Published : 30 May 2025, 02:30 PM
‘চোখের বালি’, ‘খেলা’, ‘দোসর’ নামের সিনেমাগুলো করে প্রচলিত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নিজেকে তুলে ধরেছিলেন ‘একজন অভিনেতা’ হিসেবে। নতুন ধারায় নিজের ‘উত্থানের’ সব কৃতিত্ব প্রসেনজিৎ দিয়েছেন এই সিনেমাগুলোর নির্মাতা প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষকে।
প্রসেনজিতের কথায় ঋতুপর্ণ ঘোষ তাকে ‘নতুনভাবে জন্ম দিয়েছিলেন’।
২০১৩ সালের ৩০ মে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন ঋতুপর্ণ। দিনটিতে পরিচালককে স্মরণ করে এক সাক্ষাৎকারে প্রসেনজিৎ বলেন, “আমি সবসময়ই বলি যে ঋতু আমায় একটা জিনিস বুঝিয়েছে, যে আমার মধ্যে আরও একটা প্রসেনজিৎ আছে। ওই আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছে।”
কয়েক প্রজন্মের দর্শক প্রসেনজিতের সিনেমা দেখছে। ১৯৬৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে হৃষিকেশ মুখার্জির ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’ সিনেমায় প্রথম পর্দায় আসেন প্রসেনজিৎ। আর ১৯৮৭ সালে সুজিত গুহের ‘অমর সঙ্গী’তে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি। এরপর থেকে কেবল বাণিজ্যিক সিনেমাতেই পাওয়া যেত অভিনেতাকে।
তবে প্রসেনজিৎকে 'অভিনেতা' হিসেবে তুলে ধরেন প্রয়াত নির্মাতা ঋতুপর্ণ সেনগুপ্ত ২০০৩ সালে 'চোখের বালি' সিনেমায়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক সিনেমা থেকে দূরে সরে যান অভিনেতা।
২০১০ সালে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির হাত ধরে 'অটোগ্রাফ' সিনেমা এবং পরবর্তীতে একের পর এক গল্প ও চরিত্র নির্ভর সিনেমা করে নিজেকে 'অন্য মাত্রায়' তুলে ধরেছেন এই অভিনেতা।
ঋতুপর্ণ চলে যাওয়ার পর সৃজিত মুখার্জির বেশ কিছু সিনেমায় প্রসেনজিৎকে পেয়েছে দর্শক। এছাড়া নবীন পরিচালকরাও পাচ্ছেন এই অভিনেতাকে।
সে প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, “এখন আমি অধিকাংশ সাক্ষাৎকারে বলি যে, সৃজিত (পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়), কৌশিকের (পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গে আমি বেশি কাজ করি, কিন্তু সেই নতুন প্রসেনজিৎ ঋতুপর্ণর আবিষ্কার। ওই বুঝিয়েছিল যে আমার মধ্যে আরও অন্য কিছু আছে। তো সেই শুরু। ওটা আমার একটা নতুন জন্ম ছিল।”
ঋতুপর্ণর পরিচালনায় প্রসেনজিৎ অভিনীত ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘নৌকাডুবি’ সিনেমাও দারুণ সাড়া তোলে।
নিজের সব সিনেমার চিত্রনাট্যের লেখক ঋতুপর্ণ নিজেই
জীবদ্দাশায় যে ১৯টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ঋতুপর্ণ, তার মধ্যে ১২টিই বিভিন্ন শাখায় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতে। সেরা পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারের পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও রয়েছে তার।
নিজের নির্মিত সব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য নিজেই লিখেছেন ঋতুপর্ণ।
হীরের আংটি’র মধ্য দিয়ে ১৯৯৪ সালে চলচ্চিত্র জগতে আসেন ঋতুপর্ণ। একই বছর ‘উনিশে এপ্রিল’ নির্মাণ করেন তিনি, যা তাকে এনে দেয় ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
তার চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- দহন, নৌকাডুবি, তিতলী, সব চরিত্র কাল্পনিক, শুভ মহরত, অন্তরমহল, বাড়িওয়ালি, আবহমান, উৎসব, খেলা, দোসর, সানগ্লাস ইত্যাদি। তার নির্মিত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র চিত্রাঙ্গদা।
তার হিন্দি চলচ্চিত্র রেইন কোট ২০০৪ সালে ভারতের সেরা হিন্দি চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। এতে অভিনয় করেন ঐশ্বরিয়া রাই। এই অভিনেত্রী চোখের বালিতেও অভিনয় করেন। ঐশ্বরিয়ার স্বামী অভিষেক বচ্চন অন্তরমহলে অভিনয় করেন।
২০০৭ সালে ভারতের সেরা ইংরেজি চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী ঋতুপর্ণের একমাত্র ইংরেজি চলচ্চিত্র ‘লাস্ট লিয়ার’-এ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন।
এছাড়া কলকাতার ইটিভি বাংলায় সম্প্রচারিত ‘এবং ঋতুপর্ণ’ ও স্টার জলসায় সম্প্রচারিত ‘ঘোষ অ্যান্ড কো’ অনুষ্ঠানে উপস্থিতিও দর্শকদের কাছে প্রিয় করে তোলে এই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে।
২০১০ সালে একটি জনমত জরিপে ‘দশকের সেরা বাংলা চলচ্চিত্রকার’ নির্বাচিত হন ঋতুপর্ণ। তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন এই নির্মাতা।