Published : 01 Jul 2025, 04:19 PM
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পাহাড়ি জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে খেজুর চাষ করে সফলতা পেয়েছেন এক কৃষক; যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের ‘বারহি’ ও ‘আম্বার’ জাতের খেজুর চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলা সদর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে রসুলপুরে এ খেজুর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নুর আলম নামের এক কৃষি উদ্যোক্ততা। তার দুই একরের বাগানের গাছগুলোতে ঝুলছে সবুজ ও লাল রঙের খেজুর, যা দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন অনেকে।
নুরের বাগানে খেজুরের পাশাপাশি ড্রাগন, কমলা, লটকন, রাম্বুটান ও আলুবখরাসহ বিভিন্ন ফলের চাষও হচ্ছে। চলতি মৌসুমে অন্তত সাত লাখ টাকার খেজুর বিক্রির আশা তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের মাঝারি টিলা ভূমিতে সারি সারি খেজুর গাছ। প্রতিটি গাছের গড় উচ্চতা ১২ ফুট। সবুজ আর হলুদ রঙের খেজুর থোকায় থোকায় ঝুলছে প্রতিটি গাছে। বাগানের ফল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। ফলের সুরক্ষায় মুড়িয়ে রাখা হয়েছে সাদা পলিথিনে।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে খেজুরের চাষ শুরু করেন নুর আলম। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে খেঁজুরের চাষের যাত্রা শুরুর কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন এ কৃষি উদ্যোক্ততা।
নুর বলেন, “২০১৯ সালের দিকে পাহাড়ে ১৩ একর টিলা ভূমি কিনি। এরপর মাটির পরীক্ষা করা হয়। বিশেষেজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে ‘বারহি’ জাতের খেজুর চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে ১০২টি ‘টিস্যু কালচার’ চারা সংগ্রহ করি। কারণ টিস্যু কালচার করা গাছের ফলন বেশি। পরের বছর সৌদি আরব থেকে আরও ৫০টি খেজুরের চারা নিয়ে এসে রোপণ করি বাগানে।
“তিন বছর পর থেকে ফলন আসা শুরু হয়। এরপর বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের চাষ শুরু করি। বারহির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান আম্বার জাতের খেজুরের চারা রোপণ করেছি। সেগুলোতে এবার ফলন এসেছে। আমার বাগানে বারহি জাতের খেজুর গাছ আছে ১২৫টি। আর আম্বার জাতের গাছ আছে দুটি। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়।”
খেজুরের পাশাপাশি বাগানে ড্রাগন, কমলা, লটকন, রাম্বুটান ও আলুবখরাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হচ্ছে বলে নুর আলম জানান।
তিনি বলেন, “স্থানীয় বাজারে খেজুরের ভালো চাহিদা আছে। তবে পুরোটাই আমদানি নির্ভর। পার্বত্য এলাকায় কেবল আমিই খেজুরের চাষ করছি। পাহাড়ের মাটি ও আবহওয়া খেজুর চাষের উপযোগী। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকহারে খেজুর চাষ হলে স্থানীয়ভাবে চাহিদা পুরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো গেলে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। কর্মসংস্থানও হবে।
“খেজুর দীর্ঘদিন রেখে সহজে বাজারজাত করা যায়। গাছের তেমন একটা পরিচর্যাও লাগে না। বছরে একবার জৈব এবং একবার রাসায়নিক সার দিলেই যথেষ্ট। উৎপাদিত খেজুর বেশ সুস্বাদু এবং সুমিষ্ট। কাঁচা খাওয়ার জন্য এটি বেশ বিখ্যাত। খেজুর বিপণনে ঝামেলাও কম। স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় যায়।”
চলতি মৌসুমে অন্তত সাত লাখ টাকার খেজুর বিক্রির আশা করছেন এ কৃষি উদ্যোক্ততা ।
এদিকে নুর আলমের খেজুর বাগান দেখতে প্রায়ই প্রতিদিনই উৎসুক লোকজন ভিড় জমান। তাদের অনেকেই খেজুর চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা জসীম উদ্দিন বলেন, “আমার আমের বাগান রয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় এখন খেজুর চাষ হচ্ছে তাই দেখে আসলাম। চারা সংগ্রহ করে আমারও প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করব।”
আরেক কৃষি উদ্যোক্ততা নাফিস উদ্দিন বলেন “'পাহাড়ে উৎপাদিত খেজুরের দামও বেশ চড়া। বিপণন সুবিধাও রয়েছে। স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে যায়।
“নুর আলম ভাই খেজুরের চারাও বিক্রি করেন। উনার বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে আমার টিলা ভূমিতেও খেজুরের চাষ করব।”
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, “নুর আলম খেজুর চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি খেজুরের চারাও বিক্রি করেন। আমাদের পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। তবে এটির চাষ পদ্ধতি বেশ জটিল।
“যেহেতু এটি অপ্রচলিত ফল সেক্ষেত্রে আগ্রহী কৃষকরা সফল কৃষি উদ্যোক্ততা নুর আলমের পরামর্শ নিতে পারেন। আমি তার বাগান পরিদর্শন করেছি। খেজুর বেশ লাভজনক ফল।”