Published : 19 May 2025, 08:26 PM
চারদিকে তখন মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি, কাকে বিশ্বাস করবেন, কোনটা বিশ্বাস করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না মইন আলি। ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের সময় মইন ও তার পরিবার ভাগ হয়ে ছিলেন দুই দেশে। এতে উদ্বেগও ছিল বেশি। বাবা-মা ছিলেন পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে, আর আইপিএলে খেলার জন্য ইংলিশ অলরাউন্ডার ছিলেন ভারতে। টুর্নামেন্টের বাকি অংশে আর খেলবেন না তিনি। ইংল্যান্ডে বসে এক পডকাস্টে বিস্তারিত বললেন সেই সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে।
অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের যে অংশে ভারত হামলা চালায়, ঘণ্টা খানেক আগেও এর আশেপাশেই ছিলেন মইনের বাবা-মা। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে নিরাপদে সরে যান তারা এবং দিনের একমাত্র ফ্লাইটে পাকিস্তান ছাড়েন।
৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার ফের শুরু হয়েছে আইপিএল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সময়ের অভিজ্ঞতা মইনকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেছে।
“সেই সময়ে আমার বাবা-মা কাশ্মীরে ছিলেন, পাকিস্তানে। যেখানে মিসাইল আঘাত হেনেছিল, এর ঘণ্টাখানেক দূরত্বে তারা ছিলেন। হয়তো এর চেয়ে একটু বেশি। সময়টা ছিল অস্থির এবং এরপর তারা সেখান থেকে দিনের একমাত্র ফ্লাইট ধরে চলে আসেন। আমি খুশি যে তারা সেখান থেকে চলে আসতে পারেন, সময়টা ছিল কঠিন।”
এরপর নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন মইন।
“সবকিছু মিলে পাগলাটে একটা সময় ছিল, অবশ্যই কাশ্মিরে হামলা থেকেই সব কিছুর সূত্রপাত। এরপর চোখের পলকে সব কিছু ঘটতে লাগল এবং হঠাৎ করে আমরা এর মাঝে চলে এলাম। আমার মনে হয়েছিল, আমরা যেন যুদ্ধের মধ্যে আছি। অবশ্য আমরা (মিসাইল আক্রমণের মতো) কোনো শব্দ শুনিনি। হুট করেই দেশটি ছাড়ার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম, নিশ্চিত করতে চাইছিলাম, পরিবার নিরাপদে আছে।”
ধারামশালায় পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মাঝপথে। পরে টুর্নামেন্ট স্থগিত করা হয় এক সপ্তাহের জন্য। মইন বললেন, সেই সময়টায় সবকিছু খুব অনিশ্চিত লাগছিল তাদের কাছে।
“মানুষ নিশ্চিত ছিল না, ঠিক কী ঘটছে, ঘটনা আসলে কী। অনেকের সঙ্গে তখন আমি কথা বলেছিলাম, তাদের কেউ বলছিল, ‘কোনো যুদ্ধ হবে না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আগেও এমন হয়েছে।’ আবার কেউ বলছিল, ‘আমার মনে হয়, যুদ্ধ হবেই। আমার মনে হয়, এক ধরনের প্রতিশোধ বা যেটাই আপনি বলতে চান নেওয়া হবে।’ মিথ্যার ছড়াছড়ি ছিল, কাউকে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল- বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের।”
“বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কী ঘটছে। কিছুটা ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল কারণ, জানতাম না আসলে কী ঘটছে এবং নিজেরা কোন পরিস্থিতিতে আছি। জানতাম না খুব দ্রুত কিছু ঘটবে কি না। আমরা ভয়ে ছিলাম, ফ্লাইট না বাতিল হয়ে যায় এবং আমরা আটকে যাই। কিন্তু স্থানীয় খেলোয়াড় ও সাধারণ পাকিস্তানী বা ভারতীয়দের জন্য সময়টা আরও কঠিন ছিল, কারণ তারা জানতো না কী ঘটবে।”
পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মইন বলেন, এক সপ্তাহের জন্য আইপিএল স্থগিত হওয়ার আগেই তিনি টুর্নামেন্ট ছেড়ে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে নিরাপদ থাকা, অথবা অন্তত যতটা সম্ভব নিরাপদ থাকার চেষ্টা করা। সত্যি বলতে, বিশ্বের কোথাও আপনি নিরাপদ নন। তবে অবশ্যই আপনি নিজের পরিবার এবং শিশুদের যতটা সম্ভব নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সম্ভাব্য সব কিছু করবেন স্রেফ সবকিছু ঠিকঠাক রাখার জন্য।”
“সত্যি বলতে, তারা স্থগিত করার আগেই আমি টুর্নামেন্ট থেকে সরে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে, আমি তখন সুস্থ ছিলাম না। খুবই অসুস্থ ছিলাম, খুব সম্ভবত ভাইরাসজনিত বা এমন কোনো সমস্যায় পড়েছিলাম। আমার অবস্থা খুব, খুব খারাপ ছিল এবং মাঠ থেকে ছিটকে গিয়েছিলাম। তখন কেবল এটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলাম যে, এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় যেন থাকি।”
আইপিএল কর্তৃপক্ষ ও নিজ দল কলকাতা নাইট রাইডার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মইন।
“তারা আমাদের খুব খেয়াল রেখেছে। ওদের দিক থেকে ব্যাপারটা এমন ছিল, ‘আপনারা কী চান বা আপনাদের কী লাগবে, আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহায়তা আপনাদের করব।’ তারা ছিল অসাধারণ।”
“বিশেষ করে, পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত একজন হয়ে এই সব ঘটার সময় ভারতে আটকে পড়া (আতঙ্কের বড় কারণ ছিল মইনের)। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, এরা একই মানুষ, স্রেফ সীমানা দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু একদম একই মানুষ, দুই দিকেই ভালো মানুষ আছে। অসাধারণ খাবারও এক, সব কিছুই এক।”