Published : 04 Jun 2024, 05:12 PM
ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ওমর ফারুক সৌরভ তার চাচাত বোনকে বিয়ে করায় পারিবারিক বিরোধে খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলার পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ ভূঁইয়া এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
সৌরভ হত্যায় জড়িত তিনজনকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সৌরভের শ্বশুর সৌরভ ইলিয়াস আলী (৫৫), তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) এবং সৌরভের লাশ বহনকারী প্রাইভেটকারের চালক আব্দুল হান্নান (৬৫)।
এর আগে রোববার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা সেতুর নিচে সুতিয়া নদী থেকে ওমর ফারুক সৌরভের লাগেজবন্দি চারখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত ২৪ বছর বয়সী ওমর ফারুক সৌরভ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের তারাটি গ্রামের ইউসুফ আলী আকন্দের ছেলে। তিনি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, “ইসরাত জাহান ইভা সৌরভের আপন চাচাত বোন। তিন বছর আগে কানাডায় অধ্যয়নরত এক চিকিৎসক ছেলের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইভাকে বাংলাদেশে রেখে তার স্বামী কানাডায় চলে যান। ইভা তখন তার চাচাত ভাই সৌরভের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। ঘটনাটি দুই পরিবার জানতো।
“গত ৯ মে ইভা ঢাকায় তার এক বান্ধবীর বাসায় সৌরভকে বিয়ে করে। পরে সেই বিয়ের খবর জানাজানি হলে মেনে নেয়নি ইভার বাবা ইলিয়াস আলী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইভাকে তিনি ১৬ মে কানাডায় পাঠিয়ে দেন।”
এ পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, “গত শনিবার সৌরভ তার স্ত্রী ইভার সাবেক স্বামীর বাবা চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে ময়মনসিংহ আসেন। তখন সৌরভ আমিনুলের কাছে তার বিয়ের বিষয়টি খোলাসা করে তার সহযোগিতা চান। পরে আমিনুল ঘটনাটি ইলিয়াসকে জানালে তিনি তার ছেলে মৃদুলকে দিয়ে সৌরভকে বাসায় ডাকেন।
“সৌরভ বাসায় গেলে ইলিয়াস ও তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক প্রথমেই তাকে মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। এরপর চাপাতি দিয়ে শরীর চারখণ্ড করে। পরে গাঙ্গিনারপাড় থেকে একটি নতুন লাগেজ কিনে তাতে চার খণ্ডিত দেহ ভরে নদীতে ফেলে দেয়।”
পরে এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ফারুককে ঢাকা থেকে এবং ইলিয়াস ও হান্নানকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ ভূঁইয়া জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সৌরভের পরিচয় যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সনাক্ত করতে না পারে সে জন্য ইলিয়াস আলী সৌরভের হাতের আঙুল নষ্ট করে দেন।
“লাগেজ কেনার সূত্র ধরে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়েছে, তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।”
এ ঘটনায় নিহত সৌরভের বাবা ইউসুফ আলী রোববার রাতে ময়মননিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ।
সোমবার রাতে ঈশ্বরগঞ্জের তারাটি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে সৌরভের দাফন হয়েছে।