Published : 16 May 2025, 04:53 PM
সিনেমা, রেড কাপের্ট এবং উৎসবের আলোর ছটা ছাপিয়ে এবারের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব সরব হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে। আসরে সম্মানসূচক স্বর্ণপাম হাতে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে সমালোচনায় একেবারে ধুয়ে দিয়েছেন অস্কারজয়ী বলিউডি অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো।
পুরস্কার হাতে নিয়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন ৮১ বছর বয়সী অভিনেতা।
ট্রাম্পকে ‘সংস্কৃতিবিবর্জিত প্রেসিডেন্ট’ আখ্যা দিয়ে ডি নিরো বলেছেন, ‘তিনি শিল্পের শত্রু।’
এছাড়া ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ধ্বনিও উচ্চারিত হয়েছে কানের আসরে।
সিএনএন ও ভ্যারাইটি লিখেছে, নিরোর হাতে সম্মানসূচক স্বর্ণপাম তুলে দেন ‘দিস বয়’স লাইফ’, ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমায় কার সহঅভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও।
এ সময় ডিক্যাপ্রির গালে চুম্বন এঁকে দেন নিরো।
তিনি বলেন, “আমার দেশে এখন গণতন্ত্রের জন্য মরিয়া লড়াই চলছে। যা এক সময় আমরা হালকাভাবে নিয়েছিলাম, তা এখন হুমকির মুখে।”
এই লড়াই এখন ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবার’ বলে মন্তব্য করেছেন নিরো।
তিনি বলেন, “শিল্প তৎপরতাই হচ্ছে গণতান্ত্রিক। প্রত্যেক শিল্পই অন্তর্ভুক্তিমূলক, এটা মানুষকে একতাবদ্ধ করে, সত্য অনুসন্ধান করে, বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করে। এ কারণেই শিল্প তাদের কাছে এখন হুমকি। এ কারণেই স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদীরা আমাদের ভয় পায়।"
চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির ক্ষেত্রে ‘বিদেশে নির্মিত’ সব সিনেমার ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত এ শুল্কনীতির সমালোচনা করে নিরো বলেন, “সৃজনশীলতার কোনো দাম হতে পারে না, কিন্তু ট্রাম্প তাতে কর বসাতে চান। অবশ্যই সেটি অগ্রহণযোগ্য।”
নিরোর কথায়, এটা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট।
“সহিংসতা নয়, বরং প্রবল আবেগ আর অঙ্গীকার নিয়ে প্রস্তাবিত শুল্কনীতির প্রতিবাদ করতে হবে।”
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে নিরো বলেন, “যারা স্বাধীনতার কথা ভাবেন তাদের সংগঠিত হওয়ার সময় এসেছে, প্রতিবাদ জানানোর সময় হয়েছে।”
নিরো গেল বছর নির্বাচনের আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের একটি প্রচার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছিলেন। এর আগেও একাধিক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন তিনি। একবার কোনো একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে ‘ভাঁড়’ বলেও সম্বোধন করেছিলেন এই অভিনেতা।
গাজার ফটো সাংবাদিক হাসসুনা স্মরণে নির্মাতা-শিল্পীরা
ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ এবার কান উৎসবে জুরিপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে গাজার ফটো সাংবাদিক ফাতিমা হাসসুনাকে তিনি স্মরণ করেছেন। ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গত মাসে পরিবারের ১০ সদস্যসহ নিহত হন হাসসুনা।
ফাতিমা হাসসুনার গল্প উঠে এসেছে ইরানি নির্মাতা সেপিদেহ ফার্সির ‘পুট ইয়োর সৌল অন ইয়োর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’ তথ্যচিত্রে। বৃহস্পতিবার কান উৎসবে দেখানো হয়েছে এটি।
ফাতিমা হাসসুনার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জুলিয়েট।
ফাতিমা হত্যার নিন্দা জানিয়ে সাড়ে তিনশোর বেশি অভিনেতা,পরিচালক ও প্রযোজক একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
তাতে গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে শিল্পমাধ্যমের নীরবতারও সমালোচনা করেছেন তারা।
‘মিশন: ইম্পসিবল-ফাইনাল রেকনিং’ নিয়ে কানে ক্রুজ
তারকাভিনেতা টম ক্রুজের ‘মিশন: ইম্পসিবল-ফাইনাল রেকনিং’ সিনেমার প্রিমিয়ার হয়েছে বুধবার। চলতি মাসের ২৩ তারিখে সিনেমাটি মুক্তি পাবে।
ক্রুজের সঙ্গে ছিলেন পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারি। আরো ছিলেন সহ-অভিনেত্রী পম ক্লিমেনটিয়েফ, অ্যাঞ্জেলা বাসেট, হেইলি অ্যাটওয়েল ও হানাহ ওয়াডিংহ্যাম।
প্রিমিয়ারের আগে ম্যাককোয়ারি, টম ক্রুজ ও সহশিল্পীরা আলোকচিত্রীদের সামনে আসেন।
তিন বছর আগে ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’ নিয়ে কান উৎসবে পা রেখেছিলেন ক্রুজ।
পর্দা নামবে ২৪ মে
গেল মঙ্গলবার শুরু হওয়া কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামবে আগামী ২৪ মে, ওইদিন পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।
এবারে উদ্বোধনী সিনেমা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় আমেলি বোনাঁর প্রথম সিনেমা ‘লিভ ওয়ান ডে’কে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবকে বলা হয় চলচ্চিত্রশিল্পের অন্যতম বড় একটি প্রদর্শনী। এ আসরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নবীন-প্রবীণ অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, কলাকুশলী ও প্রযোজকরা জড়ো হন। কানে চাইলে যে কেউ চলচ্চিত্র জমা দিতে পারেন। এসব সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনের প্রতিনিধিদের দেখার সম্ভাবনা থাকে। এই আসরেই নতুন নির্মাতাদের জন্য মিলে যেতে পারে প্রযোজক।
কানের আসর শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, ছোট আকারে। ওই বছরে থেকে সেরা চলচ্চিত্রকে পুরস্কৃত করা হয়। আর আসরের সেরা পুরস্কার ‘পাম দি’অর’ বা ‘স্বর্ণপাম’ দেওয়া হচ্ছে ১৯৫৫ সাল থেকে।
মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেওয়া সিনেমাগুলোর প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে তৈরি। এবারে নির্মাতা জুটি ডারডেন ব্রাদার্স ‘দ্য ইয়াং মাদারস হোম’ সিনেমা নিয়ে ফিরছেন কানে।
আলোচনায় আছে জুলিয়া দুকোর্নোর ‘আলফা’, রিচার্ড লিংকলেটারের ‘নুভেল ভাগ’, ওয়েস অ্যান্ডারসনের ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল স্কিম’।
প্রতিযোগিতায় আছে ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ এবং সাঈদ রুস্তায়ির ‘উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড’।
এছাড়া সিনেমা বিশ্লেষকরা ব্রিটিশ অভিনেতা জশ ও’কন্নর অভিনীত দুইটি সিনেমা ‘দ্য হিস্টোরি অব সাউন্ড’ ও ‘দ্য মাস্টারমাইন্ড’কেও এগিয়ে রেখেছেন স্বর্ণপাম জয়ে।