Published : 26 Apr 2024, 03:25 PM
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা পাকিস্তান করলেও দেশের সরকারবিরোধীদের সেই উন্নতি 'চোখে পড়ে না' বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, "বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে এত হীন মনোবৃত্তির পরিচয় তারা দিচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে তাদের বাস্তবতা বোঝা উচিৎ।"
পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালে এখন তাদের ‘লজ্জা হয়’। অর্থনীতির প্রসঙ্গে শাহবাজ তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ কথা স্মরণ করেন। তার ভাষ্য, সে সময় ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ বোঝা মনে করা হত। কিন্তু বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে 'বিস্ময়কর অগ্রগতি' অর্জন করেছে।
শাহবাজের মন্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে কাদের বলেন, "এখন তিনি (শাহবাজ শরিফ) বোঝাচ্ছেন বাংলাদেশ উন্নয়নে অনেকে এগিয়ে গেছে। যে উন্নয়ন দেখে তিনি লজ্জিত হন। শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে বিএনপির প্রকৃত সত্য শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছু আছে।"
যুদ্ধের উসকানিতে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় যুক্তরাষ্ট্র 'সাহায্য করছে' বলেও মন্তব্য করেন কাদের। গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "তারা (ইসরায়েল) কারো কথা শোনে না। আবার আমরা দেখছি, কংগ্রেস থেকে যে ফান্ড ইসরায়েলের অংশটা ইতোমধ্যে দিয়ে দিছেন। তার মানে যুদ্ধের উসকানিতে সাহায্য করেছে তারা। এই গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে নিকৃষ্টতম নমুনা, এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক।"
'বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি'- যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, "সারা পৃথিবীতে যেভাবে মানবাধিকারের অবনতি হচ্ছে, আজকে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলছেন। তাদের ম্যাথিউ মিলার, জন কিডনি এরা এইসব নিয়ে কথা বলছেন হোয়াইট হাউসে। আমার বক্তব্য হচ্ছে তাদেরই পাশে গাজায় ইসরায়েল যা করছে সেটা মানবাধিকারের কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে? ১৪ হাজার শিশু, ৩৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রতিদিনই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে।"
কাদেরের ভাষ্য, "উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, রাশিয়া-ইউক্রেইন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাস পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রাফায় আগ্রাসী অভিযান শুরু করেছে।
"এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেত্রী যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলছেন। সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং যুদ্ধকে না বলার জন্য বিশ্বের সকল নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন।"
‘আওয়ামী লীগের কৌশল নিয়ে সাংবাদিকদের কথা বলার দরকার নেই’
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, " প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার এখনো সময় আছে। যে কোনো সময় প্রত্যাহার করতে পারে। শেষটা দেখেন। দলের নির্দেশ অমান্য হলে সময় মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে– এমন কথা কিন্তু আমি বলেছি।"
কাউকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগ বাধ্য করতে পারে কি না– সেই প্রশ্নে কাদের বলেন, "কোনটা করলে প্রশংসা করবেন? আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে সবসময় একটা উলটা প্রশ্ন করতে অভ্যস্ত। আমাদের কৌশল নিয়ে আপনার কথা বলার দরকার নেই।"
নির্বাচন ঘিরে সিইসির সংঘাতের শঙ্কার বিষয়টি আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, "সংঘাতের আশঙ্কা হয়ত করতে পারেন। সংঘাত যেন না হয়, সেটা দেখার জন্য আমাদের দায়িত্ব আছে, আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।"
‘আন্দোলন ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে’
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কাদের বলেন, " গণঅভ্যুত্থান থেকে লিফলেট বিতরণে নেমে আসা এটা কি আন্দোলনের উত্তাল হবার লক্ষণ? না আন্দোলন ধীরে ধীরে ফিজলড আউট হচ্ছে এমন লক্ষণ?"
উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি থেকে অংশ নেওয়া ৬৭ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করার বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, "আমরা এখানে সমর্থনও করছি না, বিরোধিতাও করছি না। বিএনপির ব্যাপার বিএনপি দেখবে।"
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।