Published : 27 Sep 2024, 12:36 AM
গাজীপুরের শ্রীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর হাসপাতালে মারা যান যুবক।
১৩ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয় বলে শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন জানান।
নিহত মো. ইসরাফিল (২৪) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মো. নাসির উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়ির বসতঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন ইসরাফিল। সকাল ৭টার কিছু সময় পর, এলাকার কয়েকজন যুবক তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে স্থানীয় জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চান।
পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির অদূরে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।
নিহতের বাবা নাসির উদ্দিনের অভিযোগ, সেখানে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ইসরাফিলের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়।
পরে কোমড়ের নিচে গরম পানি ঢেলে দেয় নির্যাতনকারীরা। গরম পানিতে তার ছেলের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফুসকা পড়ে যায়।
এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীরা ইসরাফিলের বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মারতে মারতে চোর পেটানোর উৎসব শুরু করে।
এ সময় ইসরাফিলের কোনো স্বজনদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। তারা কাছে যেতে চাইলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ।
এ ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মণ্ডল, শফিকুল ইসলাম নামে তিনজন ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মো. ইসরাফিলের বাবা নাসির উদ্দিন।
যার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ তিনি শৈলাট গ্রামের কামরুল হাসান লিটন (৫০)। লিটন শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকও।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কামরুল হাসান লিটনের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ইসরাফিলের ওপর ওই নির্যাতন চালায়।
নাসির উদ্দিনের অভিযোগ, “নির্যাতনের সময় আমার ছেলে পানি পান করতে চেয়েছিল, জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু জীবন ভিক্ষা তো দূরের কথা, তারা পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। আমরা এত চেষ্টা করেছি, তবুও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি।”
নিহতের দাদি মহরজান অভিযোগ করে বলেন, তার নাতিকে বাড়ি থেকে স্কুলমাঠে ডেকে নিয়ে সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। তিনি নাতিকে বাঁচাতে বার বার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু নির্যাতনকারীরা বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।
ইসরাফিলের চাচা আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, “মারধরের পর একটি ভ্যানে তুলে ইসরাফিলকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় তিনদিন থাকার পর আমার ভাতিজাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে গত ১৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইসরাফিল মারা যান।”
ইসরাফিল মারা যাওয়ার পরপরই নির্যাতনকারীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
লিটনের কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, “ইসরাফিলের ওপর চালানো নির্যাতন সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি। ছেলেটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। এ ঘটনায় কামরুল হাসান লিটন আমাকে কিছুই জানাননি।”
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত করা হবে।
শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আগের দেওয়া লিখিত অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে।