Published : 03 Jul 2025, 08:57 PM
এবার পুলিশ বাহিনীর সংস্কার চেয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
পটিয়া থানা এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বুধবার দিরভর বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই আন্দোলনের ডাক দেন তিন সংগঠনের নেতারা। এ দাবিতে তারা সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
মঙ্গলবার রাতে পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জুলাই আন্দোলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি সেখানে বলেন, “এদেশে আবারও জুলাই নেমে আসবে, বীর চট্টলা আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে।
“৫ অগাস্টের মত বাংলাদেশের মানুষ আবারও রাজপথে নেমে আসবে। তারা পুলিশের সংস্কার চাইবে, তাদের ভাইদের খুনিদের বিচার চাইবে। যে মা সন্তান হারিয়েছেন, তিনি তার সন্তান হত্যার বিচার চাইবেন।”
পটিয়া থানার ওসির অপসারণ নিয়ে প্রশাসন ‘প্রহসন’ করেছে অভিযোগ করে রাফি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পটিয়ার ওসিকে স্থায়ীভাবে অপসারণপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
যেসব পুলিশ সদস্য জুলাই আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করার দাবিও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
রাফি বলেন, “আমরা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে পাইনি। এটা তারা তাদের দায়বদ্ধতা মনে করেনি। আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।”
পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেনর, যতক্ষণ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সংস্কার কাজ শুরু না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা চার দফা দাবি জানিয়েছিলেন।
দাবিগুলো হল–পটিয়া থানা থেকে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও বিচার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অপসারণ করা, পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া এবং এখন থেকে কাউকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ হিসেবে চিহ্নিত করে থানায় সোপর্দ করার পর পুলিশ তাকে যদি গ্রেপ্তার না করে, তাহলে ঊরা্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
জুবাইর বলেন, “এ দাবিগুলোর মধ্যে আংশিক কিছু আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রহসনের মত এক ধরনের প্রমোশনের ব্যবস্থা করেছে ওসিকে।”
বর্তমান প্রশাসন ‘সর্বোচ্চভাবে ছাত্রলীগকে সহযোগিতা’ করছে অভিযোগ করে জুবাইর বলেন, “পুলিশ ছাত্রলীগের স্টেক হোল্ডার হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে। আমরা যখন পটিয়া থানায় ছাত্রলীগকে ধরিয়ে দিতে চাই, তখন পটিয়া থানা আমাদের মব বলে টর্চার চালায়। আমাদের ভাইদের আহত করে। অনেক ভাইরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।”
পটিয়ার ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি অভিযোগ করে জুবায়ের পুলিশ সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন।
তিনি বলেন, “পুলিশ সংষ্কার না হলে আবারও বীর চট্টলা থেকে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে, তাহলে ইনটেরিম গভর্মেন্টকে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা তারা সেটা বুঝে নেবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সদস্যসচিব ইবনে হোসাইন জিয়াদ, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পটিয়া শহীদ মিনার এলাকা থেকে রাঙামাটির একজন ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। থানায় গিয়ে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার দেখাতে বলেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা থানা চত্বরে ওই নেতাকে মারধরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় উত্তেজনার মধ্যে পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি আইন অনুযায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ওপর চওড়া হয় এবং থানার জানালা ভাংচুর করে।
রাতের ওই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে থানা ঘেরাওয়ের কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা।
ওসির অপসারণের দাবিতে বুধবার সকালে পটিয়া থানা ঘেরাও করা হয় এবং বাইপাস এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মীরা।
বিকালে নগরীর খুলশী ৪ নম্বর সড়কে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায় জাতীয় নাগরিক পার্টি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভকারীরা ডিআইজিকে তার কার্যালয় থেকে নেমে তাদের দাবি শোনার আহ্বান জানান।
ডিআইজি তার কার্যালয় থেকে না আসায় বিকাল ৪টার দিকে জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ সড়কে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর সড়ক ছাড়েন তারা।
রাতে পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে প্রত্যাহার করে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
পুরনো-
এনসিপি-বৈছাআ'র আন্দোলনের মুখে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার
পটিয়া থানা ঘেরাও, মহাসড়কে বৈষম্যবিরোধীদের অবস্থান
পটিয়ায় ৮ ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছাড়লেন এনসিপি-বৈছাআ নেতাকর্মীরা