Published : 01 Dec 2023, 06:52 PM
গরুর মাংসকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে কয়েকজন কসাই উদ্যোগী হয়ে দাম কমানোর পর এখন অন্যরাও দাম কমাতে শুরু করেছেন চাপে পড়ে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোখাদ্য ও গরুর দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে খুব বেশি দিন ‘কম দামে’ মাংস বিক্রি করা যাবে না; কিছুদিনের মধ্যেই দাম আবার বেড়ে যাবে।
গত কয়েকমাস ধরে এক কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। মাঝে রোজার মধ্যে দাম উঠেছিল ৯০০ টাকায়।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকার শাহজাহানপুরসহ কয়েকটি এলাকার বিক্রেতারা প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকা করে বিক্রি করা শুরু করেন; যদিও অন্যান্য এলাকায় তা বিক্রি হচ্ছিল ৭২০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে।
তবে শুক্রবার ঢাকার মিরপুর এলাকার কয়েকটি দোকানে নতুন করে মংসের দাম কেজিতে অন্তত ২০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে। প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় যা এতদিন ৭২০ টাকায় বিক্রি হতো।
তবে দাম কমালেও এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো স্বস্তি নেই। তাদের বক্তব্য, বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম কমালেও তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এতোদিন প্রতিকেজি ৭২০ টাকা করে বিক্রি করলেও শুক্রবারই তা কমিয়ে ৬৭০ টাকায় এনেছে পীরেরবাগের কাদের গোস্ত বিতান।
এই দোকানের পরিচালক বাদশা মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যরা কিভাবে দাম কমাচ্ছে জানি না। তবে বর্তমান দামে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান। তবুও বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে দাম কিছুটা কমিয়েছি।”
তবে মিরপুর বড়বাগ কাচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাত্র ২০ টাকা কমিয়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস।
বাগবাড়ি বড়বাজার হারুন মহাজন দিনে ২/৩টি গরু জবাই করে বিক্রি করেন। সেখান থেকে মাংস ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মাংসের দোকানে ভাগ ভাগ করে বিক্রি হয় এসব গরু।
হারুন মহাজনের কর্মচারী হিসাবে বড়বাগ কাঁচাবাজারে মাংস বিক্রি করেন সেলিম।
তিনি বলেন, “আমরা ষাড় গরু বিক্রি করি। বাজারে যারা ৬০০ টাকা করে কেজি বিক্রি করে, সেটা গাই গরুর মাংস। মাংসের সঙ্গে ফ্যাপসা, ছাটাছুটা, চর্বি, মাথার অংশ, হাড্ডি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিকেজি ৭০০ টাকার নিচে তো গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব না।”
শাহজাহানপুর এলাকায় ৫৯০ টাকা করে গরুর মাংস বিক্রির খবর জানেন কি না, জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ওইটা খলিল ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে মাসব্যাপী একটা ছাড় দিয়েছে।
মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারে রয়েছে পর পর ৬/৭টি গরুর মাংসের দোকান। এর একটি দোকানের কর্মচারী দাবি করেন, মাংস কেনা পড়েছে প্রতিকেজি ৭০০ টাকা করে। কিন্তু আশপাশের দোকানে দাম কম হওয়ায় তিনিও ৬৭০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
পাশের আব্দুল মালেক গোস্ত বিতানের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল মালেক মূল্য তালিকায় প্রতিকেজি ৭০০ টাকা করে লিখে রেখেছেন। তবে জানতে চাইতেই তিনি দাবি করলেন, প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
“মার্কেটে অনেক ব্যবসায়ী লসে বিক্রি করছে। মার্কেটে একটা হুলুস্থল কাণ্ড চলছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাবে।
কিভাবে দাম কমালেন, জানতে চাইলে মালেক বলেন, তিনি আগের চেয়ে দাম কমিয়েছেন। মাঝে কয়েকমাস বেচাবিক্রি কমে গেলেও এখন ভালো বিক্রি হচ্ছে।
“তবে বর্তমান বাজারে একটা গরু লালন-পালন করে বড় করার পর তা প্রতিকেজি ৭০০ টাকার কমে বিক্রি করে লাভ করা যাবে না। কারণ গম ভূষির দাম এখন ৭০ টাকা কেজি। গত তিনদিন ধরে ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে।
“গরুর হাটে কোনো গরুই নাই। এভাবে চলতে থাকলে গরুর বাজার আবার আগের অবস্থায় যাবে। বলতে গেলে গত কয়েকদিন ধরে আমি লসে আছি। হাটে গরুর দাম বাড়ছে, আবার বাজারে মাংসের দাম কমছে। এই হলো অবস্থা।”
মাঝে একবার গরুর চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে কমে গিয়েছিল বলেও স্বীকার করেন মালেক।
“দেখা গেছে দুই হাজার গরুর চাহিদা আছে, গাবতলীর হাটে এসেছে তিন হাজার গরু। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় কয়েকদিন গরুর দাম পড়ে গিয়েছিল।
“এখন কিন্তু আবার সেই পরিস্থিতি নাই। এখন মাংসের দাম কম থাকলেও হাটে গরুর দাম আবার বেড়ে গেছে।”