Published : 05 Sep 2022, 12:18 PM
ফখর জামানকে হারিয়ে তখন কিছুটা চাপে পাকিস্তান। রান রেটও খুব সুবিধের নয়। তখনই তারা বেছে নিল চমকপ্রদ এক পদক্ষেপ। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে ওপরে তুলে আনা হলো মোহাম্মদ নওয়াজকে। সেটিই হয়ে গেল পাকিস্তানের ‘মাস্ট্রারস্টোক।’ সুযোগ পেয়ে এই অলরাউন্ডার দারুণ এক ক্যামিও খেলে ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের মোড়। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বাবর আজম খোলাসা করলেন, কোন ভাবনা থেকে নওয়াজকে ওপরে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচ ছিল এটি। দুবাইয়ে রোববার ভারতের ১৮১ রান তাড়ায় ফখর যখন আউট হন, পাকিস্তানের রান নবম ওভারে ২ উইকেটে ৬৪। বোলিং করছিলেন তখন লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেল। ভালো বোলিং করছিলেন আরেক লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণই।
ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী তখন নামার কথা ইফতিখার আহমেদের। কিংবা নামতে পারতেন খুশদিল শাহও। কিন্তু পাকিস্তান নামিয়ে দেয় নওয়াজকে।
এমনিতে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে নওয়াজ ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার। বাঁহাতি স্পিন করার পাশাপাশি ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে। পিএসএলেও ওপরে ব্যাট করেন অনেক। তবে জাতীয় দলে তাকে মূলত স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবেই দেখা হয়েছে। টেস্ট যে কটি খেলেছেন, সাত-আট নম্বরের ওপরে ব্যাট করতে পারেননি। ওয়ানডেতে একটিতে ছয়ে ব্যাট করলেও বাকি সব সাত-আটে। টি-টোয়েন্টিতে প্রায় চার বছর আগে একটি ম্যাচে তিনে নামানো হয়েছিল, এছাড়া সব ছয় থেকে নিচে।
এবার চারে নেমে তিনি দেখালেন তার ব্যাটিং ঝলক। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ২০ বলে ৪২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে খেলার চিত্রই বদলে দিলেন তিনি। মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে তার ৪১ বলে ৭৩ রানের জুটি পাকিস্তানকে এগিয়ে নিল জয়ের পথে।
নওয়াজ আউট হওয়ার পরেও নাটক জমে বেশ। রোমাঞ্চের নানা গলি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতে জিতে যায় পাকিস্তান। তবে জয়ের মূল নায়ক নওয়াজই। ওই ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বল হাতে ৪ ওভারে স্রেফ ২৫ রান দিয়ে সূর্যকুমার যাদবের মহামূল্য উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যান অব দা ম্যাচ।
ম্যাচের পর বাবর বললেন, ভারতের দুই লেগ স্পিনারকে ভাবনায় রেখেই তিনি বাঁহাতি নওয়াজকে ওপরে নামান শট খেলার জন্য।
“আজকে আমি ভালো করতে পারিনি, তবে নওয়াজ ও রিজওয়ানের জুটি ছিল অসাধারণ। নওয়াজকে নামানোর কারণ, আমার মনে হচ্ছিল সে গিয়ে দ্রুত রান তুলতে পারবে। দুই লেগ স্পিনার বোলিং করছিল তখন। সে দারুণ খেলেছে।”
উইকেটে যাওয়ার পরপরই চেহেলকে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন নওয়াজ। পরে ছক্কা মারেন বিষ্ণইকে। চেহেলের আরেক ওভারে মারেন টানা দুটি চার। লেগ স্পিনারদের জন্য তাকে নামানোর ফাটকা কাজে লেগে যায় দারুণভাবে। তবে স্পিনেই শুধু নয়। হার্দিক পান্ডিয়ার পেসেও চোখধাঁধানো এক শটে বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন তিনি। পান্ডিয়াকে পরে বাউন্ডারি মারেন ওভারে দুটি।
ম্যাচ শেষে নওয়াজ বলেন, তাকে মেরে খেলার জন্যই বলা হয়েছিল দল থেকে।
“অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্ট কিছু ভেবেই আমাকে চারে পাঠিয়েছিল। আমি যখন যাই, ওভারপ্রতি ১০ রান করে লাগে। কাজেই কাজটা আমার জানা ছিল। আমার ভাবনা পরিষ্কার ছিল যে গিয়ে মারতে হবে। আমি সেই চেষ্টাই করেছি।”
“আমি চেয়েছি, কাজটা সিম্পল রাখতে। এরকম পরিস্থিতিতে চাপের মধ্যে অনেকে জোর করে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে আরও ভুল করে বসে। আমি ঠিক করেছিলাম, সিম্পল থেকে নিজের জোনে বল পেলে মেরে দেব।”