Published : 27 Feb 2025, 02:08 PM
নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে দুদিন ধরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ফটক অবরুদ্ধ করে বসে রয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের একাংশ।
তাদের অভিযোগ, তাদের দিকে সরকারের ‘নজর নেই’; সরকারের লোকজন 'বাটপার'। এর আগে আন্দোলন করা আহতদের আরেকটি অংশকে ‘দালাল’ বলেও তারা আখ্যায়িত করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের এক নম্বর ফটকে গিয়ে দেখা গেল, সামনে বসে রয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ জন আহত ব্যক্তি। তাদের পেছনে আশপাশে রয়েছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। দেশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা তাদের খবর নিচ্ছেন।
বুধবার থেকে সেখানে বসে থাকা আহতদের একজন মো. মাসুদ বললেন, আন্দোলনের সময় মহাখালীতে তার ডান হাতে গুলি লেগে বেরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, সরকার আহতদের যে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে, তা তারা মানেন না। তারা চান দুটো ক্যাটাগরি হোক, যারা আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, অর্থাৎ পঙ্গু হয়েছেন, তাদের এ ক্যাটাগরিতে রেখে যারা আহত হওয়ার পরেও কর্মক্ষম, তাদের বি ক্যাটাগরিতে রাখা হোক।
আহতদের আরেকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বললেন, রামপুরা এলাকায় ১৯ জুলাই তার ডান পায়ে, গায়ে ও চোখে ছররাগুলি লাগে। ডান পায়ে এখনো ৭০ থেকে ৮০টির মত স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। ডান চোখে এখনো ভালো করে দেখেন না।
তার ভাষ্য, সরকার তাদের ‘মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না’। এর আগে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে যে আহতরা আন্দোলন করেছিলেন, তাদের কোনোভাবে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেছে সরকার।
জামালের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ থেকে আরেকজন পঙ্গু হাসপাতালের সামনে আন্দোলন করা কয়েকজন আহত নেতার নাম ধরে বলছিলেন, “ওরা সব বাটপার। ওরা ওদের পাওনা সরকারের কাছ থেকে ভালোভাবেই বুঝে নিয়েছে।”
জামাল বলেন, "বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা আহত হলাম, অথচ এখন আমরাই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।"
আহত মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, “আমরা সরকারের কাছে আরো দুটো দাবি জানিয়েছি। একটি হচ্ছে এই আহতদের আজীবন সুরক্ষার ব্যবস্থা করা এবং একেবারে প্রত্যন্ত এলাকাতেও একজন আহত যেন স্বাস্থ্যসেবা পান সেটা নিশ্চিত করা।”
তার ভাষ্য, সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার আহত তাদের সঙ্গে রয়েছেন। অনেকেই ঢাকার পথে আছেন। আবার অনেকে এ মুহূর্তে লম্বা যাত্রা করার মত অবস্থায় নেই বলে আসতে পারছেন না।
প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের তিনটি ফটকেই তাদের সহযোগীরা অবস্থান করছেন বলে জানালেন মাসুদ।
এক নম্বর ফটকের সামনে বসা আন্দোলনকারীরা কিছুক্ষণ পর পর তারা স্লোগান দিচ্ছেন। 'এক দুই তিন চার, সব শালার বাটপার', 'ক্যাটাগরি কয়টা, দুইটা দুইটা', 'দালালদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে'।
গত ছয় মাস ধরে চিকিৎসাধীন এই আহতরা সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন।
তাদের আরেকটি অংশ গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোর এবং সাভারের সিআরপিসহ বিভিন্ন সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহত ব্যক্তিরা ছিলেন তাদের মধ্যে।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর কাছ থেকে কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে সেদিন রাতে তারা হাসপাতালে ফিরে যান।
জুলাই আন্দোলনের আহতদের জন্য সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের পরিচয়পত্র দেওয়া ও রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা; যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা; নারী যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা; বিনামূল্যে বিমান, রেল ও বাসে চলাচলের ব্যবস্থা করা, যানবাহন কেনায় শুল্ক-কর মওকুফ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাষ্ট্রীয় অতিথিশালাগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথাও রয়েছে তাদের দাবির মধ্যে।