Published : 08 Jul 2023, 09:54 PM
পর্যবেক্ষণের নামে বিদেশিদের কেউ কেউ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘বানচাল’ করতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
নির্বাচনের আগে বিদেশিরা তৎপর হলেও সরকার চাপ অনুভব করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আর প্রেসার-ট্রেসার আমাদের নাই। কারণ, আমরা আমাদের নিজেদের তাগিদে নির্বাচন করতেছি।“
শনিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ডিকাব টকে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে প্রতিটি বড় অংশীদার রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে বড় সব সমস্যা দূর হয়েছে, সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আগ্রহ এবং দেশটির কর্মকর্তাদের একের পর এক সফর ‘গ্যাপ দূর’ করার ভালো উপায় বলে মোমেন বর্ণনা করেন।
চীন উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অনেক কাজ করছে এবং সৌদি আরব, ইউএই, যুক্তরাজ্য প্রত্যেকটা দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আগের থেকে ভালো হয়েছে বলে দাবি তার।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাস্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকান বলেন, যেই আছেন আমরা প্রত্যেককে স্বাগত জানাব। আমাদের আসলে লুকানোর কিছু নেই। তারা এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কিন্তু তারা যদি মাতব্বরির… ভালো যদি সাজেশন থাকে, আমরা স্বাগত জানাব।
“অতি সন্নাসীতে গাজন নষ্ট। তাদের কেউ কেউ হয়ত নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবে। সেটা যদি করেন, তাহলে দেশের অমঙ্গল ডেকে আনবেন। আপনাদের, আমাদের সবার জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে। সে ব্যাপারে আপনারা সজাগ থাকবেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া যাতে তারা ধ্বংস না করে।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন রকম লোক আসতেছে, আমরা তাদেরকে ওয়েলকাম জানাচ্ছি। তারা আসুক, দেখুক। আমি আশা করি, তারা তখন সার্টিফিকেট দেবে যে এটা একটা মডেল ইলেকশন। আমরা আশা করছি, আমাদের ইলেকশনটা বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
নিজেদের তাগিদেই স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচন করার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “অন্যের পীড়াপীড়িতে নয়, আমার নিজেদের তাগিদে। আমি দেখতে চাই আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না। আমার গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে আমি থাকব না।”
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সবদলকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। যারা আসবেন না, সেটা তাদের নিজেদের ব্যাপার।
“কোনোদিন ভারতে সন্ত্রাসী দল নির্বাচনে আসে না, আমেরিকায় (নব্য) নাৎসি দল অ্যালাউ না। ওই দল আসেও না। আমাদের এখানেও সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে, তারা না আসলেও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে না। আমরা চাই, নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে। তবে, সন্ত্রাসী দল না আসলে কোনো অসুবিধা নাই।”
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “সংলাপ, কার সঙ্গে সংলাপ? আমেরিকাতে কি কোনো সংলাপ করে? ওখানের প্রেসিডেন্ট কি নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন? ইংল্যান্ডের প্রাইম মিনিস্টার কি পদত্যাগ করেন? এগুলো সব অবান্তর।
“এগুলোর রীতি দুনিয়ার আর কোথাও নেই। পাকিস্তানে বোধহয় কিছুদিনের জন্য ছিল। সংবিধান অনুযায়ী আমরা আমাদের দেশে স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচন করব।”
‘আমরা কারও লেজুড় নই’
চীন থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “৪৬৫ বিলিয়ন ডলার যদি আমার জিডিপি হয়ে থাকে, ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন হচ্ছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ- ১ শতাংশের কম। কোনোভাবেই আমরা চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ি নাই।
“কারও ধারণা, আমরা চীনের সাথে সম্পর্ক আছে, আমরা বোধহয় চীনা গোষ্ঠীর সাথে এক হয়ে যাচ্ছি। এবং জোর করে আমাদেরকে চাইনিজ গোষ্ঠীর মধ্যে…”
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতিতে চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা একটা ভারসাম্যপূর্ণ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলি। আমরা কারও লেজুড় না, চীনের আমরা লেজুড় না। কিন্তু বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে, আমরা চীনের দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছি। সুতরাং আমরা কোনো দিকে ধাবিত হতে চাই না, আমরা কারও লেজুড় হতে চাই না।”
মোমেন বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক দিয়ে অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য হয়, ৮৬% এদিক দিয়ে যায়। আর এই ব্যবসার কারণে গণচীন হচ্ছে রাইজিং স্টার। এটা খুব বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকের ইচ্ছা এদেরকে ‘কনটেইন’ করা। ‘কনটেইন’ করার একটা উপায়, যদি সমুদ্রপথের ব্যবসাটা বাধাগ্রস্ত করা যায়।“
বাংলাদেশ সরকারের পলিসি ‘খুব স্বচ্ছ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা ইন্দো-প্যাসিফিকে সবার জন্য অবাধ, নিরাপদ, ইনক্লুসিভ, আইনসম্মত চলাচল চাই। আমরা এটাতে স্বচ্ছ। এবং আমাদের সাথে অন্যান্য অনেকগুলো দেশ এমন চায়। জাপানও একই রকম চায়, ভারতও তাই চায়।”
কৌশলগত অবস্থান এবং উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ অনেকের চক্ষুশূল হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সে কারণে বিভিন্ন অজুহাত আমাদের কাছে তুলে ধরা হয়। আমরা অনেকে সেই অজুহাতে বিশ্বাসও করি। যেমন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গুম এগুলোর সবকিছু একটা ভাওতাবাজি।
এবার ভোট দেখতে চায় ২১০টি প্রতিষ্ঠান
বড় অংশীদার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক নম্বর স্টেকহোল্ডার হল ভারত। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। সোনালী অধ্যায়। আমরা আমাদের বড় বড় সব সমস্যা দূর করেছি। ছোটখাটো সমস্যাগুলো আমরা সবসময় তুলে ধরতে পারি। তাদের উন্নতি হচ্ছে, আমাদেরও উন্নতি হচ্ছে।
“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চান। আর একের পর এক লোক এসে সফর করছেন, আমাদের মধ্যে যে গ্যাপ সেটা দূর করার জন্য এটা ভালো। অপপ্রচারে আর হবে না। চীন আমাদের বন্ধু, উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক কাজ করতেছে। সৌদি আরব, ইউএই, যুক্তরাজ্য প্রত্যেকটা দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের থেকে ভালো হয়েছে।”
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।