Published : 30 May 2025, 12:19 AM
কম বেশি সকল বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ‘একমত এবং রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা’ সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিন, এতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ‘জয়-পরাজয়ের’ কিছু নেই।
বৃহস্পতিবার বিকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবারও আহ্বান জানাই জনগণের আকাঙ্খাকে ধারণ করুন। অবিলম্বে ডিসেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন।
“এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের জয় বা পরাজয়ের কোন কিছুই নেই। বরং জনগণকে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিয়ে গণতন্ত্রকে বিজয় করুন, করতে সাহায্য করুন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের মধ্যে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে আসছে। অন্যদিকে সরকারের তরফে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে।
সম্প্রতি সেনাপ্রধানের অফিসার্সে অ্যাড্রেস অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। তার বক্তব্যের পরদিন বিএনপির তরফে সরকার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি আসায় রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়। প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগ ভাবনার’ গুঞ্জনও ছড়ায়।
এ অস্থায় শনিবার ও রোববার প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। দলগুলো তার প্রতি সমর্থন দিলেও যার যার দাবিতে অনড় থাকে।
বিএনপি নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন কথা বলছেন।
‘দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে’
তারেক রহমান বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তবে এই সরকার কোনোভাবেই কিন্তু জনপ্রতিনিধিমূলক নয় এবং জনগণের কাছে এই সরকারের জবাবদিহিতার কোনো সুযোগ নাই।”
অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা না করার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ফলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে এবং এই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা যদি খেয়াল করি যে, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বলা যেতে পারে, স্থবির হয়ে পড়েছে।
“জনগণের ভোটের নির্দিষ্ট মেয়াদে স্থিতিশীল সরকার না থাকায় দেশের কাঙ্খিত বিনিয়োগও হচ্ছে না। ব্যবসায়িক সংগঠন বলছে, নানা কারণে ইতোমধ্যেই শত শত শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন খাতে এ ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার মনে হয় জনগণের আকাঙ্ক্ষ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের ব্যাপারে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের তেমন কোনো আপত্তি নেই।”
তবে সংস্কার নিয়ে সরকারের ‘অহেতুক সময়ক্ষেপণে’ আপত্তি অবশ্যই রয়েছে দাবি করে তারেক রহমান বলেন, “শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সংগঠন এ ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে।
“আমরা দাবি করেছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে। যেহেতু কম বেশি সকল বিষয়ে অধিকাংশ দলের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে… ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব।”
বক্তেব্যের শুরুতে শহীদ জিয়াউর রহমান বর্ণাঢ্য জীবন-কর্ম এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার অবদান ও কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি বলতে চাই, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার রাজনীতি, রাষ্ট্র চিন্তায় প্রতিটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য একটি বার্তা আছে।
“কি সেই বার্তা? বার্তাটি হল, রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হতে হলে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে হবে। দেশ এবং জনগণের স্বার্থকে সবার আগে বিবেচনায় আনতে হবে, বিবেচনা করতে হবে।”
তিনি বিএনপির প্রত্যেক কর্মীকে জনগণের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান।
বক্তব্যের শেষে বাবা জিয়াউর রহমানের জন্য সকলের কাছে দোয়া চান জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান।
ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এই আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
থাইল্যান্ডে ব্যাংককে একটি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন থাকা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান।