Published : 28 Jun 2025, 10:53 PM
আনকোরা দল নিয়ে প্রায় ১১ বছর পর জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম দিনটা দুর্দান্ত কাটল দক্ষিণ আফ্রিকার। টেস্ট অভিষেকে দেড়শ ছাড়ানো দুর্দান্ত ইনিংস খেলে একাধিক রেকর্ডে নাম লেখালেন তরুণ ব্যাটিং সেনসেশন লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস। আরেক অভিষিক্ত ডেওয়াল্ড ব্রেভিস করলেন ঝড়ো ফিফটি। আট নম্বরে নেমে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে অসাধারণ সেঞ্চুরি উপহার দিলেন কর্বিন বশ। প্রথম দিনেই চারশ ছাড়িয়ে গেল প্রোটিয়ারা।
বুলাওয়ায়োতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের শুরুর দিন একপর্যায়ে ৫৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে তারা দিন শেষ করেছে ৯ উইকেটে ৪১৮ রানে। ওভারপ্রতি রান তুলেছে ৪.৬৪ করে।
১৯ বছর ৯৩ দিন বয়সে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হয়ে গেছেন প্রিটোরিয়াস। ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ১৬০ বলে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনি ভেঙে দিয়েছেন ১৯৬৪ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা গ্রায়েম পোলকের রেকর্ড (১৯ বছর ৩১৭ দিন)।
টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসের রেকর্ডও গড়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ১৯৭৬ সালে টেস্ট অভিষেকে লাহোরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ (১৯ বছর ১১৯ দিন)।
স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি করে বশ অপরাজিত আছেন ১০ চারে ১২৪ বলে ১০০ রানে। আট নম্বরে বা এর নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের ১৩তম সেঞ্চুরি এটি। বশের আগে সবশেষ ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে আটে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন জেপি দুমিনি।
আটে নেমে দুটি করে সেঞ্চুরি আছে দেশটির এরিক ডাল্টন ও মার্ক বাউচারের। ৯ নম্বরে নেমে দুটি শতক আছে শন পোলোকের।
সম্প্রতি লর্ডসের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ২৭ বছরের আইসিসি ট্রফি খরা কাটানোর পর এই প্রথম টেস্ট খেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম্বাবুয়ে সিরিজটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয়। নিয়মিত ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অনেককেই দুই ম্যাচের এই সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে প্রোটিয়ারা।
টেম্বা বাভুমার চোটে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেশাভ মহারাজ, ৫৯তম টেস্ট খেলতে নেমে এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও তিনিই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬তম টেস্ট খেলতে নেমেছেন কিপার-ব্যাটসম্যান কাইল ভেরেইনা।
প্রিটোরিয়াস ও ব্রেভিসের সঙ্গে শনিবার টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার কোডি ইউসুফও।
কুইন্স স্পোর্টস ক্লাবের উইকেটে ঘাস আছে কিছুটা। সকালের আর্দ্রতা ও মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন জিম্বাবুয়ের পেসাররা।
প্রথম ওভারে জীবন পেয়েও শূন্য রানে ফেরেন টনি ডি জর্জি। থিতু হয়ে ইনিংস টেনে নিতে পারেননি আরেক ওপেনার ম্যাথু ব্রিটস্কি (৪৫ বলে ১৩)। চারে নেমে রানের দেখা পাননি ডেভিড বেডিংহ্যাম। তিন জনই পেসার তানাকা চিভাঙ্গার শিকার।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দল প্রথম ঘন্টায় ২৩ রানেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। ভিয়ান মুল্ডারের (৪৭ বলে ১৭) রান আউটে সেই স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৫৫। অল্পে গুটিয়ে যাওয়ার চোখ রাঙানি তখন সফরকারীদের সামনে।
সেখান থেকেই লড়াই শুরু পাঁচ ও ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান প্রিটোরিয়াস ও ব্রেভিসের। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান দারুণ প্রতিভাবান দুই ব্যাটসম্যান।
৩০ রানে প্রিটোরিয়াসের কট বিহাইন্ডের জোরাল আবেদন করেছিল জিম্বাবুয়ে। সাড়া দেননি আম্পায়ার। ব্যাটসম্যানও ক্রিজ ছেড়ে যাননি। কিছুই করার ছিল না জিম্বাবুয়ের, ডিআরএস নেই যে এই সিরিজে! দিনের সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনাও এটিই।
৩৩ থেকে লেগ স্পিনার ভিনসেন্ট মাসেকেসার চার বলের মধ্যে তিনটি ছক্কায় ৩৮ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ব্রেভিস। টেস্ট অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দ্রুততম ও সব দল মিলিয়ে যৌথভাবে চতুর্থ দ্রুততম ফিফটি এটি।
আগ্রাসী শট খেলার চেষ্টাতেই আউট হয়ে যান ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান, ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ৪১ বলে করেন ৫১ রান।
বিস্ফোরক পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে ৯৫ বলে ৮৮ রান।
সাতে নেমে ভেরেইনা টিকতে পারেননি। এরপরই প্রিটোরিয়াস ও বশের ব্যাটে ইনিংসের একমাত্র শতরানের জুটি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে আলোড়ন ফেলে দেওয়া প্রিটোরিয়াস ৫৩ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১১২ বলে। দেড়শ ছুঁয়ে ফেলেন ১৫৭ বলে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে টেস্টে দ্রুততম দেড়শ ছোঁয়ার রেকর্ড এটি। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে ১৬২ বলে দেড়শ ছুঁয়ে রেকর্ডটি এতদিন ছিল এবি ডি ভিলিয়ার্সের।
চিভাঙ্গাকে পুল করার চেষ্টায় শেষ হয় প্রিটোরিয়াসের দুর্দান্ত ইনিংসটি। সপ্তম উইকেট জুটিতে ১০৮ রান আসে ১৩৬ বলে।
বশ চালিয়ে যান লড়াই। অষ্টম উইকেটে মহারাজের (৩০ বলে ২১) সঙ্গে ৫৪ বলে ৪১ ও নবম উইকেটে অভিষিক্ত ইউসুফের (৪৯ বলে ২৭) সঙ্গে ৭০ বলে ৫৯ রানের জুটি গড়ে এগিয়ে যান তিনি।
নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইউসুফ যখন আউট হন, সেঞ্চুরি থেকে তখনও ১৬ রান দূরে বশ। এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান কিউনা মাফাকাকে সঙ্গে নিয়ে দিনের শেষ ওভারে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
চিভাঙ্গার ওই ওভারে ৯৭ রানে আউট হতে পারতেন বশ, কিন্তু ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার টাফাডজোয়া সিগা। জীবন পেয়ে দুই রান নিয়ে পরের বলেই তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ৩০ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
গত ডিসেম্বরে অভিষেক টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়নে অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বশ। এবার দ্বিতীয় টেস্টেই পেয়ে গেলেন প্রথম সেঞ্চুরি।
দিনের শেষ বলে ছক্কা মেরে দক্ষিণ আফ্রিকার দাপুটে দিনের চিত্রটাই যেন তুলে ধরেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা ১৯ বছর বয়সী পেসার মাফাকা।
অবিচ্ছিন্ন শেষ জুটির রান ২৯।
৮৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রথম দিন জিম্বাবুয়ের সফলতম বোলার চিভাঙ্গা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৪১৮/৯ (ডি জর্জি ০, ব্রিটস্কি ১৩, মুল্ডার ১৭, বেডিংহ্যাম ০, প্রিটোরিয়াস ১৫৩, ব্রেভিস ৫১, ভেরেইনা ১০, বশ ১০০*, মহারাজ ২১, ইউসুফ ২৭, মাফাকা ৯*; মুজারাবানি ২০-৭-৫৯-২, মাসাকাদজা ৩০-২-১০৯-১, চিভাঙ্গা ১৬-২-৮৩-৪, মাসেকেসা ১৩-১-৯৭-১, বেনেট ৯-০-৪৬-০, মাধেভেরে ২-০-১০-০)
পোলকের ৬১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে প্রোটিয়াদের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান প্রিটোরিয়াস