Published : 17 Feb 2023, 11:45 PM
একুশে বইমেলার ১৬ দিন পর 'লেখক বলছি' মঞ্চটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম প্রান্তে মুক্তমঞ্চের পাশে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেটির কাছেই টিএসসি সংলগ্ন মেলার প্রবেশ ফটক আছে।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শুক্রবার বলেছেন, "এবার মেলা শুরুর পর থেকেই 'লেখক বলছি' মঞ্চটি নিয়ে বিন্যাসের ভুলটি আমাদের নজরে আসে। সেখানে খাবারের দোকানের কাছে সাহিত্য নিয়ে আলাপের পরিবেশ থাকে না। তাই আমরা লেখক বলছি মঞ্চটির জায়গা পরিবর্তন করেছি।
এবার ওই মঞ্চ উদ্যানের পূর্ব দিকের খাবার দোকানের কাছে করায় অসন্তোষ জানিয়ে আসছিলেন সাহিত্যিকরা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি কবি শাহেদ কায়েস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, "লেখকদের কথা বলার জন্য মঞ্চ করা হয়েছে এমন একটি জায়গায়, সেখানে খাবারের দুই স্টলের মাঝখানে। সেখানে কথা বলার মতো পরিবেশই নেই।"
মঞ্চটি স্থানান্তরের পর শুক্রবারই নতুন স্থানে হয়েছে ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠান। এতে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসুদুজ্জামান, ভাগ্যধন বড়ুয়া, ম্যারিনা নাসরিন ও ইউসুফ মুহম্মদ।
ছুটির দিনে জনস্রোত
শুক্রবার ছুটির দিনে মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকালে শিশুপ্রহরে কচিকাঁচার কলরবে মুখরিত হয় যে মেলা, সন্ধ্যায় তা রূপ নেয় জনস্রোতে। দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বসিত দেখা গেলেও ধুলার কারণে ভুগতেও হয়েছে তাদের।
এ দিন মেলায় নতুন বই এসেছে ২৭৬টি। শিশুপ্রহরের আগে সকাল ১০টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব।
এতে ক-শাখায় প্রথম হয়েছে আরোহী বর্ণমালা, দ্বিতীয় হয়েছে অংকিতা সাহা রুদ্র ও তৃতীয় হয়েছে জুমানা হোসেন। খ-শাখায় প্রথম হয়েছে সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, দ্বিতীয় হয়েছে আনিশা আমিন ও তৃতীয় হয়েছে অদ্রিতা ভদ্র। আর গ-শাখায় প্রথম হয়েছে আদিবা সুলতানা, দ্বিতীয় হয়েছে তাজকিয়া তাহরীম শাশা ও তৃতীয় হয়েছে সিমরিন শাহিন রূপকথা।
বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, দেওয়ান সাঈদুল হাসান ও শাহদাৎ হোসেন নিপু। অতিথি ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণী।
নানা অনুষ্ঠানে
বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রাবন্ধিক মহীবুল আজিজ বলেন, "সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সমকালীন জাতীয়তাবাদী ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। যে তিনটি প্রধান উপন্যাস তিনি রেখে গেছেন সেগুলোর মুখ্য অন্বেষা দেশ, দেশের সামগ্রিক চিত্র এবং পারিবারিক-সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণ।
"…সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সমকালীন সমাজচিত্র ও মানবচরিত্রকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই মানবজীবনের অনিশ্চয়তা, ভয়, অস্তিত্বের সংকট- সবকিছুই তার রচনায় মূর্ত হয়ে ওঠেছে।”
অনুষ্ঠানে সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, "আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এর সাহিত্যকে বিচার করা এখন সময়ের দাবি। তার সাহিত্য-বিশ্লেষণে তত্ত্বের শৈল্পিক ও নান্দনিক ব্যবহারের দিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।”
আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন।
সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন ফরিদ আহমদ দুলাল, ফেরদৌস নাহার, তপন বাগচী, জাহিদ মুস্তাফা, আফরোজা সোমা ও আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সুকান্ত গুপ্ত, রুবিনা আজাদ ও মো. শওকত আলী।
এছাড়া ছিল ফরিদ আহমদ দুলাল রচিত এবং নাট্যাঙ্গন নাট্যপরিবার নিবেদিত নাটক ‘উন্মোচন রহস্য’ এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় ‘উদয় দিগঙ্গন’র শিল্পীদের পরিবেশনা।
শনিবার যা থাকছে
শনিবার ১৮তম দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর।
এর আগে সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।