Published : 15 Jun 2023, 10:56 PM
বাঙালি মধ্যবিত্তের বিকাশ ও বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখক-অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিমকে ‘বাতিঘর’ হিসেবে হিসেবে দেখছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।
তিনি বলেছেন, “সরদার ফজলুল করিম বাঙালি মধ্যবিত্তের বিকাশ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এই মানুষটার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিশাল মাত্রায় খুঁজে পেতে পারি। তিনি ছিলেন ইতিহাসের বাতিঘর।”
সরদার ফজলুল করিমের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
মফিদুল হক বলেন, “তার মতো এত তীব্রভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাজনীতি কাউকে করতে দেখা যায় না। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি সশস্ত্র বিপ্লবী হলেও তিনি সেদিকে যাননি। তার জীবনী থেকে বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “সরদার ফজলুল করিম মানবতাকে ধর্ম হিসেবে মনে করেছেন এবং সে লক্ষ্যেই কাজ করেছেন। আজকে মানবতার বিকাশ ও দর্শন বিষয়ে জানা দরকার।
“আর এজন্য সরদার ফজলুল করিম চর্চা জরুরি। বিশেষ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে চর্চা বাড়ানো দরকার।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “সরদার ফজলুল করিম মানব মুক্তির কথা বলেছেন। মানুষ হওয়ার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে, সে স্বপ্ন দেখে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং সংকীর্ণ বৃত্তে বসবাসের মাধ্যমে কেউ মানুষ হতে পারে না। তবে মানুষ সংকীর্ণ বৃত্তেই বড় হয়।
“তারপর সে পরিবারে সমাজতন্ত্র কায়েম করে এবং বিশ্বব্যাপী সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। এভাবেই সে মানুষ হয়ে ওঠে। তবে এখানে বৈষম্য ও শ্রেণিবিভেদের সমস্যা রয়ে গেছে। এটি দূর করতে সরদার ফজলুল করিমের মত মানুষের প্রয়োজন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, “পাকিস্তান আমল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় জীবনের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে যথার্থ বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম।”
সরদার ফজলুল করিমের দর্শনকে ইংরেজিতে অনুবাদ, তার নামে ফাউন্ডেশন গঠন ও ওয়েবসাইট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান শান্তনু মজুমদার।
সরদার ফজলুল করিমের ছাত্র সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আওয়াল মজুমদার বলেন, “আমার জীবনের প্রতিটি দিন সরদার ফজলুল করিম স্যার ছিলেন এবং আছেন। আমি গর্ব করে বলি, আমি সরদার ফজলুল করিমের ছাত্র। সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা আছে।
“কিন্তু আমি এক সততা এবং নিষ্ঠার সাথে চাকরি করেছি। কারণ সরদার ফজলুল করিমের স্যারের আদর্শ আমাকে বিনয়ী, সাদামাটা জীবনযাপন, সৎ, চরিত্রবান, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করেছে।”
সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত এ সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী মোহাম্মদ শিষ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নিবেদিতা রায়, শরীফ নূরজাহান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদুর রহমান।