Published : 18 Jun 2024, 09:31 AM
ভারতীয় সিনেমার প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ 'অসুখ' সিনেমার শুটিং সেটে গায়ক অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদারের সঙ্গে যে ধরনের 'দুর্বব্যহার করেছিলেন', সেটি ঠিকই করেছিলেন বলে এখন মনে করেন এই অভিনেতা।
মনের মধ্যে অনেক বছর রাগ অভিমান পুষে রাখা শিলাজিতের এই উপলব্ধি হয়েছে ২৫ বছর পর।
আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঋতুপর্ণর পরিচালনায় নিজের প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তিনি।
শিলাজিৎ বলেন, ঋতুপর্ণর সহযোগী অভিনেত্রী সুদেষ্ণা রায় তাকে 'অসুখ' সিনেমার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছিলেন। পরে ঋতুপর্ণও রাজি হন সে সময়ের তারকা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে তাকে নায়ক হিসেবে নিতে।
"সিনেমায় আমার চরিত্রের জন্য একটা চশমা ছিল। সেই চশমাটা দেওয়া হয় সিনেমা টিম থেকে। তাতে সামান্য পাওয়ার ছিল। তাই বেশিক্ষণ পরে থাকলে মাথা ধরে যাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম, একটা শট কি চশমা ছাড়া দিতে পারি, বা শটের মধ্যে চশমাটা খুলতে পারি?"
উত্তরে ঋতুপর্ণ বলেছিল, “না, চশমা সারাক্ষণ পরে থাকতে হবে। চরিত্রটা এরকম। আর বাজে ব্যবহার করে বলেছিলেন, শটের মধ্যে চশমা খুলবে কেন, তুমি কি উত্তমকুমার নাকি!”
কিন্তু ওই চশমা নিয়ে শিলাজিতের অস্বস্তি যায়নি। একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের দৃশ্যায়নের সময় শিলাজিতের অভিনয়ে ঋতুপর্ণ সন্তুষ্ট হলেও অভিনেতা আবিষ্কার করেন, তিনি চশমা ছাড়া ওই দৃশ্যে শুটিং করে ফেলেছেন। অথচ সেখানে নায়কের চোখে চশমা থাকতেই হবে।
শিলাজিৎ বলেন, "চশমা ছাড়া শট দিয়েছি, কি হবে এবার! ভাবতে ভাবতে ঋতুপর্ণর কাছে গিয়ে বলেই ফেলেছি কথাটা। খুব সহজভাবে, প্রায় হাসতে হাসতে বলেছি, বিষয়টার গুরুত্ব বুঝতে পারিনি হয়ত।
“তখন তিনি প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠলেন। তখন ফিল্মে শুট হত। বলতে শুরু করলেন, ক্রম বজায় রাখা অভিনেতার দায়িত্ব। সৌমিত্রদা (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) এখনো এসব দিকে খেয়াল রাখেন, আর তুমি কোথাকার কে?”
তখন কি করলেন জানতে চাইলে শিলাজিৎ বলেন, "আমি তো থ হয়ে গেছি, আমার সঙ্গে এইভাবে কথা বলছে! আমার ভাই, বাবা-মা কারো ক্ষমতা নেই আমার সঙ্গে এইভাবে কথা বলার। পৃথিবীতে কোনো লোক আমার সঙ্গে ওইভাবে কথা বললে আমি তার গলাটা টিপে ধরব। কিন্তু আমি চুপচাপ শুনে গেলাম। আমার খারাপ লেগেছিল এটা যে শুটিং পরিচালক নিজে দেখছেন, সেটে কাজ করছেন তার আট সহযোগী, সিনেমাটোগ্রাফার, আমার সহ অভিনেতারা ছিলেন, কিন্তু তারা কেউ খেয়াল করলেন না। এমনকি, আমি যদি বিষয়টা স্বীকার না করতাম, তাহলে তো আর কিছু করার থাকত না।
"তারপর সুদেষ্ণাদির কাছে গিয়ে বললাম, আমি সিনেমাটা করব না। আমার বিরক্ত লাগছে। ওভাবে কথা বলবে কেন আমার সঙ্গে? আমি এর থেকেও অনেক বেশি বাজেভাবে কথা বলতে পারি।"
পরে অবশ্য শিলাজিৎ মাথা ঠাণ্ডা করে কাজটি করেছিলেন।
"ভাবলাম মানুষ হিসেবে তো একটা দায়িত্ব থাকে। একটা শুট এতখানি হয়ে যাওয়ার পর কাজ ছেড়ে দিয়ে কাউকে বিপদে ফেলা উচিৎ নয়। সিনেমা নষ্ট হয়ে যাবে। পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল।"
'অসুখ' এর কাজ নিয়ে কথা বলতে বলতে শিলাজিৎ বলেন, "এতবছর পর এসে মনে হয়, পরিচালক হিসেবে একজন অভিনেতাকে উনি যা বলেছিলেন, ঠিকই বলেছিলেন। আমি এখন বুঝি, কথাগুলো শিলাজিৎকে তিনি বলেননি, বলেছিলেন তার সিনেমার অভিনেতাকে। এখন বুঝি, সিনেমার সব কাজের দায়িত্ব কেবল পরিচালকের নয়, অভিনয় শিল্পীরও।"
শুটিংয়ের সময় একজন আনকোরা অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও সে সময়ের তারকা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছিলেন বলে জানান শিলাজিৎ।
গত কয়েক দশক ধরে গানের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয় করে চলেছেন শিলাজিৎ।
কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে শিলাজিৎ অভিনীত ‘অযোগ্য’ সিনেমা। কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায় এ সিনেমাটি কলাকাতার দুই সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের জুটি বাধা ৫০তম চলচ্চিত্র। ‘অযোগ্য’তে শিলাজিৎ ঋতুপর্ণার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন।