Published : 18 Oct 2022, 06:58 PM
বিএনপির মনোনয়নে চট্টগ্রামের মেয়র হওয়া মনজুর আলম বলছেন, তিনি আওয়ামী লীগের সাথে ছিলেন এবং এখনও আছেন।
মঙ্গলবার নগরীর সাগরিকায় জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তার এমন মন্তব্য আসে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। যার সাথে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মনজুর।
মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে মনজুর আলম বলেন, “আমার বয়স এখন ৭০ এর কোঠায়। ৫ বছর যদি বাদ দিই। ৬৫ বছরের মধ্যে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে শৈশব থেকে সম্পৃক্ত ছিলাম এবং আজও আছি। যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি।
“বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, বঙ্গমাতাকে ভালোবাসি। এবং আজকে যিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। বকাও দেন। বকাও শুনেছি। কিছুদিন আগে বকাও শুনেছি।”
নৌকার প্রার্থী হতে চান বিএনপির মেয়র মনজুর
মঞ্চে থাকা আ জ ম নাছির উদ্দীনকে এ সময় হাসতে দেখা যায়।
মনজুর তার বক্তৃতায় বলেন, “উনি (প্রধানমন্ত্রী) আদরও করেছেন। যে আদর সবার পক্ষে সম্ভব না। আমাকে বলেছেন এটা। সবার সামনে বলেছেন, এমনে বলেন নাই। উনি একটি কথাই বলেছেন- মেরেছ কলসির কানা, তাই বলে কী প্রেম দেব না? এটা বলেছেন উনি চট্টগ্রাম কোর্ট হিলে।
“উনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। ভালোবাসি উনাকে, আন্তরিকভাবে। সে সুবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আমার পারিবারিক... আবার বাবার প্রতিষ্ঠান, বাবার সম্পৃক্ততা। আজকে আমি আমার নাতিকেও দিয়েছি।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া মনজুর আলম বলেন, “আমি আশা করি হয়ত আমি যেটা পারি নাই, আমার নাতিরা সেটা করবে আর কি। আমার ছেলেরা, ভাতিজা আজকে এমপি হয়েছে। এটা চলছে। এটা চলমান থাকবে।”
আলহাজ হোসনে আরা-মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অর্থায়নে নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন মনজুর আলমের বড় ভাইয়ের ছেলে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম।
মনজুর আলম ও তার স্ত্রীর নামে করা হোসনে আরা-মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনেই স্টেডিয়ামটি পরিচালিত হবে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে রাজনীতি ‘ছাড়ার’ ঘোষণা দিয়েছিলেন সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদে থাকা মনজুর। পরের বছর নিজের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে তিনি আবারও আলোচনায় আসেন।
তখন মনজুরকে দলে ফেরাতে নিজের আগ্রহের কথাও জানিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
‘উপযুক্ত’ সময়ের অপেক্ষায় মনজুর
চট্টগ্রামে নৌকার প্রার্থী হওয়ার সারিতে দাঁড়ালেন মনজুরও
সুইজারল্যান্ডে জাতীয় শোক দিবস পালন
মনজুর আলমের বাবা আবদুল হাকিম কন্ট্রাকটর ছিলেন পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যও ছিলেন।
নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান মনজুর। ২০১০ সালে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে ভোট করেন এবং প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনজুর ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান; পেয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।
মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন। আর ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত শোনা গেছে সব সময়।
তাদের দুজনের পারিবারিক সখ্যতার কথাও চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার জানা। মেয়র থাকাকালে মহিউদ্দিনের নামে নগরীর একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দেন মনজুর।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেন মনজুর আলম। ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় ‘কারচুপির’ অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৬ সালে হওয়া নগর বিএনপির নতুন কমিটিতেও মনজুরের নাম আসেনি। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম নেন মনজুর।
সবশেষ ২০২০ সালে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন মনজুর আলম। তবে সেবারও তার মনোনয়ন জোটেনি।