Published : 11 Mar 2025, 08:05 PM
ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় তিন বছরেও চট্টগ্রামে সাত বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
শিশুটির মায়ের প্রশ্ন, তিন বছরেও কেন অভিযোগপত্র হবে না? আদৌ কি সন্তান হত্যার বিচার পাবেন তিনি?
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিশুটির পরিবার এক মাসের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট, অবিলম্বে মামলার অভিযোগপত্র দেয়া এবং আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারটির সাথে ছিল শিক্ষার্থীরা।
নগরীর জামালখানে সিকদার হোটেলের পাশের গলির বাসিন্দা ওই শিশুটি ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর বিকেলে চিপস কিনতে বাসা থেকে বের হয়েছিল। তিনদিন পর বাসার পেছনের নালা থেকে বস্তাবন্দি তার লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
শিশুটি যে দোকানে গিয়েছিল চিপস কিনতে তার কর্মচারী লক্ষ্মণ দাশকে ওই সময় গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, ধর্ষণের পর ধরা পরার ভয়ে লাশটি গুম করতে বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দিয়েছিল সে।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠকারী শিক্ষার্থী পুষ্পিতা নাথ বলেন, “ঘটনার পরই পুলিশ ধর্ষক লক্ষ্মণ দাশকে গ্রেপ্তার করে এবং সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তাতে সে বলেছিল, শিশুটিকে সে প্রথমে ধর্ষণ করে, পরে ধরা পড়ার ভয়ে শিশুটিকে সে হত্যা করে লাশ গোপন করার জন্য বস্তায় বেঁধে ড্রেনে ফেলে দেয়।
“সেসময় এ নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা পুরো দেশবাসীর বিবেককে নাড়া দেয়। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের প্রত্যাশা ছিল তারা দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার পাবেন। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, গত তিন বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তার পরিবার বিচার দূরে থাকুক, এখনো মামলার কোনো অগ্ৰগতিরই মুখ দেখতে পায়নি।”
পুষ্পিতা নাথ বলেন, “গত তিন বছরেও তদন্তকারী পুলিশ মামলাটির চার্জশিটই দিতে পারেনি। বারবার শিশশুটির পরিবার থানায় গিয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও নানা অজুহাতে পরিবারের সদস্যদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
“পরবর্তীতে চার্জশিট না দিতে পারার কারণ হিসেবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বারবার ডিএনএ রিপোর্ট যথাসময়ে না পাওয়ার অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন। ডিএনএ রিপোর্ট না আসার অজুহাতে কেন তিন বছরেও চার্জশিট দেওয়া হলো না?”
তিনি বলেন, “বিজ্ঞ আইনজীবীদের অভিমত, ধর্ষণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় ডিএনএ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হলেও চার্জশিট দিতে ডিএনএ রিপোর্ট প্রয়োজন নেই। আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর ভিত্তিতেই এ মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিতে পারে।
“ডিএনএ রিপোর্ট না আসাকে অজুহাত দেখিয়ে চার্জশিট না দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া কিছু নয়।”
পুষ্পিতা প্রশ্ন রাখেন, “ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক ল্যাব থেকে এ মামলার ডিএনএ রিপোর্ট কেন ৩ বছরেও পাওয়া যাবে না? এখানে দায় কার?”
সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির মা বলেন, “আমার আদরের শিশু সন্তানকে ৩ বছর আগে ধর্ষণ, এরপর হত্যা করে লাশ বস্তায় বেঁধে নালায় ফেলে দেওয়া হয়। আসামি ধরা পড়লেও, আজ তিন বছর হতে চলল চার্জশিট না দেওয়ায়, বিচারই শুরু হয়নি।
“তিন বছরেও কেন চার্জশিট হবে না? কবে বিচার শুরু হবে, আদৌ বিচার পাব কি না, জানিনা। আমার সন্তানের ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই।”
জানতে চাইলে এই মামলার তদন্ত কর্মর্কর্তা এসআই নওশের কুরেশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডিএনএ প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারছি না। এ বিষয়ে হাই কোর্টের রুলিং আছে। আমরাও চাই, যত আগে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যায় তত ভালো।
“এই মামলাটির ডিএনএন টেস্টের প্রতিবেদনের জন্য আমি নিজে তাগাদা দিয়েছি। এরপর আদালত এ বিষয়ে ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবকে তাগাদা দিয়েছে। এখেনো প্রতিবেদন পাইনি।”
এই মামলার আসামি লক্ষ্মণ দাশ গ্রেপ্তার আছেন বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা নওশের কুরেশি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র চট্টগ্রামের আহ্বায়ক আসমা আক্তার, চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন, সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট হামিদ উদ্দিন, চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল আল জাওয়াদ, ব্যবসায়ী আরিফুল রহমান সবুজ প্রমুখ।