Published : 02 Aug 2024, 10:59 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় এবার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন যুবদলকর্মী ইরফান ওরফে রোমান।
শুক্রবার তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী রোমান স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোরাদুল ইসলাম তা রেকর্ড করার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. রশিদুল আলম তার খাসকামরায় রোমানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব তথ্য দিয়েছেন কারাহাজতের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস আই মুরাদ হোসেন।
এর আগে গত বৃহষ্পতিবার ডেমরা থানার ছাত্রদল নেতা মাসুদ রানা গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় নিজের সংশ্লিষটতার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
সাত দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার দনিয়া ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এরফান ওরফে রোকন, ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য মো. আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম ও মো. সৌরভ মিয়াকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ২৭ জুলাই আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার সাত দিনের রিমান্ড চলাকালে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাকে আদালতে হাজির করেছিল পুলিশ। এরপর তিনি সেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন, যা রেকর্ড করা হয়। পরে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) ঢাকার মাতুয়াইলে শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইউনস্টিটিউটের বিপরীত পাশে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টায় দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে বের হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগ ফুটওভার ব্রিজের উত্তর পাশে আসামাত্রই আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গিয়াস উদ্দিনকে আটক করে।
এরপর তাকে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুরুতর আঘাতসহ রক্তাক্ত জখম করা বলে মামলায় বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, আঘাতে রাস্তায় পড়ে গেলে আসামিরা লোহার রড, লাঠি দিয়ে গিয়াস উদ্দিনের নাক, কান, মুখমণ্ডল, গলা, হাত, বুক, পেট, ডান পায়ের হাঁটুর নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এর পর তাকে রশি দিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গে বুলিয়ে রাখা হয়।
এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় গত ২৪ জুলাই নিহতের ভগ্নিপতি ফজল প্রধান মামলা দায়ের করেন।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ১৫ জুলাই সহিংস হয়ে ওঠে। ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে আসছে দুই শতাধিক নিহতের খবর, তবে সরকার বলছে তাদের কাছে ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
সহিংস এই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন, জোট নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে এর নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।
আরও পড়ুন...
পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা: ছাত্রদল নেতা মাসুদের 'স্বীকারোক্তি'
যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়ায় পুলিশ হত্যা: ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬
পুলিশ হত্যা: জামিন মেলেনি কিশোর ফাইয়াজের