Published : 01 Jul 2023, 10:15 PM
লাগাতার বর্ষণে পানি জমে রাজধানীর অন্যতম চালের আড়ত মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের শতাধিক দোকানের ‘লাখ লাখ টাকার’ চাল, ডাল ও চিনি নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার ভারি বর্ষণের কারণে দোকানের গলিগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় এ পরস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তাদের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবসায়ী সমিতিকে টাকা দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ব্যবসায়ী সমিতি দুষছে সিটি করপোরেশনকে। তবে সিটি করপোরেশন দায় নিতে নারাজ।
গত বুধবার ঈদের আগের দিন থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন এবং পরদিন শুক্রবারও বৃষ্টি হয়েছে বেশ। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
ঈদের দিন থেকে কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকানগুলো ছিল বন্ধ। এর মধ্যে শনিবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টিতে পানি জমে গেলে দোকানে দোকানে পানি ঢুকতে শুরু করে।
নিউ বন্ধু রাইস নামের একটি দোকানের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, তার দোকানে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক বস্তা চাল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঠিক কত বস্তা নষ্ট হয়েছে, সেটা পানি সেচে বের করার পর হিসাব করে বলা যাবে।
ঢাকা রাইস নামের আরেক দোকানের মালিক মোহাম্মদ বাচ্চু বলেন, তার দোকানে পানি ঢুকে প্রায় একশ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছে।
লিখন এন্টারপ্রাইজের মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, “মার্কেটের চারদিক থেকে পানি ঢুকে পড়ায় এই সমস্যা হয়েছে।”
শরিয়তপুর রাইসের মালিক বাদশা মিয়া জানান, মার্কেট ঈদের ছুটিতে বন্ধ থাকায় অনেকেই ঢাকার বাইরে চলে গেছেন। ফলে অনেক দোকানদার জানেন না তার কতটা ক্ষতি হয়ে গেছে।
এ মার্কেটে পাইকারি পণ্যের দোকান আছে সব মিলিয়ে ১৭০টি। তার মধ্যে অন্তত একশ দোকানের চাল, ডাল, চিনি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মোহাম্মদপুর কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মন্টুর ভাষ্য।
তিনি বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তারা এখনও নিরূপণ করতে পারেননি। তবে প্রাথমিক ধারণায়, সেটা কয়েক লাখ টাকা হবে।
ঢাকা রাইসের বাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্যুয়ারেজ লাইন ঠিক করতে, সিসি ক্যামেরা বসাতে এবং মার্কেটের কিছু অংশ রঙ করতে সমিতি কিছুদিন আগে তাদের কাছ থেকে তিন হাজার করে টাকা নিয়েছে।
“টাকা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর মধ্যে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় কাজ শুরু করতে পারেনি। মার্কেট অনেক নিচু। পাশে রিং রোড, তাজমহল রোড থেকে পানি গড়িয়ে মার্কেটে ঢোকে। এ কারণেই মার্কেট পানির নিচে তলিয়ে যায়।”
এ পরিস্থিতির জন্য মালিক সামতির অবহেলাকে দায়ী করে অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, “টাকা যখন তুলেছে, সাথে সাথে কাজ শুরু করলে এই ক্ষতিটা হত না। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিই। তারপরেও তাদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে।”
তবে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মন্টু বলেন, “ওই ব্যবসায়ী ঠিক বলেননি। অসত্য বলেছেন। শুধু কৃষি মার্কেট নয়, আশপাশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর, রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।”
তার ভাষ্য, প্রতিমাসে দোকান থেকে যে চাঁদা নেওয়া হয় তা ১০-১২ জন নিরাপত্তাকর্মীর বেতন-বোনাস দিতেই শেষ হয়ে যায়।
উল্টো সিটি করপোরেশনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মন্টু বলেন, “প্রতি মাসে সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত হারে ভাড়া দিলেও তারা কোনো দেখভাল করে না। ফলে নিরুপায় হয়ে দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা তুলে কাজ করতে হয়।”
সমস্যার সমাধানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন জানিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির এই নেতা বলেন, “সিটি কর্পোরেশন যদি এখন মার্কেটের ভেতরের রাস্তাটা উঁচু এবং ড্রেনেজ লাইন সম্প্রসারণ করে দেয়, তাহলে এই সংকট দূর হবে।”
তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন দেখভাল করে না– এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগেও কৃষি মার্কেটে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ করেছে। কিন্তু এখন ভারি বর্ষণ হচ্ছে, ফলে পানির চাপ বেশি।
“আর সিটি করপোরেশন কাজ করার কারণেই এখন পানি বেশিক্ষণ আটকে থাকে না। আগে দুই-তিন দিন আটকে থাকত এখন দুই তিন ঘণ্টাও আটকে থাকে না।”