Published : 29 Jun 2025, 10:52 AM
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস বেশ কিছুদিন ধরেই তুমুল আলোচিত নাম। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই দারুণ সাড়া জাগিয়ে পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে নানা রেকর্ড ও কীর্তির ঝড় তুলেছেন তিনি। সেই তরুণ প্রতিভা এবার তোলপাড় ফেলে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায়। টেস্ট অভিষেকে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নাম তুললেন রেকর্ড বইয়ের বেশ কটি পাতায়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়ো টেস্টের প্রথম দিনে প্রিটোরিয়াস যখন ক্রিজে যান, ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে দল। একটু পর স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৫৫। এসবের মধ্যেই স্বভাবজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ১৬০ বলে ১৫০ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি।
১৯ বছর ৯৩ দিন বয়সে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের এই ইনিংস জন্ম দিয়েছে রেকর্ডের পর রেকর্ড।
সর্বকনিষ্ঠ (১)
১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে দেড়শ করার কীর্তি এখন প্রিটোরিয়াসের। ১৯ বছর ৯৩ দিন বয়সে রেকর্ডটি গড়লেন তিনি।
গত প্রায় ৪৯ বছর ধরে রেকর্ডটি ছিল জাভেদ মিয়াঁদাদের। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ১৯ বছর ১১৯ দিন বয়সে অভিষিক্ত সেই ব্যাটসম্যান পরে হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি।
সর্বকনিষ্ঠ (২)
দক্ষিণ আফ্রিকার সাতজন ব্যাটসম্যান টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ব্যাটসম্যান প্রিটোরিয়াসই।
২১ বছর ৩৫৫ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন জ্যাক রুডলফ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে অভিষেকে অপরাজিত ২২২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অমন শুরুর পর খুব সমৃদ্ধ হয়নি তার ক্যারিয়ার। ৪৮ টেস্ট খেলে ৬ সেঞ্চুরি নিয়ে অবসরে গেছেন তিনি।
সর্বকনিষ্ঠ (৩)
শুধু অভিষেকেই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ১৩৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সব মিলিয়েই সবচেয়ে কম বয়সী সেঞ্চুরিয়ান প্রিটোরিয়াস।
তার আগে রেকর্ডটি ছিল আরেক বাঁহাতির, যাকে মনে করা হয় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত ‘পোলক’ পরিবারের উজ্জ্বল প্রতিনিধি গ্রায়েম পোলক ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৯ বছর ৩১৭ দিন বয়সে।
মাত্র ২৩ টেস্ট খেলেই ৭টি সেঞ্চুরি করেছিলেন পোলক। তার ব্যাটিং গড় ৬০.৯৭। অন্তত ২ হাজার রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের (৯৯.৯৪) পরই টেস্ট ইতিহাসের সেরা। কিন্তু বর্ণবাদের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা নিষিদ্ধ হওয়ায় তাকে আর দেখতে পায়নি টেস্ট ক্রিকেট।
টেস্ট ক্রিকেটে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়েই প্রিটোরিয়াসের চেয়ে কম বয়সে ফিফটি ছুঁতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার আর কেউ।
দ্রুততম (১)
১১২ বলে শতরান ছুঁয়েছেন প্রিটোরিয়াস। টেস্ট অভিষেকে যা দক্ষিণ আফ্রিকার দ্রুততম।
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্টিয়ান ফন জিলের ১২৯ বলের সেঞ্চুরি ছিল আগের দ্রুততম।
দ্রুততম (২)
১৫৭ বলে ১৫০ ছুঁয়েছেন প্রিটোরিয়াস। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম দেড়শ রানের ইনিংস এটি।
তিনি পেছনে ফেলেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৬২ বলে দেড়শ ছুঁয়েছিলেন প্রোটিয়া কিংবদন্তি।
দ্রুততম (৩)
অভিষেকে সবচেয়ে কম বলে দেড়শ ছোঁয়ার বিশ্বরেকর্ডে প্রিটোরিয়াস আছেন দুই নম্বরে। ছাড়াতে পারেননি কেবল তিনি শিখার ধাওয়ানকে।
২০১৩ সালে অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৭৪ বলে ১৮৭ রানের ইনিংসের পথে ১৩১ বলে দেড়শ ছুঁয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার।
দুই অভিষেকে সেঞ্চুরি
গত ডিসেম্বরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকে ওয়ারিয়র্সের হয়ে অভিষেকে ১২০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন প্রিটোরিয়াস। এবার করলেন টেস্ট অভিষেকে শতরান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও টেস্ট, দুটির অভিষেকেই সেঞ্চুরির কীর্তি আছেন ইতিহাসে কেবল আর তিনজন ক্রিকেটারের- ভারতীয় গ্রেট গুন্ডাপা বিশ্বানাথ, অস্ট্রেলিয়ার ডার্ক ওয়েলহ্যাম ও ভারতের পথ হারানো প্রতিভা পৃথ্বি শ।
রেকর্ড বন্ধন
আরেক অভিষিক্ত ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের সঙ্গে প্রিটোরিয়াসের জুটি ছিল ৯৫ রানের। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের সেরা জুটি এটিই।
দুই অভিষিক্তর আগের জুটির রেকর্ড ছিল ১৯৯২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্ড্রু হাডসন ও অ্যাড্রিয়ান কুপারের ৯২।
এবং ব্রেভিস
প্রিটোরিয়াসের কীর্তিময় দিনে একটি রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন ব্রেভিসও। টেস্ট অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্রুততম ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এখন তিনি।
৩৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন এ দিন তরুণ এই আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান ভেঙেছেন প্রায় ১২৩ বছর পুরোনো রেকর্ড। ১৯০২ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে অভিষেকে ৪০ বলে ফিফটি করেছিলেন ডেভ নার্স।
অভিষেকে দ্রুততম ফিফটির বিশ্বরেকর্ডে ব্রেভিস আছেন যৌথভাবে চারে।