Published : 18 Sep 2024, 12:39 AM
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের প্রাক্কলন কর্মকর্তারা ‘অসহায়’ আর ‘বাধ্য’ হয়ে করতেন বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সেসব প্রাক্কলনের ভিত্তি ‘অত্যন্ত দুর্বল’ অভিহিত করে তিনি বলেছেন, “অনেক সময় যারা প্রাক্কলন তৈরি করেছেন, তারা অসহায়বোধ করেছেন। ওই প্রাক্কলন দিতে বাধ্য হয়েছেন। এই কথাটা অনেক বড়ভাবে এসেছে। উনাদের অসহায়ত্বটা উনারা আজকে (মঙ্গলবার) বলেছেন।”
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার দেশের সরকারি ২৪টি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। বৈঠকের বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয়।
তিনি বলেন, “তথ্য-উপাত্তের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা সেই অর্থে সংলাপ করলাম। উনাদের আমরা বুঝিয়েছি, আমরা একই পক্ষে। আপনাদের আমরা ধরতে আসি নাই। আপনারা এতদিন যেগুলো করতে চেয়েছেন, কিন্তু করতে পারেন নাই, এইগুলো করার আজকে সুযোগ। এই সুযোগটা ব্যবহার করেন, আমরা এটিই বলেছি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এখন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি। রিপোর্টে আমরা কী পেলাম, এটা এখনও বলার সময় আসে নাই। এটার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে, কারণ একজন বললেই যে এটা সত্য হবে, তারও তো কোনো কথা নাই। আমাদেরও তো ওগুলো মিলিয়ে-টিলিয়ে দেখতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য গত ২৮ অগাস্ট ১২ সদস্যের একটি কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এতে প্রধান করা হয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে।
জ্বালানি খাতের বিদেশি ঋণ চুক্তি পর্যালোচনা হবে: দেবপ্রিয়
কমিটির গঠনের পরদিন, অর্থাৎ ২৯ অগাস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর দুটি সভা করেছে কমিটি। তৃতীয়বারের মত মঙ্গলবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তারা।
এদিন প্রতিষ্ঠানগুলোর হালনাগাদ তথ্য, তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য পরিবেশন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
এছাড়া বিকালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে ‘মূল্যস্ফীতি এবং জাতীয় আয়’ নিরূপণ পদ্ধতি নিয়েও আলোচনার কথা জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, “তথ্য-উপাত্তের এখানেই শেষ হয়নি। বিকালে মূলত দুটো তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আলোচনা করব। একটা হল- জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি কীভাবে হিসাব হয়েছিল। দ্বিতীয় হল- মূল্যস্ফীতির হিসাব কীভাবে হয়। এই দুটো বিষয়কে স্যাম্পল হিসেবে গভীরে যেয়ে দেখার সিদ্ধান্ত করেছি।”
নির্দিষ্টভাবে শুধু শেখ হাসিনা সরকারের আমলের তথ্য যাচাই করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে দেবপ্রিয় বলেন, “আমাদের গভর্নমেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক নাই। আমরা দেখতেছি, এই প্রক্রিয়াটা কীভাবে করা হয়েছে এবং সে প্রক্রিয়া যদি আগে খারাপ থাকে, পরে আরও খারাপ হয়ে গেল কিনা সেটাই দেখব।”
আর্থিক খাতের ‘অনিয়ম’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ব্যাংকিং সেক্টর, ব্যাংক বহির্ভূত সেক্টর, ক্যাপিটাল মার্কেট এগুলো সবই দেখব। কিন্তু সাধারণভাবে এটা বোধগম্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কমিশন বানিয়েছে, তারা আরও গভীরে গিয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে দেখার সুযোগ পাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাস্কফোর্স গঠন করেছে। অর্থাৎ তারা সুনির্দিষ্টভাবে পদ্ধতি, প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপ মন্তব্য দেবে। আমরা দেখছি যে ঘটনার মাত্রাটা কী, সমস্যার মাত্রা কী, চরিত্রটা কী এখানে।”
শ্বেত্রপত্র প্রণয়ন কমিটি কোনো সংস্কার কর্মসূচি দিচ্ছে না জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, “এই মুহূর্তে স্বচ্ছতা দিচ্ছি, ঘটনাটা কী। কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। ‘গ্রাউন্ড জিরো’ বের করতেছি আমরা। ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে ইমারত তৈরি করা যাবে। সেই ইমারত তৈরি হবে কি না, সেটি আমরা দেখছি।”
আরও পড়ুন-