Published : 14 May 2025, 08:10 PM
শরীর বরাবর আসা শর্ট বল পুল করলেন আকবর আলি। কিন্তু শটে জোর হলো না যথেষ্ট, বল মুঠোয় জমালেন সীমানায় থাকা ফিল্ডার। গ্যালারির পিনপতন নীরবতা আর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের উল্লাসই বলে দিচ্ছিল, কতটা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট! স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেও আকবর মাঠ ছাড়লেন মাথা নিচু করে। যদিও জয় তখন নাগালেই। কিন্তু অধিনায়কের বিদায়ের পর ভেঙে পড়ল বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের ব্যাটিং লাইন আপ।
আকবর ফেরার পর ৫ উইকেট নিয়ে প্রয়োজন ছিল ৩০ বলে ৪২ রান। চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান, মাহফুজুর রহমান রাব্বিরা সেই সমীকরণ মেলাতে পারেননি। ৩১ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় দল।
রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলকে ১০ রানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দল। ৩৩৩ রানের লক্ষ্যে এক পর্যায়ে দারুণ সম্ভাবনা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ৩২২ রানে গুটিয়ে যায় আকবরের দল।
ঘুরে দাঁড়ানো জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ফেরাল প্রোটিয়ারা। একই মাঠে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ শুক্রবার।
প্রথম ম্যাচে ২৪ বলে ৪১ রান করে বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান রাখেন আকবর। বুধবার তিনি হতে পারতেন দারুণ এক জয়ের নায়ক। পাঁচ নম্বরে নেমে চমৎকার ব্যাটিংয়ে করেন ১১০ বলে ১৩১ রান। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতায় বিফলে যায় তার ১১০ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কার ইনিংস।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৯২ ম্যাচ খেলেও তার সেঞ্চুরি নেই। এই ম্যাচটিও কোনো স্বীকৃত ক্রিকেট নয় বলে সেই খরা রয়েই যাচ্ছে। তবে যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে তার সেরা ইনিংসগুলোর একটি নিশ্চিতভাবেই।
রাজশাহীর ব্যাটিং স্বর্গে বড় রান তাড়ায় প্রথম ওভারে দুটি চার দিয়ে শুরু করেন মাহফিজুল ইসলাম। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আগের ম্যাচের নায়ক। ১০ রান করে ফেরেন ২১ বছর বয়সী ওপেনার। তিন নম্বরে নেমে ব্যর্থ রায়ান রাফসান রহমানও।
তবে আরেক ওপেনার জিসান আলম ঝড় তোলেন। চতুর্থ বল ছক্কায় উড়িয়ে রানের খাতা খোলেন তিনি। এক বল পর মারেন বাউন্ডারি। একই ছন্দে এগিয়ে মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন তরুণ ওপেনার।
তার রোমাঞ্চকর যাত্রা শেষ হয় পঞ্চাশ ছুঁয়েই। সীমানায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫০ রান করা ওপেনার।
৮৪ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের ভার বয়ে নেন। শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আগের ম্যাচের মতোই মন্থর ব্যাটিংয়ে পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারছিলেন না আরিফুল ইসলাম।
তবে জুটি গড় ওঠে। দুজনের জুটিতে ১০২ বলে আসে ১১১ রান। যেখানে আরিফুলের অবদান ছিল ৪১ বলে মাত্র ২৮ রান!
আরিফুলের ইনিংস থামে দলের দুইশ হওয়ার আগেই। ৩৫ রান করতে তিনি খেলেন ৫৯ বল।
এরপর চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে দলকে আরও এগিয়ে নেন আকবর। ৫০ বলে ফিফটি ছুঁয়ে রানের গতি আরও বাড়ান ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৮ চারে পরের পঞ্চাশ করতে তার লাগে আর মাত্র ৩৫ বল।
সেঞ্চুরি ছুঁয়েই থামেননি স্বাগতিক অধিনায়ক। রিজওয়ানের সঙ্গে জুটিতে দলকে নিয়ে যান তিনশর কাছে। এরপর সেই পুল শটে বাজে বিদায়ঘণ্টা। সমাপ্তি ঘটে ৯৬ রানের পঞ্চম উইকেট জুটির।
পরের ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন রিজওয়ান। তোফায়েল আহমেদের চোটে স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া পেস বোলিং অলরাউন্ডার ৪১ বলে করেন ৩৭ রান। পরে রাব্বি, শেখ পারভেজ, ওয়াসি সিদ্দিকিরা হতাশ করায় জয় পাওয়া হয়নি স্বাগতিকদের।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৫৬ রানে ৫ উইকেট নেন আন্দিলে সিমেলানে। আকবকে ছাপিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলা ২১ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
ম্যাচের প্রথমভাগে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে পঞ্চাশের আগে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেয় বাংলাদেশ। দুটি উইকেটই নেন রাব্বি।
তৃতীয় উইকেটে পাল্টা আক্রমণ করেন কনর এস্তেহেইজেন ও আন্দিলে মোগাকেন। দুজন মিলে ১১৯ বলে যোগ করেন ১৩৭ রান। ৬৩ বলে ৫৫ রান করা মোগাকেনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মারুফ মৃধা।
সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও পারেননি দারুণ খেলতে থাকা এস্তেহেইজেন। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৮ বলে ৯১ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তিনি।
একটু বিপাকে পড়ে যাওয়া প্রোটিয়াদের ইনিংস আবার গতিময় করেন ডিয়ান ফরেস্টার। যদিও আউট হতে পারতেন তিনি ১ রানেই। মারুফ মৃধার বলে শর্ট মিড উইকেটে তার ক্যাচ ছাড়েন আরিফুল। জীবন পেয়ে বাংলাদেশকে খেসারত বুঝিয়ে দেন এই বাঁহাতি। ৭ চার ও ৬ ছক্কায় ৫৯ বলে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে সাড়ে তিনশর কাছে নিয়ে যান পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
পরে আকবরের চোখরাঙানি থামিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই পুঁজি নিয়ে জয়ের আনন্দে ম্যাচ শেষ করে প্রোটিয়ারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং: ৫০ ওভারে ৩৩২/৭ (জুমা ১১, প্রিন্স ৩০, মোগাকেন ৫৫, এস্তেহেইজেন ৯১, ফরেস্টার ৯৬*, হিয়ারডিন ১২, মারাইস ১০, সিমেলানে ১৩, পিল্লে ১*; রিপন ৮-০-৫৬-২, মারুফ ৮-০-৬৫-২, রাব্বি ১০-০-৭৫-২, পারভেজ ১০-০-২৭-০, ওয়াসি ৫-০-৩৫-০, রিজওয়ান ২-০-২০-১, জিসান ৬-০-৩৩-০, রাফসান ১-০-১২-০)
বাংলাদেশ ইমার্জিং: ৪৯.৪ ওভারে ৩২২ (মাহফিজুল ১০, জিসান ৫০, রাফসান ৯, আরিফুল ৩৫, আকবর ১৩১, রিজওয়ান ৩৭, রাব্বি ১১, পারভেজ ১, ওয়াসি ৩, রিপন ৪*, মারুফ ০; মোকোয়েনা ৮-০-৫২-৩, সিমেলানে ৮.৪-০-৫৬-৫, এনটুলি ৯-০-৫৬-২, ফরেস্টার ৬-০-৪৩-০, পিল্লে ৮-০-৪৫-০, হিয়ারডিন ৭-০-৪৭-০, মোগাকেন ৩-০-২০-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং ১০ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজ ১-১ সমতায়
ম্যান অব দা ম্যাচ: আন্দিলে সিমেলানে