১৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্যচিত্র করছে সরকার, রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 'বীরের কণ্ঠে বীরগাথা' প্রকল্পের আওতায় ১৪ জন বীর মু্ক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ হবে।

এই তালিকায় রয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সাবেক মো. আব্দুল হামিদ, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজম্মেল হক।

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারের ভিডিওচিত্র ধারণ ও সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।

বুধবার অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক সাক্ষাৎভিত্তিক ভিডিও ধারণ কার্যক্রমের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, গত ১ এপ্রিল ১৬টি ডকুমেন্টারি তৈরির লক্ষ্যে ‘বিস্তৃত ডকুমেন্টারিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য গঠিত কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ১৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।

সংসদীয় কমিটি তথ্যচিত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ে ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় না নিয়ে একাত্তরে তাঁর অবদান ও নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়ার সুপারিশ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের সম্মুখযুদ্ধের জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ (বৈমানিক) বীর উত্তম, অপারেশন জ্যাকপটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও দলনেতা আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, সাব সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে দশম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক জাফর ইমাম বীর বিক্রম, ২ নম্বর সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, মুক্তিযুদ্ধকালীন রওশন আরা ব্যাটারির সহঅধিনায়ক কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদারের উপর বিস্তৃত তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ১৪ ব্যক্তির মধ্যে ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের সাক্ষাৎকারের ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের আংশিক ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়েছে।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে।

বুধবার কমিটির বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ বীরের কন্ঠে বীরগাথা’ নামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান এবং নেতৃত্ব বিবেচনায় রেখে নির্বাচন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে যেসব ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট, শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস রয়েছে সেসব ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরা এবং সংরক্ষণ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাথা’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও সরকারের উপসচিব মোহাম্মদ আফরাজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকল্পের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে।

“৬৪ জেলায় জীবিত ৮০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার অডিও-ভিডিও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। ১৬টি ডকুমেন্টারি নির্মাণ হবে, এর মধ্যে চারটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। বাকিগুলোর কাজ শুরু হবে। এজন্য নির্বাচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকারের জন্য আমরা সময় চেয়েছি। সময় দিলেই তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে।”

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “চলতি ডিসেম্বরে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে, নানা কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে আমাদের এক বছরের মত দেরি হয়েছে। এজন্য আরো এক বছর সময় বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হবে।”