Published : 16 Jan 2025, 01:03 PM
ঢাকার ধানমন্ডির 'বাংলাদেশ আই হসপিটালে' দেড় বছর বয়সী শিশুর বাঁ চোখের বদলে ডান চোখে 'অস্ত্রোপচার' করার অভিযোগে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ধানমন্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ জানিয়েছেন বুধবার রাত দুইটার দিকে চিকিৎসক সাহেদ-আরা বেগমকে এলিফ্যান্ট রোডে তার নিজের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওসি মাসুদ বলেন, "ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে শিশুটির বাবা মাহমুদ হাসান বুধবার একটি মামলা করেছেন। এরপর চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়।"
তবে শিশুটি এখন সুস্থ আছে বলেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন তার বাবা মাহমুদ হাসান।
চোখের সমস্যার কারণে দেড় বছর বয়সী শিশু ইরতিজা আরিজ হাসানকে নিয়ে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ আই হসপিটালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও স্ট্র্যাবিসমাস সার্জন সাহেদ-আরা বেগমের কাছে তার বাবা-মা গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আর 'বাংলাদেশ আই হসপিটাল’র কনসালটেন্ট আফরোজা খানম বিষয়টিকে 'স্রেফ ভুল বোঝাবুঝি' বর্ণনা করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, শিশুটিকে যখন মঙ্গলবার হাসপাতালে আনা হয়েছিল, চিকিৎসক সাহেদ-আরা তার ডান চোখে চুল পেয়েছিল। সেটি পরিস্কার করার পর অভিভাবকরা বলেছেন সমস্যা বাঁ চোখে, তখন বাম চোখও পরিস্কার করা হয়।
ওসি মাসুদ বলেন, “হাসানের বাঁ চোখের মধ্যে ময়লা জাতীয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন ওই চিকিৎসক। পরে অপারেশনের জন্য সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে এনেসথেসিয়া দিয়ে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাঁ চোখের জায়গায় হাসানের অপারেশন করা হয়েছে ডান চোখে।"
ওসি মাসুদ বলেছেন, তখন পরিবারের সদস্যরা বিষয়টা চিকিৎসককে জানালে শিশুটিকে ফের ওপারেশন থিয়েটারে নিয়ে বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছে পরিবারেরর সদস্যরা।
কনসালটেন্ট আফরোজা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তিনি (চিকিৎসক সাহেদ-আরা বেগম) ওই শিশুটির চোখ পরীক্ষা করে দেখেন যে সেদিন তার ডান চোখে ফরেন বডিতে চুল ঢুকেছে যা রিমুভ করতে হবে। এতে শিশুটির চোখের কর্নিয়ায় ঘষা লেগে চোখে ব্যথা পাচ্ছিল।"
তখন চিকিৎসক সাহেদ-আরা বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর এনেসথেশিয়া দিয়ে ডান চোখ থেকে ফরসেপ দিয়ে চুল বের করেন।
“কাজটি অল্প সময়ের মধ্যে করেছিলেন তিনি। এরপর ব্যান্ডেজ করে দিলেন যেহেতু কর্নিয়ায় আঘাত পেয়েছে। এরপর অপারেশন থিয়েটার থেকে শিশুটিকে বের করে অভিভাবকদের কাছে নিয়ে যাওয়ার হলে তারা বলেন যে, শিশুর ডান চোখ নয় বাঁ চোখে সমস্যা ছিল।"
তখন কী করা হল প্রশ্নে চিকিৎসক আফরোজা খানম বলেন, “এরপর বাচ্চাটাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে দুই তিন মিনিটের মধ্যে বাঁ চোখ পরিস্কার করা হয়। এটা কোনো অপারেশন নয়, জাস্ট প্রসিডিওর। আর বা চোখে ব্যান্ডেজ করারও প্রয়োজন হয়নি। এটাকেই রোগীর স্বজনরা বলছেন বা চোখে সমস্যা কিন্তু ডান চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে! এটা জাস্ট ভুল বোঝাবুঝি।"
১৮ মাস বয়সী শিশুটি এখন কেমন আছে সে খোঁজ নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন কনসালটেন্ট আফরোজা খানম।
“তখনই বাচ্চাকে নিয়ে বাবা মা বাসায় চলে যায়। আমি নিশ্চিত বাচ্চাটি এখন ভালো আছে, সুস্থ আছে।“
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হাসান বাসায় ফিরে সুস্থ আছে এবং তার চোখের ব্যান্ডেজও খুলে ফেলা হয়েছে।
হাসানের বাবা মাহমুদ হাসান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলে এখন ভালো আছে। বাসাতেই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছে।"