Published : 24 Jun 2024, 10:56 PM
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেহরক্ষী থাকা অবস্থায় একটি অনুষ্ঠানে সে সময়ের চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবিরকে ‘কনুই দিয়ে ধাক্কা’ দেওয়ার ঘটনায় চাকরি খুইয়েছেন পুলিশের একজন সহকারী উপ-পরির্দশক (এএসআই)।
চাকরি হারানো পুলিশ সদস্যের নাম সন্তু শীল, যিনি তখন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন।
গত ৩ এপ্রিল তাকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ কার্যকর হলেও সেটি জানাজানি হয় রোববার।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) আব্দুল ওয়ারীশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পোশাক পরিহিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দেওয়া ও অসদাচরণের কারণে এএসআই সন্তুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করে। এ মামলায় ‘গুরু দণ্ড’ হিসেবে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
“গত ৩ এপ্রিল সন্তু শীলকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ জারি করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মানুযায়ী তিনি সিএমপি কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন। সেখানে শুনানি করে চাকরি ফিরে না পেলে প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালে আবেদন করার সুযোগ আছে তার।”
গত বছরের ২০ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় ঈদসামগ্রী বিতরণ করতে যান চট্টগ্রাম-৯ আসনে সংসদ সদস্য ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান (বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী)। সে সময় তার পাশে ছিলেন কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির।
পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপমন্ত্রীর দেহরক্ষী সন্তু শীল সাধারণ লোকজন ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যের সামনেই কনুই দিয়ে ওসি জাহিদুলকে ধাক্কা দেন। বিষয়টি নিয়ে ওসি প্রতিবাদ করায় তর্কে জড়িয়ে পড়েন সন্তু। ওসি তখনই বিষয়টি মন্ত্রীকে অবগত করায় দুজনকেই একটি কক্ষে নিয়ে যান মন্ত্রী। এরপর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে সিএমপি কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ দেন ওসি জাহিদুল।
এরপরই মন্ত্রীর দেহরক্ষীর দায়িত্ব থেকে এএসআই সন্তুকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয় এবং এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সে কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বিভাগীয় মামলা হয়।
জাহিদুল কবির বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ওসি। সিএমপিতে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় সন্তু শীল বাগেরহাট জেলায় বদলি হন। সেখানে তিনি ফকিরহাট থানায় কর্মরত ছিলেন। এ অবস্থায় গত বছরের ১২ জুন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের আদেশটি বাগেরহাট জেলায় পৌঁছানো হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সন্তুকে ফকিরহাট থানা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাগেরহাট পুলিশ লাইনসের আরআই এর কাছে রিপোর্ট করার আদেশ দেওয়া হয়। থানা থেকে নিজে স্বাক্ষর করে ছাড়পত্র নিলেও পুলিশ লাইনসে আর হাজির হননি তিনি।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের একটি অফিস আদেশে জানা যায়, পুলিশ লাইনসে হাজির না হয়ে ১৫ জুন সন্তু শীল থানা থেকে বাসায় ফেরার পথে অসুস্থতার কথা বলে একটি চিঠি দেন। তবে তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কর্মস্থলে দীর্ঘদিন হাজির না হওয়ায় বাগেরহাট সদর আদালতের পরিদর্শক এসএম নাজির আহমদকে শন্তু শীলকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অনুসন্ধান শেষে পরিদর্শক নাজির প্রতিবেদনে বলেন, চাকরিবিধি অনুযায়ী আরআই বাগেরহাটের কাছে হাজির হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু সন্তু শীল তা না করে গত বছরের ১২ জুন থেকে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২৯৩ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।