Published : 11 Dec 2014, 05:35 PM
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ওমা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায় হায় রে
ওমা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মত,
মরি হায়, হায় রে
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ওমা আমি নয়নজলে ভাসি ॥
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গত দুই কি তিন দশক ধরিয়া বাংলাদেশে (এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও) বাংলা বানান সংস্কার লইয়া একটা আন্দোলন চলিতেছে। এই আন্দোলনের নেতারা বিবিধ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান দখল করিয়া লইয়াছেন। আর জাতীয় সমাজের যে অংশ সর্বসাধারণের শিক্ষাদীক্ষা ও গণতন্ত্র বলিয়া পরিচিত জনমত গঠন করেন তাহারাও এই সংস্কার আন্দোলনে সায় দিয়াছেন। ফলে দেশের পাঠ্যপুস্তক ও সংবাদপত্র জগতে নতুন বানানরীতি কিছু পরিমাণে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। এই আন্দোলনের নেতা দাঁড়াইয়াছেন বাংলা একাডেমির মতন জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং নীত হইয়াছেন 'প্রথম আলো'র মতন বহুল প্রচারিত খবরের কাগজ।
ইহার ফলাফল কি সর্বাংশে ভাল হইয়াছে? আমাদের ধারণা, হয় নাই। ইহাতে কোথায়ও কোথায়ও হিতে বিপরীত ফল দেখা গিয়াছে। এখানে মাত্র একটি বানানের কাহিনী পেশ করিলেই এই অহিতের একটা নমুনা হয়ত দেখা যাইবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯০৫ সালে রচিত একটি গানের অংশবিশেষ এখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বলিয়া গণ্য হইয়াছে। এই অংশটুকুতে–অধ্যাপক মনসুর মুসা হিশাব করিয়াছেন–মোট শব্দসংখ্যা ৮০। এই হিশাবটি মোট শব্দ বা টোকেনের। আর পুনরাবৃত্তি বাদ দিয়া গণ্য করিলে একক বা টাইপ শব্দ দাঁড়ায় ৫৪। মনসুর মুসা গণিয়া দেখিয়াছেন, গানের এই অংশটিতে সবার চেয়ে বেশি ব্যবহৃত 'কি' শব্দটির বানান 'কী'। (মুসা ২০০৭: ৮৯-৯০)
মনসুর মুসা দেখাইয়াছেন, রবীন্দ্রনাথের গানের এই অংশে–মানে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে–ব্যবহৃত ছয়টি 'কী' শব্দের প্রত্যেকটিই 'বিশেষণ' শব্দ। একটাও 'সর্বনাম' কি 'অব্যয়' পদবাচ্য নহে। তিনি লিখিয়াছেন, "এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বইয়ের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ বিরচিত গানে 'কী' বিশেষণ অথচ বইয়ের অন্যত্র 'কী'-কে সর্বনাম করে দেখানো হয়েছে। এই বিভ্রান্তির ফলে অর্থাৎ বিশেষণকে সর্বনাম হিসেবে প্রয়োগ করার ফলে কার কি লাভ হলো–'রবীন্দ্রনাথের নাকি বাংলাদেশের শিশুপাঠকদের'–জবাবটি অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।" (মুসা ২০০৭: ৯২; ড্যাসচিহ্ন আমরা যোগাইয়াছি)
মনসুর মুসা বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক। তাঁহার কথা মোটেও ফেলনা নহে। তিনি দেখাইয়াছেন, বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নীতিমালায় একদিকে কথা দেওয়া হইয়াছে, তাঁহারা চলন্তিকা অভিধান অনুসরণ করিবেন, অথচ পাঠ্যপুস্তকে সে কথা রাখা হয় নাই। বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকে কি বিশেষণ কি সর্বনাম সর্বক্ষেত্রেই 'কি' শব্দের বানান লেখা হইয়াছে 'কী'। ইহাতেই প্রমাণ বোর্ডের বইয়ে 'চলন্তিকা' অনুসরণ করা হয় নাই।
একটা কথা মনসুর মুসা উল্লেখ করেন নাই। কারণটা বোধ হয় এই যে তিনি ধরিয়া লইয়াছিলেন ব্যাপার কি সকলেই জানেন। ব্যাপার এই যে সকলেই জানেন, চলন্তিকা অভিধানের বানানরীতি–মোটের উপর–১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বানানরীতির অনুসারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হইয়াছে তাহার বানানরীতিও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ চলন্তিকা অভিধানসম্মত বানানরীতি মানিয়া লেখা হয় নাই–একথারও উল্লেখ করেন নাই মনসুর মুসা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত 'আমার সোনার বাংলা' গানের প্রাসঙ্গিক অংশে 'কি' শব্দ সর্বত্রই ব্যবহৃত হইয়াছে বিশেষণ পরিচয়ে–সর্বনাম পরিচয়ে নহে। অথচ ইহার বানান দাঁড়াইয়াছে নির্বিশেষ–'কী' বিকারের চেহারায়। মনসুর মুসার নালিশ ইহাই। এই নালিশ বিশেষমাত্র।
আমাদের নিবেদন আরও সামান্য। অতি সামান্য। আমরা বলিব বাংলা ভাষায় 'কি' শব্দ একটিই। সর্বনাম পরিচয়ে তো নয়ই, বিশেষণ পরিচয়েও তাহার বানান 'কী' হওয়ার কোন আবশ্যক নাই। বিশেষণ, বিশেষণের বিশেষণ, ক্রিয়া-বিশেষণ, সর্বনাম এবং অব্যয় কোন পরিচয়েই 'কি' শব্দের বানান পরিবর্তনের প্রয়োজন নাই। না উচ্চারণের কারণে, না জোর দেওয়ার প্রয়োজনে, না অর্থভেদের চাপে, না জাতি পরিচয়ের তাগিদেÑকোন কারণেই বানানটি পরিবর্তনের প্রয়োজন নাই। শুদ্ধ যে প্রয়োজন নাই তাহাই নহে, এই অপ্রয়োজনীয় পরিবর্তন করিলে ভাষার বিরুদ্ধে অপরাধ করা হয়। রাজায় করিলেও হয়। আর অরাজকতার অপরাধ–সকলেই জানেন–চুরি-বাটপারির মতন সাধারণ অপরাধমাত্র নহে।
এই দাবির পিছনে আমাদের যুক্তি দুইটি। এক নম্বরে ভাষার বিধি বা স্বভাব। দুই নম্বরে ভাষার রীতি বা ইতিহাস। আজিকার প্রবন্ধে আমরা ভাষার রীতি বা ইতিহাস ধরিয়া কয়টি কথা হাজির করিতেছি। ভাষার বিধি (অর্থাৎ রূপক ও লক্ষণা) লইয়া স্বতন্ত্র প্রবন্ধ লিখিতে হইবে। এই জায়গায় শুদ্ধ বলিয়া রাখি–ভাষার রাজ্যে একটাই বিধান: উচু যদি হইতে চাহ নিচ হও আগে। এই রাজ্য বিরাজ করে কিন্তু এই রাজ্যে কোন রাজা নাই। এই রাজ্য বড় আজব রাজ্য।
এখানে আরো একটি কথা বলিয়া রাখি। বাংলা ভাষায় 'কি' পদটির স্থান আর দশ শব্দের চেয়ে খানিক উপরে বলিয়াই মনে হয়। কারণ আমাদের ভাষায় এই শব্দের ব্যবহার অনেক বেশি পৌনপুনিক। অধ্যাপক ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক ও তাঁহার সহযোগীদের গবেষণায় দেখা গিয়াছে পশ্চিমবঙ্গের কিশোর সাহিত্য ও পত্রপত্রিকায় পৌনপুনিক ব্যবহারের দিক হইতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত টাইপ শব্দ 'ও'। তাহার পরেই 'কি' এর স্থান। একটু বিস্তারিত বলিতেছি।
এই গবেষণায় যে নমুনা সংগ্রহ করা হইয়াছিল তাহাতে বাছাইকৃত 'টোকেন' শব্দ ছিল শেষ পর্যন্ত ১০০,৮২৮। আর টোকেন পাওয়া গিয়াছিল ১৮,৪৮৫। হিশাব করিয়া এই 'টাইপ' শব্দভাণ্ডারে মাত্র একবার ব্যবহৃত শব্দের হার পাওয়া গিয়াছে ৫৬ আর ২ হইতে ৯ বার ব্যবহৃত শব্দের হার শতকরা ৩৫। সুতরাং ১ হইতে ৯ বার ব্যবহৃত টাইপ শব্দের মোট শতকরা হার দাঁড়াইয়াছে ৯১। বাকি শতকরা ৯ ভাগ শব্দ ১০ বার বা তাহার বেশি গায়ে খাটিয়াছে।
গবেষকদের ভাষ্য অনুসারে বলিতে এই তালিকায় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত হইবার মর্যাদাপূর্ণ স্থান দখল করিয়াছে টাইপ শব্দ 'ও'। ইহা কিশোর সাহিত্যে ৪৮৯ ও সংবাদপত্রে ৭৫৫ অর্থাৎ সর্বমোট ১২৪৪ বার ব্যবহৃত। একই খাপে ফেলিয়া দেখিতেছি 'কি' টাইপ শব্দের ব্যবহার হইয়াছে কিশোর সাহিত্যে ১৬৭ ও সংবাদপত্রে ১৩৪ অর্থাৎ সাকুল্যে ৩০১ বার। (ভক্তিপ্রসাদ গয়রহ ১৯৯৮: ২, ১১-১২, ৫৫, ৭০)
আরও একটা হিশাব আছে যাহা ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক প্রমুখের গবেষণা হইতে নিকাশ করিয়া বলা যায়। 'কি' শব্দের সহিত জড়িত সকল শব্দের তালাশ করিলে দেখা যাইবে 'কি' শব্দের পৌনপুনিকতা 'ও' শব্দের কাছাকাছি যাইবে। যেমন: 'কিছু'। 'কিছু' শব্দটি–এই গবেষণার হিশাবে–সংবাদপত্রে ১৫২ বার আর কিশোর সাহিত্যে ৯৭ বার ব্যবহৃত হইয়াছে। 'কিন্তু' শব্দটি একই ক্রমে ১৯৩ ও ১৯৭ বার করিয়া। 'কি' হইতে নিষ্পন্ন শব্দের তালিকাও নিতান্ত ছোট নহে। তাহার মধ্যে 'কেন', 'কখন', 'কত', 'কোথায়, 'কই', 'কেউ', 'কেমন', 'কেবল', 'কোন', 'কে', 'কিনা', 'কিংবা', 'কিভাবে', 'কিরূপে', 'কিসের', 'কাহাকে', 'নাকি', এই ক্রমে অনেক অনেক। লিখিলে পুঁথি বাড়িয়া যাইবে।
১
বাংলা ১৩৩৩–অর্থাৎ ইংরেজি ১৯২৬–সাল নাগাদ লেখা এক নিবন্ধে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করিয়াছিলেন, 'বাঙলা ভাষার রাজ্যে এখন বহু বিষয়ে অরাজকতা চ'ল্ছে। এখানে শৃঙ্খলা আনা চাই। কিন্তু এ বড়ো কঠিন কাজ। প্রথমেই তো দেখা যায়, বাঙলার বানান-সম্বন্ধে কোনও নিয়ম নেই।' (সুনীতিকুমার ১৯৯০: ৪৪)
সুনীতিকুমারের মতে বাংলায় সরাসরি আমদানি করা অবিকল সংস্কৃত শব্দের বানান লইয়া কোনও গোল নাই। সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় সংস্কৃত বানানই বজায় রাখিবে। সংস্কৃত হইতে ধার করা বাংলা শব্দ কখনও কখনও ভিন্ন উচ্চারণ গ্রহণ করিয়া থাকে। সেইগুলি লইয়াও বিশেষ গোল বাধিবে না। এইগুলির বানান উচ্চারণ অনুসারেই করা হয়। তাঁহার দেওয়া উদাহরণের মধ্যে কেষ্ট, নেমন্তন্ন, চন্নামের্ত, চক্কত্তী, ভট্চাজ, শীগ্গির, মোচ্ছব ইত্যাদি। তবে প্রাকৃতের মধ্য দিয়া আমদানি করা–মানে খাঁটি বাংলা–শব্দের বানান লইয়া যত গোল।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আরো মত আছে। এই মত অনুসারে, "সংস্কৃত ব্যাকরণিয়াদের হাতে প'ড়ে বাঙলার প্রাকৃতজ শব্দগুলি তাদের বানানের ইতিহাসকে ভুলে গিয়েছে।" তিনি লিখিয়াছেন, "বাঙলা ভাষার শব্দ-সাধন বললে বাঙালী ব্যাকরণিয়া বুঝ্তেন ভাষাগত সংস্কৃত শব্দের সাধন,–খাঁটি বাঙলা তদ্ভব শব্দ নিয়ে তারা মাথা ঘামাতে চাইতেন না–বাঙলার ঠিক রূপটি কী সে বিষয়ে সাধারণতঃ কোনও ধারণা তাঁদের না থাকায়।" (সুনীতিকুমার ১৯৯০: ৪৫; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
ইহার কুফল আরও ফলিয়াছে। সুনীতিকুমার দেখিতে পাইয়াছেন, 'বিদেশী শব্দের সম্বন্ধেও আমাদের কোনও শৃঙ্খলা নেই।' ইহার উদাহরণও কয় প্রস্ত যোগাড় করিয়াছেন তিনি, "যাঁরা 'কাজ' শব্দকে অন্তস্থ 'য' দিয়া বা 'সোনা' শব্দকে মূর্ধণ্য 'ণ' না দিয়া লিখ্লে ভাষার বিরুদ্ধে অপরাধ করা হ'লো মনে করেন, তাঁরা অম্লান বদনে–আর অকম্পিত করে–দন্ত্য 'স' দিয়ে 'সাধ সরম সহর' লেখেন, তালব্য 'শ' দিয়ে 'শোওয়া' লেখেন। আর মূর্ধণ্য 'ষ' দিয়ে 'জিনিষ' লেখেন।" (সুনীতিকুমার ১৯৯০: ৪৫)
এই অরাজকতার উদাহরণ খোদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখায়ও ভুরি ভুরি পাওয়া যাইবে। তাঁহার লেখা হইতে আমরা যে কয় ছত্র উপরে উদ্ধার করিয়াছি তাহাতেও দেখা যায় তিনি বাংলা 'কি' শব্দটির বানান 'কী' লিখিয়াছেন। হয়ত তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদেশেই এই বানান কবুল করিয়াছিলেন। 'বাঙলার ঠিক রূপটি কী'–এই বাক্যে 'কী' পদটি সর্বনাম পরিচয়েই বসিয়াছে। একই প্রবন্ধে সুনীতিকুমার 'কী' শব্দটি বিশেষণ পরিচয়েও লিখিয়াছেন। যেমন:
আর আমাদের মধ্যে যারা ভাষাতত্ত্বকে উপজীব্য বিদ্যা ক'রে নিয়েছি, যারা এর অন্ধি-সন্ধি গলি-ঘুঁজিতে ঘোরা-ঘুরি কর্'ছি আর তার মধ্যেকার ধস্না আর ঢিবি খুঁড়ে দেখ্বার চেষ্টা কর্'ছি, আমাদের এই সুপ্রাচীন ভাষানগরী এই সুবিরাট্ সাহিত্যপুরী আগে কী অবস্থায় ছিল, আর সেই সঙ্গে সঙ্গে এই নগরীর কাব্য-দর্শন-ইতিহাস-রূপকর্ম প্রভৃতির নোতুন নোতুন সব বড়ো সড়কের সঙ্গে পরিচয় রাখ্বারও চেষ্টা কর্'ছি। (সুনীতিকুমার ১৯৯০: ৪৭; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
আবার দেখি একই প্রবন্ধের আরেক জায়গায় তিনি অব্যয় 'কি' শব্দটি লিখিতেছেন অপরিবর্তিত 'কি' বানানেই: "কি কোল, কি দ্রাবিড়, কি আর্য্য,–আধুনিক কালের সমস্ত ভারতীয় ভাষার একটি প্রধান বিশেষত্ব হ'চ্ছে তাদের ধন্যাত্মক শব্দ।" (সুনীতিকুমার ১৯৯০: ৪৬; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
ইহার পিছনে কি কোন যুক্তি আছে? আছে বৈ কি! আর এই যুক্তিটিও যোগাইয়াছিলেন আমাদের ভাষার প্রধান লেখক–আমাদের ভাবের ঘরের রাজা–খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি যুক্তি দিয়াছিলেন প্রশ্নসূচক অব্যয় 'কি' এবং প্রশ্নবাচক সর্বনাম 'কি'–ভিন্ন পদাধিকারী এই উভয়ের এক বানান থাকা উচিত হইবে না। রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন, 'আমার মতে বানানের ভেদ থাকা আবশ্যক। একটাতে হ্রস্ব ই ও অন্যটাতে দীর্ঘ ঈ দিলে উভয়ের ভিন্ন জাতি এবং ভিন্ন অর্থ বোঝবার সুবিধা হয়।' রবীন্দ্রনাথ একটা উদাহরণ দিয়া ঘটনাটা বুঝাইয়াছেন: "'তুমি কি রাঁধছ' [আর] 'তুমি কী রাঁধছ'–বলা বাহুল্য এ দুটো বাক্যের ব্যঞ্জনা স্বতন্ত্র। তুমি রাঁধছ কিনা, এবং তুমি কোন্ জিনিস রাঁধছ, এ দুটো প্রশ্ন একই নয়, অথচ এক বানানে দুই প্রয়োজন সারতে গেলে বানানের খরচ বাঁচিয়ে প্রয়োজনের বিঘ্ন ঘটানো হবে।" (রবীন্দ্রনাথ ১৩৯১: ২৯০; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
আমরা সবিনয়ে নিবেদন করিব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই যুক্তিটি শুনিয়া মনে হয় বাংলা ভাষার ঠিক রূপটি কি সে বিষয়ে তাঁহার ধারণাও পরিচ্ছন্ন ছিল না। ইহার ফলাফল মোটেও ভাল হয় নাই। বাংলা ভাষার শেষ পর্যন্ত বিরাজমান অরাজকতা কমাইতে ইহা আদপেই সাহায্য করে নাই।
২
বাংলা বানান ঠিক করিবার জন্য ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে সংস্কার সমিতি বানাইয়াছিলেন তাহার সভাপতি ছিলেন রাজশেখর বসু। সকলেই জানেন, ইনি অন্যান্য কীর্তির মধ্যে 'চলন্তিকা' নামে পরিচিত 'আধুনিক বঙ্গভাষার অভিধান'টিও সম্পাদন করিয়াছিলেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত বাংলা বানানের নিয়ম–তৃতীয় সংস্করণ অর্থাৎ শেষবারের ভাষ্য–এই অভিধানের পরিশিষ্ট থানায় মুদ্রিত হইয়াছে। দেখা যায় রাজশেখর বসু কিম্বা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান সংস্কার সমিতি কেহই শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের যুক্তিটি গ্রহণ করিতে রাজি হয়েন নাই। তাঁহারা 'কি' বানান 'কী' করিতে রাজি হয়েন নাই। আবার অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের খাস বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীও–কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবিত (বা সংস্কৃত) বানান সর্বাংশে গ্রহণ করে নাই। ফলে বাংলা বানানের অরাজকতা কমিয়া একটা দ্বিরাজক অবস্থায় পৌঁছাইয়াছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশে–এবং ভারতেও–দেখা যাইতেছে রবীন্দ্রনাথের যুক্তিটিই গ্রহণ করা হইয়াছে। ফলে বাংলা ভাষার রাজ্যে বিরাজমান দ্বিরাজকতা–কমিবা দূরের কথা–বরং বাড়িয়াই গিয়াছে।
রাজশেখর বসু সম্পাদিত চলন্তিকা অভিধানে দেখানো হইয়াছে 'কি' শব্দটি আসিয়াছে সংস্কৃত 'কিম্' শব্দ হইতে। তো ইহাকে খাঁটি বাংলা শব্দ বলিয়া গণ্য করিতে দোষ নাই। জাতিতে অব্যয় এই শব্দটি দিয়া প্রধানত প্রশ্নই করা হইয়া থাকে। উদাহরণ: তুমি কি খাবে? ইহাতে ক্রিয়ার অনিশ্চয়তা বুঝাইতেছে অর্থাৎ প্রার্থনা করা হইতেছে নিশ্চয়তা। জাতিতে অব্যয় এই 'কি' পদটি দিয়া আরেক ধরনের প্রশ্নও করা যায়। এই প্রশ্নের মধ্যে বিচার কি নির্বাচন বা সমাবর্তন প্রার্থনা করা হইয়া থাকে। যথা: কি ধনী কি নির্ধন সবাই গিয়াছে। এই গোড়ার উদাহরণগুলি আমি চলন্তিকা হইতেই লইতেছি।
চলন্তিকার বিধান অনুসারে শুদ্ধ 'কি' শব্দের অর্থই নহে, জাতি-পরিচয়ও–মানে শুদ্ধ ভাবই নহে, ভাষাও–বদলাইতে পারে। বিশেষণ বা বিশেষণের বিশেষণ, এমন কি ক্রিয়াবিশেষণ পরিচয়েও 'কি' শব্দের প্রয়োগ হইতে পারে। যথা: কি জিনিস, কি করিয়া, কিজন্য, কিরূপ, কিহেতু। কোনো, কেমন, কত কি বুদ্ধি! কি ভয়ানক!
প্রয়োজন হইলে শব্দটি 'সর্বনাম' জাতিতেও উঠিতে পারে। সর্বনামস্বরূপ 'কি' পদে ভাব ও অভাব দুই পদার্থই বুঝায়। যেমন চলন্তিকার দৃষ্টান্ত অনুসারে: কি চাই বল। বল কি। তাতে আর সন্দেহ কি। কি জানি। বেল পাকলে কাকের কি। চলন্তিকাকারের মতে বাংলা ভাষায় 'কি' পদটি কি অব্যয়, কি বিশেষণ, কি বিশেষণের বিশেষণ, কি ক্রিয়াবিশেষণ, কি সর্বনাম–সকল জাতি-পরিচয়েই চলিতে পারে। আর অর্থের ময়দানে নিশ্চয়তা, নির্বাচন, সমাবর্তন, ভাব ও অভাব সকলই গ্রাহ্য হইতে পারে।
এদিকে চলন্তিকাকার একটি মাত্র ক্ষেত্রে 'কি' বানানের ব্যতিক্রম স্বীকার করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন, বেশি জোর দিতে 'কি' বানান 'কী' হইতে পারে। যেমন: কী সুন্দর! তোমার কী হয়েছে? আমরা পুনরায় সবিনয়ে নিবেদন করিতেছি–চলন্তিকাকারের যুক্তিটিও রীতিসম্মত নহে। কেননা জোর দিবার জন্য বানানের পরিবর্তন করিতে হয় না। বাংলা ভাষার স্বভাব বলিয়া কিছু যদি থাকে তো এই পরিবর্তনের প্রয়োজনই হয় না। অকারণে বানানের খরচ করিলে আমাদের কারণযোগে বলিতে হইবে অর্থেরও অপচয় হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি জানি কি নিগূঢ় কারণে এই খরচটা করিতে চাহিয়াছিলেন। কারণটা সম্ভবত এই। যাহাকে বলে 'রূপকের বিধি'–তাহা তিনি ধরিতেই পারেন নাই। 'রূপকের বিধি' মানে যে অদৃশ্য শক্তির বলে ভাষার একটি শব্দ একাধিক পদ-পরিচয়ে বা একাধিক অর্থে কাজ করিতে পারে। এই বিধিরও আবার নানা রকমফের আছে। তাহা আমরা অন্যত্র দেখাইতেছি।
৩
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'কি' শব্দের বানান পরিবর্তনের পক্ষে আরও একটি যুক্তি দিয়াছিলেন। এই যুক্তির সারমর্মও আবার সেই একই পদার্থ–ভিন্ন জাতি ও ভিন্ন অর্থ বুঝিবার সুবিধা–বৈ নহে। এখানেও সন্দেহ হইতেছে 'রূপকের বিধি'–অর্থাৎ কোন একটা শব্দ রূপকার্থে ব্যবহৃত হইলে তাহার অর্থ যে বদলাইয়া যায় তাহা–তিনি বুঝিতেই পারেন নাই। ১৯৩১ সালের ৫ নবেম্বর তারিখে স্বাক্ষরিত এক পত্রযোগে জীবনময় রায় নামক জনৈক পত্র-ব্যবহারকর্তাকে তিনি জানাইয়াছিলেন, "যদি দুই 'কি'-এর জন্য দুই ইকারের বরাদ্ধ করতে নিতান্তই নারাজ থাক তা হলে হাইফেন ছাড়া উপায় নেই। দৃষ্টান্ত: 'তুমি কি রাঁধছ' এবং 'তুমি কি রাঁধছ'।" (রবীন্দ্রনাথ ১৩৯১: ২৯০)
বাংলা শব্দতত্ত্ব বইয়ের এই জায়গায় (অর্থাৎ জীবনময় রায়কে লেখা পত্রের নিচে) তারকাখচিত একটি ছোট্ট পাদটীকাযোগে রবীন্দ্রনাথ জানাইয়াছেন, 'পরে দেখা গেছে, কি এবং কী-এর বিশেষ প্রয়োগ পুরোনো বাংলা পুঁথিতেও প্রচলিত আছে।' (রবীন্দ্রনাথ ১৩৯১: ২৯০)
সত্যের খাতিরে বলিতে হইবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই দাবিও সঠিক পদবাচ্য নহে। এই দাবির টিঁকিবারও জো নাই। তদুপরি বিশেষ দ্রষ্টব্য, একদা এক বিতণ্ডায় এই দাবির ভিত্তি নাকচ করিয়া দিয়াছিলেন রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক পণ্ডিত বিজয়চন্দ্র মজুমদার। ইনি বাংলা ভাষার বিখ্যাত ইতিহাসকার। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় আসরে নামিবার আগে বিজয়চন্দ্র মজুমদারই ছিলেন বাংলা মুলুকের সম্ভবত প্রসিদ্ধতম ভাষাতত্ত্ববিদ। ১৯২০ সালে ইংরেজিতে লেখা ইঁহার বহি বাংলা ভাষার ইতিহাস কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ ইঁহার মত ইচ্ছা না হয় অগ্রাহ্য করিতে পারেন, কিন্তু উপেক্ষা করিতে পারেন না। অথচ–অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়–তিনি তাহাই করিয়াছিলেন।
আজ হইতে কিছু বেশি একশত বৎসর আগে এই কথাটি লইয়া কলিকাতার পত্রপত্রিকায় বেশ একপ্রস্ত বাদানুবাদ হইয়া গিয়াছিল। উপেন্দ্রনাথ দত্ত নামক উত্তরভারত প্রবাসী একজন বাঙ্গালি লেখক একটি লেখায় দাবি করিয়াছিলেন 'কি' শব্দটি 'কী' বানানে আগেকার লেখকেরাও ব্যবহার করিয়াছিলেন। উপেন্দ্রনাথ ইহার দুইটি দৃষ্টান্তও পেশ করিয়াছিলেন। তিনি লিখিয়াছিলেন:
'কী' এই শব্দটি শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের নিজের গড়া নয়, তিনি ঐটিকে ব্যবহার করিয়াছেন। পূর্ব্ব হইতেই ইহার অস্তিত্ব দেখিতে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ দুই একটি উদ্ধৃত করিলাম,–
'আজে মোঞে দেখলি বারা।
লুবুধ্ মানস চালক মঅন কর কী পরকারা ॥'–বিদ্যাপতি
'বল কী হইবে কলিকা দলিলে?'–ভারতচন্দ্র। (উপেন্দ্রনাথ ১৩১৮: ৮৩২; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
ইহার জওয়াবে পণ্ডিত বিজয়চন্দ্র মজুমদার লিখিয়াছিলেন, অনেক পূর্বকাল হইতে বাংলা ভাষায় 'কী' ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে–এই কথাটি মোটেও সত্য নহে। আমরা এখানে বিজয়চন্দ্র মজুমদারের কথাটা কিছুদূর তুলিয়া রাখিব। উদ্ধৃতি একটু লম্বা হইলেও আপত্তি চলিবে না। কারণ বিজয়চন্দ্রের লেখাটি বর্তমানে হাতের কাছে সহজে পাওয়া যায় না। আমরা তাঁহার এই বক্তব্যের পোষকতা ষোল আনাই করি। সরাসরি মূল পত্রিকা–সুরেশচন্দ্র সম্পাদিত সাহিত্য: মাসিকপত্র ও সমালোচন–হইতেই ইহা তুলিয়া লইলাম।
দত্ত মহাশয়ের আর একটি কথা এই যে, অনেক পূর্ব্ব কাল হইতেই আমাদের ভাষায় 'কী' ব্যবহৃত হইয়া আসিয়াছে। তিনি যে দৃষ্টান্ত দিয়াছেন, তাহা বিচার করিয়া দেখিতেছি। প্রথমতঃ, ভারতচন্দ্রের ব্যবহৃত বাক্যটির সমালোচনা করিতেছি। "বল কি হইবে কলিকা দলিলে" এই চরণটি তোটক ছন্দে রচিত বলিয়া ছন্দের ঝোঁকে 'কি'-কে দীর্ঘ করিয়া পড়িতে হয়। এস্থানে 'কি' পদে accent যোগ নাই। accent ভাবের ফলে যুক্ত হয়। যদি তোটক ছন্দ বজায় রাখিয়া, এবং ভাবটি অক্ষুণ্ন রাখিয়া, ঐ চরণটি এইরূপে পরিবর্ত্তিত করা যাইত, যথা—"বল বা কি হবে, কলিকা দলিলে," তাহা হইলে আর 'কি'-কে দীর্ঘ করিয়া পড়িতে হইত না। 'কি' পদের যে দীর্ঘ উচ্চারণ ছিল বলিয়া ভারতচন্দ্র ঐরূপ প্রয়োগ করিয়াছেন, তাহা নহে। কবি যে কেবলমাত্র ছন্দের খাতিরে হ্রস্বকেই দীর্ঘ করিয়া পড়িতে দিয়াছেন, তাহা দত্ত মহাশয়ের উদাহৃত রচনার অন্যান্য অংশ হইতেই দেখাইতেছি। 'সুন্দরীরে' পদে 'ঈ' রহিয়াছে, অথচ ছন্দের খাতিরে 'সুন্দরিরে' পড়িতে হয়; যথা,—"শুনি সুন্দর সুন্দরীরে কহিছে।" ভণিতার পূর্ব্ববর্ত্তী চরণেও ঐরূপ 'পশিল' শব্দের ল-কারে দীর্ঘের ঝোঁক দিয়া পড়িতে হয়।
হিন্দী রচনাতে যে ছন্দের জন্য অনেক স্থলে হ্রস্বকে দীর্ঘ করিয়া উচ্চারণ করিতে হয়, তাহার অনেক দৃষ্টান্ত তুলিতে পারা যায়। যে সকল শব্দ স্বাভাবিক ভাবে ভাষায় দীর্ঘ উচ্চারিত হয় না, যেখানে accent যোগে দীর্ঘ করিবার প্রয়োজন নাই, এবং যে সকল শব্দ কবিতাতেও অনেক স্থলে হ্রস্ব উচ্চারণে লিখিত হইয়াছে, তুলসীদাস প্রভৃতির রচনায় ছন্দের খাতিরে তাহা কোথাও কোথাও দীর্ঘ উচ্চারণ করিয়া পড়িতে হয়। দত্ত মহাশয়ের "দূর প্রবাস" যদি যুক্ত-প্রদেশের দিকে হয়, তবে তিনি আমার এই কয়েকটি কথা স্বীকার করিবেন। বিদ্যাপতি হইতে যে 'কী' উদাহৃত হইয়াছে, তাহাও ছন্দের ঝোঁকের দীর্ঘ। উহাতে ভাবজনিত accent নাই।
'কি কর' কথাটিতে যদি 'কি'-তে accent দিতে হয়, তবে 'কি'-কে দীর্ঘ করিতে হয়, এবং 'কর' শব্দটিকেও 'ক-অ-র' করিতে হয়। 'কর কি' কথাতে যদি accent দিতে হয়, তবে কেবল 'কর'-কেই 'ক-অ-র'-রূপে নির্দ্দেশ করিতে হয়। অন্য কোনও স্থলে যখন accent জ্ঞাপক বর্ণ সমাবেশ না করিলে চলে, তখন কেবল 'কি'র বেলায় কী করিলে লাভ কি? সাধারণ নিয়মের দ্বারা যখন অন্য কথাগুলি শাসিত হইতে পারে, তখন একা 'কি' অশাসিত হইয়া নিয়মের বাহিরে পড়িবে কেন? (বিজয়চন্দ্র ১৩১৮ চৈত্র: ৯৩০-৩৩)
এই স্থলে রবীন্দ্রনাথের সম্মানে এইটুকু অবশ্যই বলিতে হইবে যে বাংলায় 'কী' লেখার কারণ হিশাবে উচ্চারণের দোহাই কোথায়ও দেন নাই তিনি। কারণ তিনি বুঝদার আদম। বিজয়চন্দ্রের মতন তিনিও জানেন, "আমাদের ভাষায় আ, ঈ, ঊ প্রভৃতির দীর্ঘ উচ্চারণ নাই।" (বিজয়চন্দ্র ১৩১৮ পৌষ: ৬৬৯)
৪
এক্ষণে আমরাও একটা দুইটা নতুন কথা যোগ করিব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগে–ধরা যাক উনিশ শতকে–যাঁহারা বাংলা ভাষায় প্রবন্ধাদি লিখিয়াছেন তাঁহারা কেহই 'কি' পদটি অন্য বানানে লেখেন নাই। রাজা রামমোহন রায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিংবা মীর মশাররফ হোসেন–কেহই না। ইঁহাদের রচনাবলী তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিলেও একটা 'কী' পাওয়া যাইবে না। আমি নিজে অনেক লেখকের রচনাবলীর খানা সন্ধান করিয়া হাতড়াইয়া বিচড়াইয়া দেখিয়াছি। পাই নাই। বিশেষ করিয়া মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনাবলীতে হাজার হাজার 'কি', একটাও 'কী' নাই। কোথায়ও বা পাওয়া যায় যদি, জানিতে হইবে তাহা ছাপাখানার ভূত বৈ নহে। অথচ ইহাতে 'কি' পদের জাতিভেদ কিংবা অর্থবিচারে কোন বিভ্রাট হয় নাই।
বর্তমান প্রবন্ধে আমি শুদ্ধ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী হইতে গোটাকয়েক বাক্য চয়ন করিয়া দেখাইব–অর্থের হাজার বৈচিত্র্য আর জাতিভেদ গণ্ডায় গণ্ডায়। তবুও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায়ও–ভ্রমে কি সংকল্পে–'কি' পদের বানান বদল করেন নাই। আর আমি–নগণ্য পাঠিকামাত্র–সাক্ষ্য দিতেছি, তাহাতে আমার অর্থবোধে কোন অন্যায় বা অসুবিধা হয় নাই। আত্মজীবনী সম্পাদক সতীশচন্দ্র চক্রবর্ত্তী মহাশয়েরও বা হইয়াছে এমন কোন প্রমাণ নাই।
আত্মজীবনীর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যাহা লিখিয়াছেন তাহাতে দেখি 'কি' শব্দটি সর্বনাম জাতির মুখোজ্জ্বল করিয়া সস্বরূপে দেদীপ্যমান। আর প্রদীপের একটু নিচে দেখিতেছি–অন্যরূপের সহিত মিলিয়ামিশিয়া তাহা ক্রিয়া-বিশেষণ–'কিরূপে'–হইয়াছে। আহা, কি অপরূপ এই গদ্য!
এত দিন আমি বিলাসের আমোদে ডুবিয়া ছিলাম। তত্ত্বজ্ঞানের কিছুমাত্র আলোচনা করি নাই। ধর্ম্ম কি, ঈশ্বর কি, কিছুই জানি না, কিছুই শিখি নাই। শ্মশানের সেই উদাস আনন্দ, তৎকালের সেই স্বাভাবিক সহজ আনন্দ, মনে আর ধরে না। ভাষা সর্ব্বথা দুর্ব্বল, আমি সেই আনন্দ কিরূপে লোককে বুঝাইব? তাহা স্বাভাবিক আনন্দ, তর্ক করিয়া, যুক্তি করিয়া, সেই আনন্দ কেহ পাইতে পারে না। সেই আনন্দ ঢালিবার জন্য ঈশ্বর অবসর খোঁজেন। সময় বুঝিয়াই তিনি আমাকে এ আনন্দ দিয়াছিলেন। কে বলে ঈশ্বর নাই? এই তো তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ। আমি তো প্রস্তুত ছিলাম না, তবে কোথা হইতে এ আনন্দ পাইলাম? (দেবেন্দ্রনাথ ১৯৬২: ৫; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
এক্ষণে পঞ্চম অধ্যায় হইতে আরেকটি অংশ তুলিতেছি। দেবেন্দ্রনাথ আবারও লিখিতেছেন যাহাতে 'কি' পদ পর্যায়ক্রমে সর্বনাম, নিশ্চয়তাপ্রার্থী অব্যয়, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও বিশেষণের বিশেষণ।
যখন বিদ্যাবাগীসের মুখ হইতে 'ঈশা বাস্যমিদং সর্ব্বং' ইহার অর্থ বুঝিলাম, তখন স্বর্গ হইতে অমৃত আসিয়া আমাকে অভিষিক্ত করিল। আমি মানুষের নিকট হইতে সায় পাইতে ব্যস্ত ছিলাম, এখন স্বর্গ হইতে দৈববাণী আসিয়া আমার মনের মধ্যে সায় দিল, আমার আকাক্সক্ষা চরিতার্থ হইল। আমি ঈশ্বরকে সর্ব্বত্র দেখিতে চাই; উপনিষদে কি পাইলাম? পাইলাম যে, 'ঈশ্বর দ্বারা সমুদায় জগৎকে আচ্ছাদন কর।' ঈশ্বর দ্বারা সমুদায় জগৎকে আচ্ছাদন করিতে পারিলে আর অপবিত্রতা কোথায়? তাহা হইলে সকলই পবিত্র হয়, জগৎ মধুময় হয়। আমি যাহা চাই, তাহাই পাইলাম।
এমন আমার মনের কথা আর কোথাও হইতে শুনিতে পাই নাই। মানুষে কি এমন সায় দিতে পারে? সেই ঈশ্বরেরই করুণা আমার হৃদয়ে অবতীর্ণ হইল, তাই 'ঈশা বাস্যমিদং সর্ব্বং' এই গূঢ় বাক্যের অর্থ বুঝিলাম। আহা! কি কথাই শুনিলাম, 'তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ', তিনি যাহা দান করিয়াছেন তাহাই উপভোগ কর। তিনি কি দান করিয়াছেন? তিনি আপনাকেই দান করিয়াছেন। সেই পরম ধনকে উপভোগ কর। আর সকল ত্যাগ করিয়া সেই পরম ধনকে উপভোগ কর; আর সকল ত্যাগ করিয়া কেবল তাঁহাকে লইয়াই থাক। কেবল তাঁহাকে লইয়া থাকা মানুষের ভাগ্যে কি মহৎ কল্যাণ! আমি চিরদিন যাহা চাহিতেছি, ইহা তাহাই বলে। (দেবেন্দ্রনাথ ১৯৬২: ২২; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
একই অধ্যায় হইতে আর একটুখানি তুলিব। দেবেন্দ্রনাথ এখানেও জানাইতেছেন 'কি' পদের ব্যবহার কি বিচিত্র! এখানে 'বিশেষণের বিশেষণ' হিশাবে তাহার প্রয়োগ।
আমার বিষাদের যে তীব্রতা, তাহা এই জন্য ছিল যে, পার্থিব ও স্বর্গীয় সকল প্রকার সুখ হইতেই আমি বঞ্চিত হইয়াছিলাম। সংসারেও আমার কোন প্রকার সুখ ছিল না, এবং ঈশ্বরের আনন্দও ভোগ করিতে পারিতেছিলাম না। কিন্তু যখন এই দৈববাণী আমাকে বলিল যে, সকল প্রকার সাংসারিক সুখ ভোগের কামনা পরিত্যাগ করিয়া কেবল ঈশ্বরকেই ভোগ কর, তখন, আমি যাহা চাইতেছিলাম তাহা পাইয়া আনন্দে একেবারে নিমগ্ন হইলাম। এ আমার নিজের দুর্ব্বল বুদ্ধির কথা নহে, এ সেই ঈশ্বরের উপদেশ! সে ঋষি কি ধন্য, যাঁহার হৃদয়ে এই সত্য প্রথমে স্থান পাইয়াছিল! ঈশ্বরের উপরে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিল, আমি সাংসারিক সুখের পরিবর্ত্তে ব্রহ্মানন্দের আস্বাদ পাইলাম। আহা, সে দিন আমার পক্ষে কি শুভ দিন, কি পবিত্র আনন্দের দিন। (দেবেন্দ্রনাথ ১৯৬২: ২২-২৩; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
'কি' শব্দের আরেকটা প্রয়োগ এইখানে আছে। এই প্রয়োগ যুগপৎ জাতে সর্বনাম ও তালে বিশেষণ–যাহার বিশেষ্য ভয়ঙ্কর কিছু। পঞ্চবিংশ অধ্যায় হইতে ইহা তুলিতেছি।
আমি পরিশ্রান্ত ও অবসন্ন হইয়া একটা উচ্চপাথরের উপরে বসিলাম। আমি একেলা সেই জঙ্গলে বসিয়া ভিতরে পরিশ্রমের ঘর্ম্ম এবং বাহিরে বৃষ্টিতে ভিজিতেছি। ভয় হইতেছে যে, সেই জঙ্গল হইতে বাঘ ভাল্লুক বা আর কি আসে। এমন সময় দেখি যে, সেই মাহুতটা আসিয়া উপস্থিত। (দেবেন্দ্রনাথ ১৯৬২: ১৪৮; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
পরিশেষে সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ হইতে এক টুকরা তুলিয়া ধরিব। এই জায়গায় দেবেন্দ্রনাথ যাহা লিপিবদ্ধ করিতেছেন তাহাতে দেখি কিভাবে 'কি' শব্দের দ্বারা যুগপৎ বিশেষণ ও অব্যয়ের কাজ হইতে পারে।
এই পর্ব্বতবাসী ভূম্যধিকারীদিগের মধ্যে প্রধান রাজা, পরে রাণা, পরে ঠাকুর, সর্ব্বশেষে জমিদার। এখানকার জমিদারেরাই কৃষক। হিন্দুস্থানের জমিদারদিগেরও এই দশা। পর্ব্বতে রাজা ও রাণাদিগের ক্ষমতা অধিক: ইহারাই প্রজাদিগের শাসনকর্ত্তা। রাজা ও রাণাদিগের বিবাহকালে সখীগণ সহিত কন্যার সম্প্রদান হয়। রাণীর গর্ভের পুত্র রাজা অথবা রাণা হয়। সখীর গর্ভের পুত্র রাজপরিবারে থাকিয়া যাবজ্জীবন অন্ন পায়। সখীর গর্ভে জাত কন্যা রাজকন্যার সখীরূপে পরিচিতা থাকে, এবং সেই রাজকন্যারই স্বামীর হস্তে তাহাদিগের জীবন ও যৌবন সমর্পণ করিতে হয়। কি অনর্থ! কি অনর্থ! রাজার এবং রাণার রাণীও অনেক, সুতরাং সখীও বিস্তর। এক স্বামীর মৃত্যু হইলে ইহারা সকলে বন্দীর ন্যায় কারাগারে বদ্ধ থাকিয়া যাবজ্জীবন রোদন করিতে থাকে। ইহাদিগের পরিত্রাণের আর উপায় নাই। (দেবেন্দ্রনাথ ১৯৬২: ২২৭; মোটা হরফ আমরা যোগাইয়াছি)
৫
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চাহিয়াছেন–তাই বাংলা 'কি' শব্দের বানান কোন কোন থানায় 'কী' হইয়া গিয়াছে। ঠাকুরের ইচ্ছাই যুক্তি–ইহার পিছনে আর কোন যুক্তি নাই। অন্তত সেই যুক্তি আজ পর্যন্ত কেহ দেখাইতে পারেন নাই। ঠাকুরের প্রতিভার আলোতে আমরা অন্ধ হইয়া গিয়াছি–স্নায়ুজনিত বিকারে এমনটা হইতেই পারে। কিন্তু সেই অন্ধতা বা বৈকল্য চিরদিন স্থায়ী হইতে পারে না। সম্প্রতি এই বিকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হইয়াছে। শুদ্ধ এই দেশে নহে বিদেশেও কেহ কেহ এই প্রতিবাদ গ্রহণ করিয়াছেন। যেমন, সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণে হানে-রুত টমসন বলিয়াছেন, 'কি' শব্দটিকে প্রশ্নবাচক অব্যয় আর 'কী' বানানকে সর্বনাম আকারে সংরক্ষণ করার যে প্রয়াস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহা মোটের উপর ব্যর্থ হইয়াছে। (টমসন ২০১০: ২৭৪)
অথচ শুদ্ধ বাংলা ভাষার ইতিহাসে নহে, তাহার ভাষাতত্ত্ব বা ব্যাকরণের ইতিহাসেও রবীন্দ্রনাথের বসার জায়গা বেশ বড় পরিসর জুড়িয়া রহিয়াছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের যে প্রবন্ধ হইতে আমরা কয়েক পংক্তি চয়ন করিয়াছি সেই প্রবন্ধেই লেখা হইয়াছে: রবীন্দ্রনাথ 'বাঙলার সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক' মাত্র নহেন–তিনি 'আধুনিক জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক ও চিন্তা-নেতা'। এক কথায় বাংলা ভাষার রাজ্যে তিনি রাজা। বিশেষ বাংলা শব্দতত্ত্বে তাঁহার জায়গা সকলের উপরে একথা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় একদা মানে–সেই ১৯২৬–সালেই ঘোষণা করিয়াছিলেন। 'কথিত ভাষার পূর্ণ আলোচনা বিনা কোনও ভাষায় ব্যাকরণ বা ইতিহাস লেখা হ'তে পারে না'–সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় রবীন্দ্রনাথের দান এই প্রস্তাব। (সুনীতিকুমার ১৯৯০: ৪৭)
সুনীতিকুমারের এই লেখার বছর আটেক আগে প্রসিদ্ধ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার উপযুক্ত কদর করিয়াছিলেন। তিনি লিখিয়াছিলেন, "ইরানীরা বলে এক বুল্-বুলে বসন্ত সম্ভব হয় না, কিন্তু বাংলার শুভাদৃষ্টক্রমে এক বুল্বুলেই এখানে ঋতুরাজ মূর্তিমান হ'য়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের মুক্তবেণীর গঙ্গাতীরে, একজনমাত্র কবির প্রতিভাবলে, আজ ছন্দের তিনধারা বঙ্গের কাব্যসাহিত্যে যুক্তবেণীর সৃষ্টি করেছে।" তাই সত্যেন্দ্রনাথ গাহিয়াছিলেন, "আজ–
আকাশ জুড়ে ঢল নেমেছে, সূয্যি চলেছে,
চাঁচর চুলে জলের গুঁড়ি-মুক্তো ফলেছে।
চাউনিতে কার আওয়াজ দিয়ে বিজুলি চম্কায়,
হাওয়ায় উড়ে কদম ফুলের কেশর লাগে গায়।
আল্গোছে যা গায় লাগে তা' গুণছে বল কে
নৃত্য করে মত্ত ময়ূর বিদ্যুতালোকে।
সুপ্ত বীজের গোপন কথা অঙ্কুরে আজ ছায়,
ঝর্ণা-ঝামর-পদ্ধতিতে ময়ুর নেচে যায় ॥"
(সত্যেন্দ্রনাথ ১৩৭৪: ২২-২৩)
এই প্রবন্ধটি লিখিতে আমার মন বিশেষ ভারাক্রান্ত হইয়াছে। লোকে আমাকে ভুল বুঝিতে পারে। তাই আবার বলিব–আমার বিষয় ভাষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গমাত্র। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আরো সাত-আট বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করিয়া বিজয়চন্দ্র মজুমদার যাহা লিখিয়াছিলেন তাহা আওড়াইয়া আমি এই বেদনাদায়ক প্রবন্ধ শেষ করিব:
শ্রীযুত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় বঙ্গ সাহিত্যে যথেষ্ট যশস্বী হইয়াছেন। এই অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন নূতনত্বটুকু না চালাইলেও সে যশ অপ্রতিহত থাকিবে। আশা করি, তিনি মুরারির ন্যায় তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করিবেন না। যুক্তি থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা যাহা খুসী লিখিব এবং যাহা লিখিতে আরম্ভ করিয়াছি, তাহা এক জন নগণ্য লোকের কথায় পরিত্যাগ করিব না, আশা করি, এরূপ কথা কেহই বলিবেন না। (বিজয়চন্দ্র ১৩১৮ পৌষ: ৬৬৯)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ভাঙ্গাইয়া আজ যাহারা বাংলা ভাষার মাথা খাইতেছেন তাহাদের কাছেও প্রার্থনা করি–দয়া করিয়া তৃতীয় পন্থা অবলম্বন করিবেন না। ভাগ্যের কথা, আমাদের ভাবের ঘরে রবীন্দ্রনাথ রাজা। দুঃখের মধ্যে, আমাদের ভাষায় 'ভাবের ঘরে চুরি' বলিয়া একটা কথাও আছে। ভাষার রাজ্যে কিন্তু চুরি চলিবে না। এই রাজ্যে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়। এই রাজ্যের রাজার গায়ে নিত্য নতুন জামা।
২৫ নবেম্বর ২০১৪
দোহাই
১. উপেন্দ্রনাথ দত্ত, 'কী', সাহিত্য: মাসিকপত্র ও সমালোচন, বর্ষ ২২, সংখ্যা ১১, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত (কলিকাতা: ফাল্গুন ১৩১৮), ৮২৯-৩২।
২. বিজয়চন্দ্র মজুমদার, 'বাঙ্গালা ভাষার মামলা', সাহিত্য: মাসিকপত্র ও সমালোচন, বর্ষ ২২, সংখ্যা ৯, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত (কলিকাতা: পৌষ ১৩১৮), ৬৬৯-৭৫।
৩. বিজয়চন্দ্র মজুমদার, 'কি বনাম কী', সাহিত্য: মাসিকপত্র ও সমালোচন, বর্ষ ২২, সংখ্যা ১২, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত (কলিকাতা: চৈত্র ১৩১৮), ৯৩০-৩৩।
৪. মনসুর মুসা, বানান: বাংলা বর্ণমালা পরিচয় ও প্রতিবর্ণীকরণ (ঢাকা: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, ২০০৭)।
৫. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, আত্মজীবনী, সতীশচন্দ্র চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত, ৪র্থ সংস্করণ (কলিকাতা: বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, ১৯৬২)।
৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা শব্দতত্ত্ব, ৩য় সংস্করণ (কলিকাতা: বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, ১৩৯১)।
৭. সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ছন্দসরস্বতী, অলোক রায় সম্পাদিত (কলিকাতা: আনন্দধারা প্রকাশন, ১৩৭৪)।
৮. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মনীষী স্মরণে, ২য় প্রকাশ (কলিকাতা: জিজ্ঞাসা এজেন্সিজ্ লিমিটেড, ১৯৯০)।
৯. Bhakti Prasad Mallik et al., The Phonemic and Morphemic Frequencies of the Bengali Language (Calcutta: Asiatic Society, 1998).
১০. Hanne-Ruth Thompson, Bengali: A Comprehensive Grammar (London: Routledge, 2010).