Published : 17 Dec 2024, 03:39 PM
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় অটোরিকশা শ্রমিকদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর এবার বাস শ্রমিকরা অটোরিকশা স্ট্যান্ডে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নগরের রেলগেট এলাকার অটোরিকশা স্ট্যান্ডে মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙচুর করা ৩২টি অটোরিকশা পেয়েছি। বাকি গাড়িগুলো যাত্রী নিয়ে চলে গেছে। ভাঙচুর করা গাড়ির সংখ্যা ৭০টি হতে পারে। সবগুলোর কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিছু গাড়ি উল্টে ফেলা রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় যাত্রী ও চালক মিলিয়ে ১২ জনের মতো আহত হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। অটোরিকশার চালকদের মামলা করতে বলেছি।”
এর আগে সোমবার রাজশাহীর তানোর উপজেলার ফায়ার সার্ভিস মোড়ে অটোরিকশার চালকরা বাসের চালক ও সহকারীসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর রেলগেটে অটোরিকশা স্ট্যান্ডে হামলা চালায় বাস শ্রমিকরা। পরে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বাস শ্রমিকরা রেলগেট এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলছেন, “বাস শ্রমিকেরা হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রেলগেট এলাকার স্ট্যান্ডে ঢুকে একের পর এক অটোরিকশা ভাঙচুর করতে শুরু করে। এ সময় বাধা দিতে গেলে তারা অটোরিকশার চালক ও যাত্রীদের পিটিয়ে আহত করে।”
বাস শ্রমিকরা অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এ সময় পিটিয়ে আহত করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনকে। তাদের বেশিরভাগই চালক; কয়েকজন যাত্রীও আছেন। আহতরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
অটোরিকশা চালক প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুস সামাদ বলেন, “সকালে আমি বাগমারার তাহেরপুরের সিরিয়াল পেয়েছিলাম। দুইজন যাত্রী তখন গাড়িতে বসেছিল। গাড়ি ভর্তি করার জন্য আরও যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
“এ সময় হঠাৎ কয়েকজন লাঠি নিয়ে এসে আমার গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এতে আমার ছয় হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।”
এর আগে বাস চালকদের মারধরের ঘটনার জেরে সোমবার বেলা ১টা থেকে রাজশাহী থেকে সব পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক হয়। সেখানে হামলায় জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দেওয়া হলে সাত ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত ৮টা থেকে রাজশাহী থেকে সব পথে বাস চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।
রাতে বাস চালুর পর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এবং রাজশাহী থেকে ঢাকায় বাস ছেড়ে গেলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তা আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে যাত্রীদের যাতায়াতে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা বলেন, “সোমবার তানোর রুটে চলাচল করা বাসগুলোতে, অটোকিশার চালকরা হামলা করে শ্রমিকদের মারধর করে। এতে পাঁচজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন।
“এই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি অবৈধ অটোকিশা চলাচল বন্ধ করা না হলে বাস চালু করা হবে না।”
ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “অটোরিকশা স্ট্যান্ডে হামলার ঘটনায় অটোরিকশা চালকরা মামলা করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
সোমবার বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় রাতেই থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “এতে আসামি হিসেবে ১৮ জন সিএনজি চালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও আসামি রয়েছেন। মামলার পর দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”