকে হত্যার অভিযোগে ইতালির একটি আদালত পাকিস্তান বংশোদ্ভূত এক দম্পতিকে মঙ্গলবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে।
খুন হওয়া ওই কিশোরীর নাম সামান আব্বাস, বয়স ১৮ বছর। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সামান নিখোঁজ হয়। যা নিয়ে হইচই শুরু হলে জোর তদন্তে নামে পুলিশ। সেখানেই বেরিয়ে আসে তথাকথিত ‘অনার কিলিংয়ের’ ভয়াবহ এক চিত্র।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, কিশোরী সামানকে তার বাবা-মা নিজেদের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য ইতালি থেকে জোর করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সামান তাতে রাজি হয়নি।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কিশোর বয়সে সামান তার বাবা-মার সঙ্গে ইতালি আসে এবং নভেল্লারায় বসবাস শুরু করে। সেখানে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং আঞ্চলিক রাজধানী বোলোগনায় একটি সড়কে সামান তার ছেলেবন্ধুকে চুমু দিচ্ছে এমন একটি ছবি সামানের বাবা-মার হাতে পড়ে।
যা নিয়ে বাবা-মার সঙ্গে কিশোরী মেয়ের বিরোধ শুরু হয়। ২০২০ সালে সামানকে তার বাবা-মা জোর করে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়ে যেতে রাজি হয়নি। ওই বছর অক্টোবর থেকে সামান বাড়ি ছেড়ে সোস্যাল সার্ভিসের অধীনে একটি প্রোটেকশন সেন্টারে থাকা শুরু করে।
২০২১ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে সে আবার তার নভেল্লারার বাড়িতে ফিরে যায়। এবং কিছুদিনের মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যায়।
আদালতে প্রসিকিউটরা বলেছেন, সামানকে কৌশলে বাড়িয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল সামানের পরিবারের তিন সদস্য একটি কোদাল, শাবল এবং নীল রঙের একটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। পরদিন আরেকটি সিসিটিভি ফুজেটে দেখা যায়, সামান তার বাবা-মার সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সামানের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে তার ঘাড়ের একটি হাড় ভাঙা পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত ধস্তাধস্তির সময় সেটি ভেঙে যায় বলে দাবি করে প্রসিকিউটরা।
সামান নিখোঁজ হওয়ার ১৮ মাস পর তার মৃতদেহ তাদের খামারবাড়িতেই মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। দাঁতের পরীক্ষার মাধ্যমে মৃতদেহ সনাক্ত হয়।
এ বছর অগাস্ট মাসে সামানের বাবা শব্বর আব্বাস পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হন এবং তাকে বিচারের জন্য ইতালির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার স্ত্রী নাজিয়া শাহীন এখনো পাকিস্তানে লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার অনুপস্থিতিতেই আদালত তার বিচার করেছে।
উত্তরের নগরী রেজ্জিও এমিলিয়ার আদালত মঙ্গলবার শব্বর ও তার স্ত্রীকে মেয়ে হত্যার অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করার সুযোগ পাবেন।
রয়টার্স জানায়, মঙ্গলবার রায় ঘোষণার দিনও আদালতে চোখের পানি ফেলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন শব্বর।
বলেন, “এই বিচার এখনো শেষ হয়েনি। আমিও জানতে চাই কে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে।”