Published : 02 Sep 2024, 01:25 PM
স্ত্রীকে গাইনির ডাক্তার দেখাতে সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখেন সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই, উপস্থিতরা হোসেনকে পাঠিয়ে দেন জরুরি বিভাগে। কিন্তু সেখানে গিয়েও চিকিৎসা মেলেনি হোসেনের স্ত্রীর।
সোমবার আবুল হোসেনের মত আরও অনেকে ভিড় জমালেও প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে।
চিকিৎসকদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে ডাকা কর্মবিরতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ আছে।
সকাল থেকে বহির্বিভাগের সামনে ভিড় দেখা গেছে রোগীদের। অনেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন, অনেকে আবার সেখানেই ঘোরাঘুরি করছেন।
তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা রেখেছেন চিকিৎসকরা। সেখানে আসা রোগীদের দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ডান চোখে আঘাত পেয়ে নারায়ণগঞ্জের তারাবো বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসা তামিম হাসান বলেন, "সেখানে ডাক্তার দেখাইছিলাম তারা এখানে আসতে বলছেন। এখানে আইসা দেখি ডাক্তার নাই।”
আবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "বহির্বিভাগের আইসা দেখি ডাক্তার নাই। এইখান থেকে বলে ইমার্জেন্সিতে যাওয়ার জন্য। আবার ইমার্জেন্সি থেকে এখানে আসতে বলে। খালি হয়রানি।"
শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে হুসাইন নামে দেড় বছরের এক শিশুকে নিয়ে এসেছেন তার স্বজনরা, এসে দেখেন বহির্বিভাগ বন্ধ।
"বাচ্চার মাথায় একটু সমস্যা হইছিল। শরীয়তপুরের ডাক্তার বলল ঢাকা মেডিকেলে শিশু সার্জারিতে দেখাইতে। আইসা দেখি ডাক্তার নাই।"
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৭০ জন চিকিৎসক রোগী দেখেন এখানে।
এদিকে চলমান কর্মসূচি নিয়ে হাসপাতালে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
আন্দোলনকারীদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক ডা. মো. আবদুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখন মিটিংয়ে আছি। মিটিং শেষে আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব।"
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তখন থেকেই সেখানে চিকিৎসা সেবার অচলাবস্থা শুরু।
এরপর রোববার ঢাকা মেডিকেলের অন্য চিকিৎসকরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতিতে সংহতি জানান।
এ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসার সব বিভাগে সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় চরম চিকিৎসা সংকট।
চিকিৎসকদের স্পষ্ট দাবি হল হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং সারাদেশে চিকিৎসক ও রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দাবি নিয়ে চিকিৎসকরা সরব হলেও সেসব মেনে নেওয়ার আশ্বাস না মেলায় দুপুরে সারা দেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সঙ্গে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
সন্ধ্যায় সংকট নিরসনে হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা। এসব শর্ত না মানা হলে সোমবার সন্ধ্যা থেকে শাটডাউন কর্মসূচিতে ফিরবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে বিজিবির সদস্যদের উপস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সেবা শুরু হয়।
বহির্বিভাগ খোলা সোহারওয়ার্দী, টিবি হাসপাতালে
এদিকে ঢাকা মেডিকেলে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও ঢাকার আরও কয়েকটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা দেখা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে বহির্বিভাগ খোলা। রোগীদের টিকেট দেওয়া হচ্ছে, ডাক্তাররা রোগী দেখছেন।
হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের ওপিডি খোলা আছে। রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।"
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বেলা সাড়ে নয়টা পর্যন্ত রোগী দেখা বন্ধ রেখেছিলেন চিকিৎসকরা।
পরে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর বেলা দশটা থেকে রোগী দেখা শুরু করেন বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালেন একজন চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা ডিরেক্টর স্যারের সঙ্গে মিটিং করেছি। সেখানে রোগী দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।"
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোর, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি হাসপাতালে বহির্বিভাগ চালু রেখেছেন চিকিৎসকরা।
তবে রাজধানীর আরো কয়েকটি কয়েকটি হাসপাতালেও বহির্বিভাগ খোলা দেখা গেছে এবং সেখানে চিকিৎসা সেবাও চালু আছে।
মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু আছে বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "আমাদের ওপিডি চালু আছে। আমরা সকাল থেকেই রোগী দেখছি।"
আরও পড়ুন: