Published : 28 Jun 2025, 06:36 PM
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের দিনটা দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রাঙালেন লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস। টেস্ট অভিষেক ইনিংসেই চমৎকার সেঞ্চুরি উপহার দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার তরুণ ব্যাটিং সেনসেশন। ভেঙে দিলেন ছয় দশকের পুরোনো একটি রেকর্ড।
বুলাওয়ায়োতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শুরুর দিন ১১২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন প্রিটোরিয়াস। ১৯ বছর ৯৩ দিন বয়সে মাইলফলকটি ছুঁয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান এখন তিনিই।
এতদিন রেকর্ডটি ছিল দেশটির কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গ্রায়েম পোলকের। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে ১৯৬৪ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পোলক সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৯ বছর ৩১৭ দিন বয়সে।
সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ডটা বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০০১ সালে টেস্ট অভিষেকেই তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (১৭ বছর ৬১ দিন)। এই তালিকায় প্রিটোরিয়াস আছেন দশম স্থানে।
টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা দক্ষিণ আফ্রিকার সপ্তম ক্রিকেটার প্রিটোরিয়াস। তার আগে সবশেষ এই স্বাদ পেয়েছিলেন স্টিফেন কুক, ২০১৬ সালে সেঞ্চুরিয়নে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
সম্প্রতি লর্ডসের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ২৭ বছরের আইসিসি ট্রফি খরা কাটানোর পর এই প্রথম ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে খেলতে নেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম্বাবুয়ে সিরিজটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয়। নিয়মিত ক্রিকেটারদের অনেককেই দুই ম্যাচের এই সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে প্রোটিয়ারা। সুযোগ পেয়েছেন প্রিটোরিয়াসের মতো তরুণরা।
প্রিটোরিয়াসের মতো টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন আরেক তরুণ ব্যাটসম্যান ডেওয়াল্ড ব্রেভিস ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার কোডি ইউসুফ।
দক্ষিণ আফ্রিকা টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর পঞ্চদশ ওভারে প্রিটোরিয়াস যখন পাঁচ নম্বরে উইকেটে যান, ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে দল। সেই স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৫৫। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে ৮৮ বলে ৯৫ রানের জুটি গড়েন দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান প্রিটোরিয়াস ও ব্রেভিস।
লেগ স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসার চার বলের মধ্যে তিনটি ছক্কায় ৩৮ বলে ফিফটি করার পর আউট হয়ে যান ব্রেভিস (৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৪১ বলে ৫১)। ৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যান প্রিটোরিয়াস। সেখান থেকে তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১২ বলে।
চা-বিরতির পর ১৫৭ বলে দেড়শ ছুঁয়ে আরেকটি রেকর্ড গড়েন তিনি। টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসের কীর্তি এখন তার।
এই রেকর্ডটা ছিল এতদিন পাকিস্তানের গ্রেট জাভেদ মিয়াঁদাদের। ১৯৭৬ সালে টেস্ট অভিষেকে তিনি ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে (১৯ বছর ১১৯ দিন)।
অল্পের জন্য মিয়াঁদাদের ইনিংসটি ছাড়িয়ে যেতে পারেননি প্রিটোরিয়াস। ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ১৬০ বলে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ২৮৯।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আট ম্যাচে প্রিটোরিয়াসের চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে নাম লেখান তিনি রেকর্ড বইয়ে। বিশ্বের ২৩তম ও দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন এই টিনএজার। তার আগে সাদা বলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আলোড়ন ফেলে দেন তিনি।
বিশ্ব ক্রিকেটে এই সময়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিভাদের একজন মনে করা হচ্ছে তাকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাকে ভবিষ্যতের কুইন্টন ডি কক বলা হচ্ছে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই। তার নিজেরও নায়ক ডি কক। তবে তাকে চেহারা, আকৃতি ও ব্যাটিংয়ের ধরনের কারণে গ্রায়েম স্মিথের ‘ক্লোন’ বলে থাকেন অনেকে।
গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন দলের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর সিএসএ টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে গত বছর ২৩৫ রান করেন প্রায় ১৫৯ স্ট্রাইক রেটে। ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর এসএ টোয়েন্টির অভিষেকে খেলেন ৫১ বলে ৯৭ রানের ইনিংস। প্রায় ১৬৭ স্ট্রাইক রেটে ৩৯৭ রান করে এসএ টোয়েন্টির সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন তিনি।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেকে আগ্রাসী ফিফটির পর দশম ম্যাচে উপহার দেন ৯৬ বলে ১২০ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচেই ৬১ বলে সেঞ্চুরির পথে টেস্ট স্পিনার সেনুরান মুথুসামির এক ওভারে ছক্কা মারেন পাঁচটি।
গত আইপিএলে নিজেদের দুই ম্যাচ বাকি থাকতে নিতিশ রানার বদলি হিসেবে তাকে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালসে, যদিও খেলার সুযোগ মেলেনি।
এবার টেস্ট অভিষেকেই রেকর্ড-গড়া সেঞ্চুরিতে আরেকবার নিজের প্রতিভার ছাপ রাখলেন তরুণ ব্যাটসম্যান।
প্রিটোরিয়াসের রেকর্ড ১৫৩, আট নম্বরে বশের সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকা ৪১৮