Published : 14 Jan 2024, 08:44 AM
আইপিএলে চোখধাঁধানো অঙ্কের পারিশ্রমিক যে প্রচণ্ড চাপও বয়ে আনে, তা ক্রিস মরিসের চেয়ে আর কে ভালো জানে! একবার-দুবার নয়, চার দফায় আইপিএলের নিলামের টেবিলে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি একবারও। এবার নিলামের টেবিলে রেকর্ড গড়া মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সকে সেই চাপের দিকটিই তুলে ধরলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার।
স্টার্ক-কামিন্সদের আগে একসময় আইপিএলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার ছিলেন মরিস। তবে নিলামে তার তোলপাড় ফেলে দেওয়ার শুরু আরও আগে। ২০১৩ সালে যখন চেন্নাই সুপার কিংস তাকে দলে নেয়, ক্রিকেট বিশ্বে তখনও তিনি খুব একটা পরিচিত নন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তখন স্রেফ ১টি টি-টোয়েন্টি তিনি খেলেছেন। কিন্তু তাকে ৬ লাখ ২৫ হাজার ডলারে দলে নেয় চেন্নাই, যা ছিল তার ভিত্তিমূল্যের ৩১ গুণ!
২০১৬ সালের নিলামে দিল্লি ডেয়ার ডেভিলস তাকে দলে নেয় ৭ কোটি রুপিতে। ২০২০ আসরের নিলামে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু তাকে নেয় ১০ কোটি রুপিতে। এরপর ২০২১ সালের নিলামে তিনি ছাড়িয়ে যান সব সীমানা। ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে তাকে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস, সেই সময় যা ছিল নিলামের রেকর্ড।
সেবারের আইপিএলে রাজস্থানের হয়ে ১১ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিতে পারেন তিনি, ওভারপ্রতি রান খরচ করেন ৯.১৭। ব্যাট হাতে ৭ ইনিংসে করতে পারেন স্রেফ ৬৭ রান।
আইপিএলে ৮ মৌসুম খেলে দারুণ কিছু করতে পারেননি তিনি কোনো মৌসুমেই। ২০১৬ ও ২০১৭ আসরেই স্রেফ একটু বলার মতো পারফরম্যান্স ছিল তার। তার পরও দলগুলি বারবার তার পেছনে ছুটেছে মূলত পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে তার সামর্থ্যের কারণে। ডেথ ওভারে তার বোলিং বিশেষ উপযোগী মনে করা হতো। ব্যাট হাতেও শেষের দিকে ঝড় তোলার সামর্থ্য ছিল তার।
বিভিন্ন সময়ে নিজের সেই সামর্থ্য দেখিয়েছেনও মরিস। কিন্তু আইপিএলে পেরেছেন কম সময়ই। সেটির মূল কারণ মনেকরা হয়েছে, প্রত্যাশার চাপে তিনি ভেঙে পড়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে সাবেক এই অলরাউন্ডার বললেন, সেই চাপের সঙ্গে এবার লড়তে হবে স্টার্ক-কামিন্সদের।
“এটা দুর্দান্ত ব্যাপার। বিডিং তো আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ক্রিকেটের সঙ্গে যদি অন্য খেলাগুলোর তুলনা করুন, তাহলে এখন এটা দারুণ ব্যাপার যে খেলাটার সেরা তারকারা এখন এত অর্থ পাচ্ছে। এটা অসাধারণ ব্যাপার, তবে এত পারিশ্রমিক বাড়তি চাপও বয়ে আনে।”
“অবশ্য সেই চাপ সামাল দেওয়ার সামর্থ্য তাদের আছে। সেটা আছে বলেই তাদেরকে এতটা টাকা দিয়ে দলে নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে তারা দুর্দান্ত পারফর্ম করছে এবং তাদের চাহিদা তুঙ্গে।”
২০২১ আসরের পর মরিসকে আর ধরে রাখেনি রাজস্থান। পরে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে স্রেফ ৩৪ বছর বয়সেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে কোচিংয়ে নাম লেখান এই অলরাউন্ডার।
মরিসের রেকর্ড ভেঙে ২০২৩ আসরে ১৮ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কারানকে দলে নেয় পাঞ্জাব কিংস। তিনিও পারেননি প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে।
এবার কামিন্স ও স্টার্ক ছাপিয়ে গেছেন অতীতের সবকিছু। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার ২০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ হয় কামিন্সকে দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে দলে নেয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সেই রেকর্ড টেকেনি বেশিক্ষণ। ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে মিচেল স্টার্ককে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স।
এবারের আসরে দুই অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের সামনে চ্যালেঞ্জ অবিশ্বাস্য অঙ্কের এই পারিশ্রমিকের প্রতিদান দেওয়ার।