Published : 21 Apr 2025, 05:21 PM
স্লিপে যেভাবে সাদমান ইসলামের হাত থেকে ফসকে গেল বল, চেষ্টা করেও হয়তো এমন ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া কঠিন! তাইজুল ইসলাম এ দিন বল হাতে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। যা একটি উইকেট তিনি পেতে পারতেন, সেটিও হলো না। এটিকে অবশ্য নিয়তির খেলাও বলতে পারেন কেউ। উইকেটটি মেহেদী হাসান মিরাজ নেবেন, এটা যেন নিয়তির লিখনই ছিল!
সেই চিত্রনাট্যের মঞ্চায়নই দেখা গেল একটু পর। মিরাজকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় নিয়াউচির টাইমিংয়ে গড়বড়। ক্যাচ নিলেন সেই তাইজুল। জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষ হলো। মিরাজের ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরেকটি প্রাপ্তি। আরও একবার ৫ উইকেট!
জিম্বাবুয়ে যখন পঞ্চম উইকেট হারায়, তখনও কোনো উইকেটের দেখা পাননি মিরাজ। কিন্তু শেষ পাঁচ উইকেট শিকার করলেন তিনি একাই। তার সৌজন্যেই আরও বড় হলো না জিম্বাবুয়ের লিড।
এই নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে একাদশবার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই অফ স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে এই কীর্তি বেশি আছে আর কেবল দুজনের- সাকিব আল হাসান (১৯ বার) ও তাইজুল ইসলাম (১৫ বার)।
এই পাঁচ উইকেটে আরও একটি অর্জনে সাকিব-তাইজুলদের সঙ্গী হওয়ার দিকে পাঁচ ধাপ গেলেন মিরাজ। বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে ২০০ টেস্ট উইকেট হতে তার প্রয়োজন আর পাঁচ উইকেট।
খুব আহামরি বোলিং অবশ্য করেননি মিরাজ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তাও ছিল না তেমন। তবে শুরুটা ভালো করতে না পারলেও পরে মৌলিক কাজগুলি ঠিকঠাক করে গেছেন ২৭ বছর বয়সী স্পিনার। লাইন-লেংথ আঁটসাঁট রেখেছেন, বোলিং ক্রিজ ব্যবহার করা আর গতি বৈচিত্রের চেষ্টা করেছেন। তাতেই মিলেছে উইকেট। আলগা শট খেলে তাকে উইকেট নেওয়ায় সহায়তা করেছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরাও।
তার পাঁচ উইকেটের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি, বাংলাদেশের জন্য যা ছিল সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত, সেই উইকেটই মিরাজ পেয়েছেন উপহার।
মাত্রই তখন লিড পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। উইকেট বাকি ৫টি। দৃষ্টি তাদের বড় লিডের দিকে। ভরসা তখন শন উইলিয়ামসের ব্যাটে। আগের ছয় টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান এ দিনএ খেলছিলেন দারুণ। বাংলাদেশের কোনো বোলারই তাকে তেমন কোনো বিপাকে ফেলতে পারছিলেন না। হঠাৎ করেই তিনি হয়ে উঠলেন আত্মঘাতী। আচমকা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করলেন। মিরাজ সেটি বুঝেই একটু ঝুলিয়ে ও টেনে দিলেন বল। ৫৯ রান করা ব্যাটসম্যান ধরা পড়লেন লং অফে।
নিয়াশা মায়াভোও দারুণ খেলছিলেন। পেস-স্পিন দুটিতেই বেশ সাবলিল ছিলেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা কিপার-ব্যাটসম্যান। তাকেও ভুলের পথে ঠেলে দেন মিরাজ। ৩৫ রানে সুইপ করার চেষ্টায় উইকেট হারান ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
বেশ কিছুক্ষণ একপ্রান্ত আগলে রাখা ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকেও ফেরান মিরাজ। দশে নেমে বেশ যন্ত্রণা দেওয়া ব্লেসিং মুজারাবানির ইনিংস থামে তার বলেই। বেশ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পিং করেন জাকের আলি।
সেই চার উইকেটেই তাকে থামতে হতো, যদি তাইজুলের বলে সহজতম ক্যাচটি নিতে পারতেন সাদমান। কিন্তু সেটা হয়নি। মিরাজও পেয়ে গেছেন পাঁচের দেখা।
৮০ ওভার শেষ হতেই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। লাল চকচকে বলে জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেটটি নিতে মিরাজের লাগে স্রেফ দুই বল।
জিম্বাবুয়ের লিড থামে ৮২ রানে।
খুব কম লিড নয় এটি। আরও অন্তত ৩০-৩৫ কম রানে জিম্বাবুয়েকে আটকে রাখলে হয়তো বাংলাদেশে স্বস্তি আরেকটু বেশি হতো। তবে মিরাজ না থাকলে লিড তো আরও বেশিও হতে পারত!
পাঁচ উইকেট পূর্ণ হতেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ছুটে গিয়ে হাসিমুখে পিঠ চাপড়ে দিলেন তার। তিনি তো জানেন, ম্যাচর প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে মিরাজের এই বোলিং পারফরম্যান্স!