Published : 04 Jul 2025, 07:30 PM
কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক ব্যবসার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে মা ও ছেলেমেয়েকে পিটিয়ে হত্যার পর জমজমাট কড়ইবাড়ী গ্রাম এখন অনেকটাই থমথমে; গ্রেপ্তার আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে পুরুষরা এলাকা ছেড়ে গেছেন।
ঘটনার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কেউ আটক নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের মরদেহ সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দাফনের উদ্দেশে কড়ইবাড়ি নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে একটি বাড়িতে মাদক কারবার ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে কিছু লোক হামলা চালায়।
হামলায় কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল (২৮) ও মেয়ে জোনাকি (২২) ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আহত হয়েছেন রুবির মেয়ে রুমি আক্তার (৩০)। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিবারের দাবি, একটি মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত এবং বুধবার সন্ধ্যায় পরিকল্পনা করে বৃহস্পতিবার সকালে হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে।
কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, পরিবারটির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরেই মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। তারা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। এ থেকেও এ ঘটনা ঘটতে পারে।
মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী একটি বাসস্ট্যান্ড। রুবির বাড়িটি কড়ইবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে। এর আশপাশে বেশ কিছু দোকানপাটও রয়েছে। এটি মুরাদনগর-নবীনগর আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে পড়েছে। এই সড়ক ধরেই কুমিল্লা থেকে মানুষজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত করেন। ফলে জায়গাটি সবসময় লোকজনের আনাগোনায় জমজমাট থাকে।
শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আশপাশে তেমন কোনো মানুষজন নেই। বাড়ির ভেতরে ও সামনে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য পাহারা দিচ্ছেন।
আগের দিন বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ড নিয়ে উৎসুক জনতা গণমাধ্যমকে বক্তব্য দিলেও শুক্রবার কাউকে কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ করে পুরুষ মানুষদের বেশিরভাগই এলাকা ছাড়া হয়েছেন। নারীরা বলছেন, ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন।
রুবির বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের এক নারী চা দোকানি বলছিলেন, “বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় এলাকার অনেকেই ছিলো। মামলা হলে পুলিশ আবার কাকে ধরে নিয়ে যায়- এজন্য কেউ প্রকাশ্যে নেই। পুরুষরা কেউ কেউ বাড়িতেও থাকছেন না। এ কারণে কড়ইবাড়ী বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ। জমজমাট এলাকা এখন খালি হয়ে গেছে।”
থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশের তালিকায় নাম থাকা রুবির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে তিনি মাদকসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
তিনি কড়ইবাড়ীতে ‘রুবি আক্তার মঞ্জিল’ নামে একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। বাড়িতে ছেলে, দুই মেয়ে ও জামাতারা থাকেন। পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুবির ছেলে নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার। তিনি বলেন, “একটি মোবাইল চুরির ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়। বুধবার রাতে বাছির নামে এক যুবক আমার স্বামীকে ফোন করে সকালে পুরো পরিবারকে হত্যা করে ফেলার হুমকি দেয়।
“বুধবার সন্ধ্যায় এই হামলা করার পরিকল্পনা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। রাতে দুইবার আমার স্বামীকে ফোন করে এটি জানানোও হয়। এভাবে যে তিনজন মানুষকে মেরে ফেলা হবে সেটা বুঝতে পারিনি। হামলায় আমার আরেক ননদের অবস্থাও গুরুতর।”
অপরদিকে এলাকার কয়েকজনের ভাষ্য হচ্ছে, একজন স্কুল শিক্ষকের মোবাইল চুরি হওয়ার পর এলাকাবাসী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে বৃহস্পতিবার সকালে রুবির পরিবারকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাবাদের সিদ্ধান্ত হয়। সকালে এ নিয়ে ‘হট্টগোল’ হয় এবং এক পর্যায়ে গ্রামবাসী পিটিয়ে ওই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করে। এ সময় রুবির বাড়িটিতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
সার্বিক বিষয়ে বাংগরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, “ঘটনায় কারা জড়িত, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে- সবকিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয়। জড়িতদের অচিরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
মামলা প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা থানায় এসে মামলা করবেন।
আরও পড়ুন:
মা ও ছেলেমেয়েকে পিটিয়ে হত্যা: 'সন্ধ্যায় পরিকল্পনা, সকালে হামলা'
কুমিল্লায় মা ও ছেলে-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা