Published : 20 Nov 2024, 10:55 PM
দেশের শিল্পকারখানার সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইঁয়া।
ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কোনো কারখানা চালু রাখার কোনো ‘বাস্তবতা না থাকলে’ তা বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, “শ্রম অঞ্চলগুলোতে শুরুতে বেশ অসন্তোষ ছিল, আমরা প্রায় প্রত্যেকটি দাবি ‘অ্যাড্রেস’ করার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু মালিকপক্ষ বেতন না দিলে শ্রমিকরা বসে থাকবে না- এটা স্বাভাবিক। বেক্সিমকো গ্রুপের দুই মাসের বেতন সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তবে এভাবে চলতে থাকবে আমরা সেটা চাই না। আমরা একটা স্থায়ী সমাধানে যেতে চাই। এজন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। তারা একটি প্রস্তাবনা দেবে।
“অনেকগুলো কারখানা আছে যেগুলো চলমান রাখার কোনো বাস্তবতা নেই। তাদের অর্ডার নেই, রপ্তানি নেই। সেখানে শ্রমিকদের রেখে অন্তহীন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। যেগুলো সম্ভব নয়। তার হিসাবনিকাশ করে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণসহ পাওনা মিটিয়ে সেগুলো বন্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কমিটি এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেবে।”
‘নতুন করে তিতুমীর কলেজের ঘটনা দুঃখজনক’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, “এর আগে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছিল। তাদের সঙ্গে আমি ও আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টা আলোচনা করেছিলাম। একটা ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হয়েছিল এবং সেখানেই বিষয়টির শেষ হয়েছিল। সমাধানের পথ দেখানো হয়েছিল। আপনারা জানেন এত দ্রুত এ ধরনের দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
“আবার নতুন করে তিতুমীর কলেজে যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। আমরা দেখেছি, কীভাবে ট্রেনের ভেতরে পাথর ছুড়ে একটা বাচ্চার মাথা পর্যন্ত ফেটে গিয়েছে। যদিও উনারা বলেছেন, এটা অনুপ্রবেশকারী।
“আপনারা (সাংবাদিকরা) যেটা বললেন আজকেও ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু এখনও আমরা স্পষ্ট নয়, কী নিয়ে তাদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে আমরা প্রয়শই এ ধরনের ঘটনা দেখে থাকি। এক্ষেত্রে ছাত্রদের প্রতি আহ্বান থাকল, যেকোনো ধরনের উসকানির মধ্যে না পড়ে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার নাগরিক দায়িত্ব যেন আমরা পালন করি।”
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “ছাত্রদের বিষয়ে আলোচনা করে দাবি দাওয়া জানানোর একটি সিদ্ধান্ত এসেছিল। কিন্তু সেটাও কার্যকর করা যায়নি। আমাদের আহ্বান ছিল জনভোগান্তি না হয়, সেজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও শোনা হচ্ছে না।
“যেকোনো দাবিতে জনমানুষকে জিম্মি করে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি করে মানুষকে অসহনীয় ভোগান্তির মধ্যে ফেলে। একটা কলেজকে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে ফেলার জন্য রাজধানীর মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলা, এটা কতটুকু সমীচীন তা ছাত্রদের ভেবে দেখার অনুরোধ করব।”
আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “ছাত্ররা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা সাধারণ জনগণ সবাই মিলে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। ছাত্রদের ভেতরে এখনও অনেক আকাঙ্ক্ষা আছে। দাবি দাওয়া আছে। তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার আন্তরিক। তাদের প্রতি আহ্বান আপনারা আসেন কথা বলেন। কথা বলে আমরা চাইলে সমস্যার সমাধান করতে পারি।
“আপনারা দেখেছেন, অনেকগুলো বিষয়ের ক্ষেত্রে সমাধান এসেছে। সরকার কথা শুনেছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমরা বার বারই আহ্বান জানাচ্ছি, উসকানি বা নেতিবাচক এনার্জি না দেখিয়ে প্রপার চ্যানেলে এসে সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। সরকার সকলের কথা শুনতে ইচ্ছুক। ছাত্ররা যেহেতু একটি গণঅভ্যুত্থান সফল করতে পেরেছে। আমরা মনে করি তারা একটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।”