Published : 02 Apr 2025, 03:00 PM
১, ৩, ১, ৫, ৯- টেলিফোনের ডিজিট নয়, পাকিস্তানের প্রথম পাঁচ ব্যাটনসম্যানের রান। ছয়ে নামা তাইয়াব তাহির দু অঙ্ক স্পর্শ করতে পারলেন। তবে তিনিও বিদায় নিলেন ১৩ রানেই। ম্যাচ কার্যত তখনই শেষ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নেমে ফাহিম আশরাফ লড়াই করলেন। কনকাশন সাব হিসেবে ১১ নম্বরে নেমে ফিফটি করলেন নাসিম শাহ। তাতে পাকিস্তানের পরাজয়ের ধরন একটু ভদ্রস্থ হলো। তবে বড় জয়ে সিরিজ জিতে গেল দ্বিতীয় সারির নিউ জিল্যান্ড।
পাকিস্তানের মতো না হলেও নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংও ছিল কিছুটা নড়বড়ে। সাতে নেমে সাতটি করে ছক্কা ও চারে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে টেনে তুললেন মিচেল হে। তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৪ রানের জয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করল কিউইরা।
হ্যামিল্টনে বুধবার নিউ জিল্যান্ড ৫০ ওভারে তোলে ২৯২ রান। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ওয়ানডে খেলতে নামা মিচেল হে অপরাজিত থাকেন ৭৮ বলে ৯৯ রান করে।
ওয়ানডে ইতিহাসে সাতে নেমে ৯৯ রানের ইনিংস আছে আর কেবল নিউ জিল্যান্ডেরই সাবেক কিপার-ব্যাটার ও এখনকার দলের ব্যাটিং কোচ লুক রনকির।
রান তাড়ায় শুরুতেই ছিটকে পড়া পাকিস্তান ফাহিম আর নাসিমের ব্যাটে শেষ পর্যন্ত করতে পারে ২০৮।
ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে উইকেটশূন্য থাকা কিউই পেসার বেন সিয়ার্স তৃতীয় ওয়ানডেতেই স্বাদ পেয়ে যান ৫ উইকেটের।
আইপিএল ও অন্যান্য কারণে এমনিতেই একগাদা ক্রিকেটার নেই নিউ জিল্যান্ডের। প্রথম ওয়ানডেতে খেলা উইল ইয়াং ও সেই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মার্ক চ্যাপম্যানও ছিলেন না দ্বিতীয় ম্যাচে। তার পরও দারুণ খেলে ম্যাচ জিতে সিরিজও জিতে গেল কিউইরা।
সেডন পার্কে টস জিতে বোলিং নেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু পাকিস্তানি পেসারদের পাত্তা না দিয়ে ৬ ওভারে ৫০ তুলে ফেলে নিউ জিল্যান্ডের আনকোরা দুই ওপেনার।
দুজনের কেউ অবশ্য ইনিংস বড় করতে পারেননি। দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা নিক কেলি বিদায় নেন ২৩ বলে ৩১ রান করে। অভিষিক্ত রিস মাইরু ফেরেন ১৮ রানে।
পরের তিন ব্যাটসম্যানের চিত্রটাও একই। থিতু হয়েও আউট হয়ে যান হেনরি নিকোলস (২২), ড্যারিল মিচেল (১৮) ও অধিনায়ক মাইকেল ব্রেসওয়েল (১৭)।
১৩২ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধার করেন মুহাম্মাদ আব্বাস ও মিচেল হে। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৮০ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।
আগের ম্যাচে অভিষেকে ঝড়ো ফিফটির রেকর্ড গড়া আব্বাস এবার পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে উল্টো ধরনের ব্যাটিং করেন। ৩০ ওভার শেষ তার রান ছিল ৪৫ বলে ১৬। পরে রানের গতি একটু বাড়ালেও আউট হয়ে যান ৬৬ বলে ৪১ রান করে।
এরপর লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে দলকে বলতে গেলে একটাই টেনে নেন হে। এক পর্যায়ে ৩৯ বলে তার রান ছিল ২০। শেষ দিকে ঝড় তোলেন ২৪ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটার।
শেষ ওভার শুরুর সময় তার রান ছিল ৭৭। ওই ওভারের প্রথম বলে তিনি নেন দুই রান, পরের বলে রান আসেনি। শেষ চার বলে দুটি করে ছক্কা ও চার মেরে তিনি অপরাজিত রয়ে যান ৯৯ রানে।
ওয়ানডেতে ৯৯ রানে অপরাজিত থাকার ষষ্ঠদশ নজির এটি। সাতে নেমে ৯৯ রানের ইনিংস ছিল ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রনকির।
হের তাণ্ডবে শেষ চার ওভারে ৪৪ রান তোলে কিউইরা।
সেই রান তাড়ায় পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। প্রথম ছয় ওভারের মধ্যে আউট হন তিন ব্যাটসম্যান। পরের ছয় ওভারের মধ্যে আরও দুটি। দলের রান তখন ৫ উইকেটে ৩২।
কিছুক্ষণ পর সেই রান হয়ে যায় ৭৩ রানে ৭ উইকেট। একাদশে ফেরা ফাহিম আশরাফ এরপর পাল্টা আক্রমণে কিছু রান বাড়ান। ছয় চার ও তিন ছক্কায় ৮০ বলে ৭৩ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে এর আগে ২৫ বার ব্যাট করে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২৮ রানের।
উইল ও’রোকের বাউন্সার ২৫তম ওভারে ছোবল দেয় হারিস রউফের হেলমেটে। তিনি মাঠ ছাড়ার পর তার কনকাশন বদলি নেমে নাসিম শাহ ব্যাটের ধার দেখান কিছুটা।
ফাহিম আশরাফ ও নাসিম শাহর জুটিতে আসে ৬০ রান। ফাহিমের বিদায়ের পর নাসিম আগ্রাসী খেলে শেষ পর্যন্ত আউট হন চারটি করে ছক্কা ও চারে ৪৪ বলে ৫১ রান করে।
শেষ দুই জুটিতে ৯৪ রান তুলে দুইশ ছাড়ায় পাকিস্তান।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫৪ বছরের ইতিহাসে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় ফিফটি এটি। আগেরটি করেছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮ বলে ৫৮।
এসব ব্যক্তিগত অর্জনকে অবশ্য দলের জন্য তেমন কোনো প্রাপ্তি ভাবার সুযোগ নেই। খর্বশক্তির নিউ জিল্যান্ডের কাছেই দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরে রিজওয়ানের দল হেরে গেল সিরিজ।
তাদের হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই শনিবার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৯২/৮ (মাইরু ১৮, কেলি ৩২, নিকোলস ২২, মিচেল ১৮, ব্রেসওয়েল ১৭, আব্বাস ৪১, হে ৯৯*, স্মিথ ৮, সিয়ার্স ৬, ডাফি ০*; ফাহিম ১০-০-৪৬-১, আকিফ ১০-০-৪৮-১, রউফ ১০-০-৭৫-১, ওয়াসিম ১০-০-৭৮-২, মুকিম ১০-১-৩৩-২ )।
পাকিস্তান: ৪১.২ ওভারে ২০৮ (শাফিক ১, ইমাম ৩, বাবর ১, রিজওয়ান ৫, সালমান ৯, তাহির ১৩, ফাহিম ৭৩, ওয়াসিম ১, রউফ ৩, আকিফ ৮, নাসিম ৫১, মুকিম ১৩*; ও’রোক ৮-১-১৯-১, ডাফি ৮-১-৩৫-৩, সিয়ার্স ৯.২-০-৫৯-৫, স্মিথ ১০-১-৫৩-১, ব্রেসওয়েল ৬-০-২৯-০)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮৪ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : মিচেল হে।