Published : 18 Oct 2022, 03:59 PM
ঢাকার সাতমসজিদ রোডে শংকর বাসস্ট্যান্ডের কাছে চোখে পড়বে একটি কমলা আর লাল রঙ মেশানো ভবন। দেবদারু, সন্ধ্যামালতিসহ নানা গাছ আছে সেই ভবনের সামনে, আছে একটি ভাস্কর্যও।
ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত একটি দেয়ালে বড় করে লেখা আছে ‘ছায়ানট’। এটি আসলে ছায়ানট ভবন। তবে এই ভবনটি একটি বিদ্যালয়ও বটে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিদ্যালয়টির নাম কী? বিদ্যালয়টির নাম হলো 'নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়'। এখানেই আমি পড়ি।
২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি ওয়াহিদুল হক ও সন্জীদা খাতুনের অনেক বছরের পরিশ্রমের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিদ্যালয়ে একটি বিজ্ঞানাগার, অনেক শ্রেণিকক্ষ, একটি পাঠাগার, একটি সেমিনার রুম, একটি অডিটোরিয়াম, একটি কম্পিউটার ল্যাব, অডিটোরিয়ামের ছাদে একটি ছোট মাঠ, একটি ক্যান্টিন এবং শিশুদের দৌড়াদৌড়ি করার জন্য কিছু ফাঁকা জায়গা রয়েছে। তবে একটি বড় মাঠ থাকলে স্কুলটি পরিপূর্ণ হতো।
এই বিদ্যালয়ে কিছু অতিরিক্ত ক্লাসও রয়েছে, যা হয়তো সব বিদ্যালয়ে নেই। সেগুলো হলো ব্রতচারী, গান, খেলা, রান্না-সেলাই এবং আঁকা-গড়া।
এই বিদ্যালয়ে খুব আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করে সবাই। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বলে না। বলে ‘আপু’ অথবা ‘ভাইয়া’। আপু-ভাইয়ারা আমাদের যেসব পড়ান, সেসব থেকে অভিনয়, লেখার কাজ, আলোচনা, শব্দার্থ ও বানানের কাজ ইত্যাদি করান। এছাড়া শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝে সৃজনশীল লেখা যেমন গল্প, ছড়া কবিতা ইত্যাদি লেখে। আমরা নিজের হাতে বই তৈরি করি। সে বইয়ে লেখার পাশাপাশি থাকে রঙিন ছবি। আমরা নানা বিষয় দলে কাজ করি। কাজ শেষে সেটা উপস্থাপন করি।
এই বিদ্যালয়ে কিছু অতিরিক্ত ক্লাসও রয়েছে, যা হয়তো সব বিদ্যালয়ে নেই। সেগুলো হলো ব্রতচারী, গান, খেলা, রান্না-সেলাই এবং আঁকা-গড়া।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় আমরা ‘জুম’ অ্যাপের মাধ্যমে ক্লাস করতাম। জুমের মাধ্যমে ক্লাস করার ফলে মহামারীর বছরগুলোতে আমাদের বসে থাকা লাগেনি। তবে সরাসরি ক্লাস না হওয়ার ফলে কাজ বুঝতে অসুবিধা হতো। সেক্ষেত্রে ফোনে যোগাযোগ করলে আপু-ভাইয়ারা কাজ বুঝিয়ে দিতো। বর্তমানে আমরা আবারও সরাসরি স্কুলের ক্লাসরুমে ফিরে এসেছি।
প্রতিদিন সকালবেলা বিদ্যালয়ে ঢোকার পর সমাবেশের মাধ্যমে সবাইকে বরণ করে নেওয়া হয়। সমাবেশে একেক দিন একেক শ্রেণি গান, নাচ, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। সমাবেশ শেষে জাতীয় সঙ্গীত হয়। তারপর সবাই যে যার ক্লাসে চলে যায়।
এই বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক চর্চাও বেশ ভালো করেই হয়। যে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের গান, লোকগান, দেশাত্মবোধক গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয় আর ব্রতচারীতে এই স্কুলের মঞ্চ থাকে ভরপুর।
প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হলেও বিদ্যালয়ে যেতে আমার ভালো লাগে।
আমাদের বিদ্যালয়ে ক্যান্টিন থেকে প্রতিদিন টিফিন বা উপহার আসে। কোনোদিন পোলাও আর ডিমের তরকারি, কোনোদিন খিচুড়ি, কোনোদিন নুডলস, কোনোদিন আবার ভাত-ডাল-আলুভর্তাসহ বিভিন্ন জিনিস উপহার পাই। খাবারগুলো মজা হয় খেতে। তবে মহামারীর আগে আমাদের আরও অনেক খাবার দিতো।
টিফিনের সময় আমরা বিদ্যালয়ের বারান্দাগুলোতে ছোটাছুটি করি। প্রতিদিনের ক্লাস শেষে আমরা কেউ অভিভাবকের সঙ্গে, কেউ বা বিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসে বাসায় ফিরি।
প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হলেও বিদ্যালয়ে যেতে আমার ভালো লাগে। আপু-ভাইয়া ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো আমি অনেক উপভোগ করি।
কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!