Published : 29 Dec 2023, 07:52 PM
বাবার আসনে ভোটের প্রচার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে প্রায় দুই দশক আগের দুঃসহ স্মৃতির মুখোমুখি দাঁড় করাল।
গাজীপুরে যতবার ভোট আসে, ততবার ঘুরে ঘুরে আসে রাসেলের বাবা সাবেক শ্রমিক নেতা ও সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার স্মৃতি। আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়।
গাজীপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী রাসেল শুক্রবার বিকালে গাজীপুর সদর থানার শিমুলতলী এলাকায় চতর স্কুল গেট এলাকায় পথসভায় যোগ দেন। সেখানে তার বাবার কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দেন এক ভোটার। তার এই আবেগ মুহূর্তেই ভোটের প্রচারে এনে দেয় শোকের ছায়া।
বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল গণি হুইলচেয়ারে করে সেই পথসভায় যোগ দেন। রাসেল এগিয়ে গেলে তার গলায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন গণি।
তিনি বলতে থাকেন, “তোমার বাবাও আমার কাছে ভোট চাইতে এসেছিলেন। তাকেও দোয়া করেছিলাম, ভোট দিয়েছিলাম। সেবার নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। তোমার জন্যও দোয়া রইল।”
এ কথা বলে উচ্চশব্দে কাঁদতে থাকেন গনি।
রাসেলও আবেগাক্রান্ত হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। পথসভায় মুহূর্তে ফিরে আসে আহসান উল্লাহ মাস্টারের স্মৃতি।
মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টঙ্গী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এই সদস্য ছিলেন এলাকায় জনপ্রিয় নেতা।
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে খুন হন ওমর ফারুক রতন নামে আরেকজন।
সেই ঘটনাটি সে সময়ের রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে। ব্যাপক চাপে পড়ে সে সময়ের ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট।
জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংসদে যান রাসেল। এরপর ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর তাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
রাসেল এবার পঞ্চমবারের মতো ভোটের লড়াইয়ে। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের এই নির্বাচনে তিনি নির্ভার নেই। দলের একাংশের মোকাবিলা করে জয় আনতে হবে তাকে।
আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর সেখানে ট্রাক প্রতীক প্রার্থী হয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন।
বুদ্দিন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। জাহাঙ্গীর যখন মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই কমিটিতে ছিলেন তিনিও। পরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ উঠলে জাহাঙ্গীর পদ হারালে বাদ পড়েন বুদ্দিনও।
জাহাঙ্গীর যে গাজীপুরের নির্বাচনে প্রভাবক, সেটি একাধিকবার প্রমাণ হয়েছে। সবশেষ গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করিয়ে রাজনীতিতে আনকোড়া মা জায়েদা খাতুনকে জিতিয়ে আনেন জাহাঙ্গীর।
রাসেল এই নির্বাচনে ভোটারদের কাছে তার আমলে এলাকায় উন্নয়নের পাশাপাশি বাবার কথাও তুলে ধরছেন।
চতর স্কুল গেট এলাকায় সেই পথসভায় তিনি বলেন, “গাজীপুর সদর থানাধীন পশ্চিম চত্বর অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য 'শহীদ উল্লাহ মাস্টার নগর' নামে আবাসন গড়ে তুলে সেখানে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ওই জায়গায় খুপরি ঘরে কিছু অসহায় ও দরিদ্র লোক বসবাস করতেন। তাদের কথা চিন্তা করে ওই জমি তাদের নামে বরাদ্দ এবং ঘর নির্মাণ করার ব্যবস্থা করেছি।
“বর্তমানে সেখানে ৭৫টি পরিবার বসবাস করছেন। কোনো দখলদার এ সুযোগ পেলে তা নিজে দখল করে হয়ত সুবিধা নিতেন। আমি তা করিনি।”
রাসেল বলেন, “এই এলাকাটা এক সময় গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের আওতাধীন চলে গিয়েছিল। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ও সুবিধার জন্য আমি উপরের মহলে তদবির করে তাদের আওতামুক্ত করেছি। এর সুবিধা এখন এলাকাবাসী পাচ্ছেন।“
এই আসনে আওয়ামী লীগ ‘পরিবারে’ রাসেল ও বুদ্দিন ছাড়াও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে। তবে তাকে নিয়ে সেভাবে আলোচনা নেই।
আরও ছয় জন প্রার্থী আছেন নির্বাচনে। তাদের কেউ মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।