Published : 02 Jul 2025, 11:56 PM
৯৪ থেকে জো রুটকে পরপর দুটি বাউন্ডারিতে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে হেলমেট খুলে হুঙ্কার ছাড়লেন শুবমান গিল। টেস্ট অধিনায়কত্বে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি উপহার দিলেন তিনি। সম্ভাবনা জাগিয়ে অল্পের জন্য শতক পেলেন না ইয়াশাসভি জয়সওয়াল। এজবাস্টন টেস্টে শক্ত ভিত পেয়ে গেল ভারত।
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম দিন শেষে ভারতের রান ৫ উইকেটে ৩১০। খেলা হয়েছে ৮৫ ওভার।
১২ চারে ২১৬ বলে ১১৪ রানে অপরাজিত আছেন গিল। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ভারতীয় তিনি। তার আগে ভিজায় হাজারে, সুনিল গাভাস্কার ও ভিরাট কোহলি পান এই স্বাদ।
গিলের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৯৯ রানের জুটিতে চল্লিশ পেরিয়ে খেলছেন রাভিন্দ্রা জাদেজা। ১৩ চারে ১০৭ বলে ৮৭ রান করেছেন জয়সওয়াল।
গিলের জন্য ম্যাচের শুরুটা যদিও সুখকর ছিল না। টস হারেন তিনি টানা দ্বিতীয় টেস্টে। নিজেদের ৫৯১ টেস্টের মধ্যে ৩০০টিতে টস হারল ভারত।
টেস্ট ইতিহাসে ভারতের আগে তিনশ বা এর বেশি ম্যাচে টস হেরেছে ইংল্যান্ড (১ হাজার ৮৬ ম্যাচের মধ্যে ৫৬৩টিতে) ও অস্ট্রেলিয়া (৮৭৫ ম্যাচের মধ্যে ৪৩৪টিতে)।
পাঁচ সেঞ্চুরির পরও ৫ উইকেটে হারা হেডিংলি টেস্ট থেকে এই ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন এনেছে ভারত। ওয়ার্কলোড ভাবনায় দলের বোলিং আক্রমণের মূল অস্ত্র জাসপ্রিত বুমরাহকে দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম। টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে সমালোচনাও হচ্ছে প্রচুর।
বুমরাহর জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন আকাশ দিপ। আগের টেস্টে অভিষিক্ত সাই সুদার্শান ও শার্দুল ঠাকুরকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে নিতিশ কুমার রেড্ডি ও ওয়াশিংটন সুন্দারকে।
উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া আছে কিছুটা। শুরুতে পেসারদের জন্য মুভমেন্টও মিলেছে খানিকটা। সেটা কাজে লাগিয়ে প্রথম স্পেলে দুর্দান্ত বোলিং করেন ক্রিস ওকস। অষ্টম ওভারে লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করে শুরুর জুটি ভাঙেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
তার প্রথম স্পেল ছিল ৭-৪-১৫-১।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হয়ে ওঠে উইকেট। দ্বিতীয় উইকেটে ৯০ বলে ৮০ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন জয়সওয়াল ও কারুন নায়ার। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিন নম্বরে সুযোগ পেয়ে থিতু হয়েও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি কারুন। ব্রাইডন কার্সের বাড়তি বাউন্সে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি (৫০ বলে ৩১)।
আট বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে টানা তিন ইনিংসে ব্যর্থ হলেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ততক্ষণে পঞ্চাশে পৌঁছে যান জয়সওয়াল। এ দিন তার শুরুটা ছিল মন্থর। একপর্যায়ে রান ছিল ৩৪ বলে ১৬, সেখান থেকে পরের ২৫ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা সাত টেস্টে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন তিনি। ভারতীয়দের মধ্যে তার আগে এই স্বাদ পান কেবল রাহুল দ্রাবিড়।
সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন জয়সওয়াল। কিন্তু মাইলফলক থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে বাজে শট খেলে ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বেন স্টোকসের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি।
ইনিংসের শুরুর দিকে জয়সওয়ালের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছিলেন স্টোকস। ভারতীয় ওপেনারকে ফিরিয়ে খ্যাপাটে উদযাপনে মাতেন ইংলিশ অধিনায়ক।
৩৯ ইনিংসে জয়সওয়ালের রান হলো ১ হাজার ৯৯০। পরের ইনিংসে ১০ রান করতে পারলে টেস্টে ভারতের হয়ে দ্রুততম ২ হাজার রানের রেকর্ড স্পর্শ করবেন তিনি। ৪০ ইনিংসে এই মাইলফলক ছুঁয়ে রেকর্ডটা যৌথভাবে রাহুল দ্রাবিড় ও ভিরেন্দার শেবাগের।
প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারানো ভারত পরের সেশনে হারায় কেবল একটি।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের স্কোর দুইশ পার করেন গিল ও রিশাভ পান্ত। প্রথম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা পান্ত এবার ইনিংস বড় করতে পারেননি। স্পিনার শোয়েব বাশিরকে বড় শট খেলার চেষ্টায় লং-অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার একটি করে চার ও ছক্কায় ৪২ বলে ২৫ রানের ইনিংস।
নিতিশকে টিকতে দেননি ওকস। বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন ২২ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
ভারতের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ২১১। সেখান থেকেই শুরু গিল ও জাদেজার লড়াই। বাকি দিনে আর কোনো বিপদ হতে দেননি তারা। দিনের শেষ ঘন্টায় ১৯৯ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)
ভারত ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ৩১০/৫ (জয়সওয়াল ৮৭, রাহুল ২, কারুন ৩১, গিল ১১৪*, পান্ত ২৫, নিতিশ ১, জাদেজা ৪১*; ওকস ২১-৬-৫৯-২, কার্স ১৬-২-৪৯-১, টং ১৩-০-৬৬-০, স্টোকস ১৫-০-৫৮-১, বাশির ১৯-০-৬৫-১, রুট ১-০-৮-০)