Published : 12 Jun 2023, 08:52 PM
রাজধানীর বনানীতে ২৮ তলা যে ভবনে পাঁচ তারকা হোটেল বানানো হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী সেই ভবনের হিস্যা বুঝে নিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
আগামী তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও চেয়েছে উচ্চ আদালত।
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চে রুলসহ এ আদেশ দিয়েছে।
শত শত কোটি টাকা আদায়ের সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, বোরাক রিয়েল এস্টেটসহ বিবাদীদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১ জুন দৈনিক প্রথম আলোতে ‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেখানে লেখা হয়, সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮ তলা ভবন বানিয়ে একাই ভোগদখল করছে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ বলছে, বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি ছিল ১৪ তলা ভবন নির্মাণের। যার ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, বাকিটা পাওয়ার কথা বোরাকের।
সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী তাদের ভাগের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে হিস্যা গত এক দশকেও বুঝে পায়নি সিটি করপোরেশন। উল্টা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪ তলার স্থলে ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বোরাক।
এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি আবেদন করেন। তাতে সাড়া না পেয়ে এ প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
সেই ভবনের নির্মাতা বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিট আবেদনে। সুমন নিজেই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সাধারণ টিআইএনধারীদের কাছ থেকে বছরে দুই হাজার টাকা কর আদায়ের জন্য সরকার নানা কৌশল করছে। কিন্তু বোরাক রিয়েল এস্টেটের কাছ থেকে ২০০৬ সালে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার করা চুক্তি অনুযায়ী ৩০ শতাংশ হিসাবে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা আদায়ের কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।”
এই আইনজীবী মনে করেন, বোরাক রিয়েল এস্টেট ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে একটি ‘দুর্নীতির সম্পর্ক’ রয়েছে।
কী ছিল চুক্তিতে
চুক্তিতে বলা ছিল, বনানী কাঁচাবাজারের পশ্চিম পাশে ও বনানী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উত্তর পাশে সিটি করপোরেশনের জমিতে ‘বনানী সুপার মার্কেট কাম হাউজিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হবে।
ভবনের ৩০ শতাংশ পাবে সিটি করপোরেশন, ৭০ শতাংশ পাবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এই চুক্তির শর্ত নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। কারণ, যে এলাকায় এই জমি ছিল, সেখানে ভবন নির্মাণে জমির মালিকের হিস্যা সে সময় ৬০ শতাংশেরও বেশি ছিল। এ নিয়ে তখনই পত্রিকায় লেখালেখির পর সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়।
সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর বনানীর এই সম্পত্তি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভাগে পড়ে।
বহুমুখী অনিয়ম
বনানীর ৪৪ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ কাঠা জমিতে আগেই করপোরেশনের তিন তলা মার্কেট ছিল।
মার্কেটের সামনে প্রধান সড়ক লাগোয়া প্রায় ১৬ কাঠা খালি জমি ছিল। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল কেবল ৪৪ কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য। সামনের ১৬ কাঠা খোলা জায়গা থাকার কথা।
কিন্তু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে পরে সামনের খালি ১৬ কাঠা জমিও
প্রকল্পে যুক্ত করে ৬০ কাঠা জমিতে ১৪ তলা ভবন নির্মাণে চুক্তি করা হয়।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে যখন ২৮ তলা ভবন করার উদ্যোগ নেয়, তখন তা জানতে কাজ থামাতে বলে সিটি করপোরেশন। কিন্তু চিঠি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।
ওই ২৮ তলা ভবনে এখন রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটন। ভবনের ২৮ তলায় সুইমিংপুল, ২৭ তলায় ব্যায়ামাগার, ১৫ তলায় রেস্টুরেন্ট ও ১১ তলায় রয়েছে বলরুম।