Published : 21 Sep 2022, 10:43 PM
চট্টগ্রাম নগরীর মহাপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজনদের সভায় শহরের উন্মুক্ত স্থান রক্ষা এবং খেলার মাঠ ও উদ্যান বাড়ানোর সুপারিশ এসেছে।
বুধবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সম্মেলন কক্ষে ২০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এ ‘অংশীজন সভার’ আয়োজন করে সিডিএ ও চট্টগ্রাম আরবান নেটওয়ার্ক।
সভাপতির বক্তব্যে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন বলেন, “একটি নগরীর জন্য মহাপরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত মাস্টারপ্ল্যানগুলোর ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে একটি নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আবার এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সময়ের প্রেক্ষিতে কিছু গাইডলাইনও পরিবর্তন করতে হয়।
“যেমন, ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে বে-টার্মিনাল ও বিভিন্ন ফ্লাইওভারের কথা উল্লেখ না থাকলেও যোগাযোগ খাত উন্নয়নের খাতিরে এইসব প্রকল্প নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন এই মহাপরিকল্পনা করতে হবে।”
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, “এর আগে দুটি মাস্টারপ্ল্যান হয়েছিল। তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা কি যাচাই করা হয়েছে? নতুন মহাপরিকল্পনায় উন্মুক্ত পরিসর, খেলার মাঠ ও উদ্যান সংরক্ষণে জোর দিতে হবে।”
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “চট্টগ্রাম পূর্বে খেলার মাঠ, উন্মুক্ত ময়দান ও বিভিন্ন পার্কের সমন্বয়ে একটি পরিপূর্ণ নগরী ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও প্রভাবশালীর প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরী দিন দিন বদ্ধ নগরীতে পরিণত হচ্ছে।
“নিয়মিত সমন্বয় সভা হয়। সভায় সবাই ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ বলেন। কিন্তু যার যা কাজ, তা আর করে না। আগের মহাপরিকল্পনায় অনেক গলদ ছিল। এবার যেন তা না হয়।”
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (আইইবি)- এর চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্মানীয় সম্পাদক শহিদুল আলম বলেন, “চট্টগ্রামে যেভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে তাতে ২০৪১ সালে আর পাহাড় থাকবে বলে মনে হয় না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছিল সিটি করপোরেশন। তারপরেও তা হচ্ছে।”
উন্নয়নকাজ চলার সময় নকশার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় এবং জনগণের ভোগান্তি বাড়ার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপত্তি এড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। আর নগর পরিকল্পনায় মানসিক সুস্থতার বিষয়ে নজর দিতে হবে।”
অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার কথা স্বীকার করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, “সিডিএতে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। রাজউকে (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যেখানে ২৪ জন অথরাইজড কর্মকর্তা আছেন সেখানে সিডিএতে আছেন মাত্র দুজন।
“আর পুরো নগরীর ভবন তদারকির জন্য আছেন মাত্র ১৬ জন পরিদর্শক। জনবল না থাকায় একেক জনকে দুই-তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই পরিস্থিতি নিরসনের চেষ্টা চলছে।”
সিডিএ সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে দাবি করে ডলফিন বলেন, “সিটি করপোরেশন পারছে না বলে সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট হবে না।”
সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানের সফল বাস্তবায়নে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষকে অংশগ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
সভায় ‘চট্টগ্রাম নগর মহাপরিকল্পনা’ নিয়ে সিডিএ এর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকল্প পরিচালক মো. আবু ঈসা আনছারী এবং ‘চট্টগ্রাম নগরের আপত্কালীন পরিকল্পনা’ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চুয়েটের শিক্ষক মো. শাহজালাল মিশুক।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন এ বি এম আবু নোমান, সিডিএ সচিব আনোয়ার পাশা, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, স্থপতি আশিক ইমরান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম ও মো. মোবারক আলী, নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা, কলেজ ছাত্রী পারভীন আক্তার ও নিশাত সুলতানা সভায় বক্তব্য দেন।
সভা আয়োজনে সহযোগিতা করে ইউএনডিপি, ইপসা ও সেভ দ্য চিলড্রেন।
আরও পড়ুন