Published : 27 May 2025, 08:44 PM
বিভিন্ন দাবিতে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালককে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে গায়ে কেরোসিন ও পেট্রোল ঢেলে ‘আত্মহত্যার’ চেষ্টা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের একটি অংশ।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ২টার পর থেকে তারা পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীকে প্রায় দেড় ঘণ্টা তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরিচালক খায়ের আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুরের দিকে কার্যালয়ে আসা আহতরা তার বিরুদ্ধে একপক্ষের হয়ে কাজ করার অভিযোগ করেন। গত রোববার ‘বিষপানে’ আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে ভর্তি চারজনও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
“সুইসাইড করতে চেয়েছিল এমন চারজন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে অবস্থায়ই মঙ্গলবার তারা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসেন। এরসঙ্গে যোগ দেয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনের কয়েকজন। তাদের নিজেদের মধ্যেও অনেক ধরনের কোন্দল আছে, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করে। তাদের ৪০ থেকে ৫০ জন আমার রুমে আসে। সেখানে তারা নিজেদের মধ্যে গোলমাল করছিল, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিল যে একদল অনুদান এনেছে তাদেরকে দেয় নাই।”
ওই সময় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানান তিনি।
ওই সময়ের বর্ণনা দিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আমি না কি বিদেশে পাঠানোর নামের তালিকা করি। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা নয়। এখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে তারাই নির্ধারণ করে কারা বিদেশে যাবে; তো এসব বিষয় নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল।
“তাদের মধ্যে আকতার হোসেন নামে একজন আবার পেট্রল নিয়ে এসেছিল। যে কারণে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই, কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় কি না। বিষয়টি আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই। এরপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে তারা সরে যায়। এর আগেই আমি আহতদের একটা অংশের সহায়তায় কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি।”
ঘটনাস্থলে থাকা জুলাই আহতদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওইদিন যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল তারাই আজ পরিচালকের কার্যালয়ে আসে। সেখানে নানা কথাবার্তা বলতে বলতে আবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সঙ্গে পেট্রল নিয়ে আসে। এখন সব ঠিক আছে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা কেরোসিন-পেট্রোল নিজেদের গায়ে ঢেলে আগুন লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় আমরা গিয়ে তাদের কাছ থেকে বোতলগুলো নিয়ে নেই।”
পরে সেনাবাহিনী এসে সম্মিলিতভাবে তাদের বোঝানোর পর তারা চলে যায়, যোগ করেন তিনি।
এর আগে গত রোববার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চারজন ‘বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা’ করে বলে জানায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার পর তাদেরকে তাৎক্ষণিক সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে তখন জানিয়েছিলেন শেরে-বাংলা নগর থানার ওসি ইমাউল হক।
ওই চারজন হলেন- শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, সেদিন তাদেরকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে ‘ওয়াশ’ করার পর তারা সুস্থ ওঠেন। সেই থেকে তারা ওই হাসপাতালেই আছেন এবং ভালো আছেন।
সেদিনের ঘটনার সময় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের নতুন সিইও কামাল আকবর। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে তার বৈঠক চলাকালে বিষপানের ঘটনাটি ঘটে।
সেদিন পরিচালক খায়ের আহমেদ বলেছিলেন, ওই চারজনের মধ্যে একজন সিঙ্গাপুরেও চিকিৎসা নিয়েছেন।
“আমার ধারণা, তারা মানসিকভাবে সুস্থ না; যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে তারা মানসিকভাবে সুস্থ না। আরেকটা ধারণা, এটা সরকারের দৃষ্টিতে আনা; জুলাই ফাউন্ডেশনের নতুন সিইওর দৃষ্টি আকর্ষণ করা।”