Published : 21 Jun 2023, 02:17 PM
নারায়ণগঞ্জের গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।
বুধবার সকাল ৮টায় পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের ১৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়৷ একটানা ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত৷
এই নির্বাচনে একাধিক কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী বাকি তিন প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের দেখা মেলেনি।
এ ছাড়া একটি কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ভোটার উপস্থিত থাকার সময় দুই এজেন্টকে উঁকি দিতে দেখা গেছে। আবার কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
নির্বাচনে পৌর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম এ হালিম শিকদার (নৌকা)। মূলত তার এজেন্ট ও সমর্থকদের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তানভীর আহম্মেদ (নারকেল গাছ), গোপালদী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর (জগ) এবং গোপালদী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (মোবাইল ফোন)৷
তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গোলাম ফারুক মোল্লা (হাতপাখা)।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জালাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রটির পাঁচটি বুথের একটিতেও নারিকেল গাছ ও মোবাইল ফোন প্রতীকের পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়নি৷
জালাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রটির কেবল ৩ নম্বর বুথে সবগুলো প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের উপস্থিতি দেখা যায়৷ একই কেন্দ্রের ১, ২, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর বুথে মোবাইল ফোন প্রতীকের পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি৷ ৬ নম্বর বুথে শুধুমাত্র নৌকা প্রতীকের এজেন্টকে দেখা গেছে৷ বাকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট ওই বুথে ছিলেন না৷
কেন্দ্রটির ১ নম্বর বুথে কথা হয় নারকেল গাছ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট মো. রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, “নির্বাচনের শুরু থেকে নানা হুমকি দিয়েছে নৌকার লোকজন। সবাই ভয়ে আছে। আমি কথা দিয়েছিলাম যে কেন্দ্রে থাকব, তাই মানবতার খাতিরে আছি। যা হওয়ার তো আগেই হয়েছে৷ দেখেন না কেন্দ্রে নৌকার বাইরে কেউ নাই৷”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারকেল গাছ প্রতীকের আরেক পোলিং এজেন্ট বলেন, “ভয় দেখানোর কারণে কেউ সাহস করে নাই। নারীকেন্দ্রের এজেন্টরা তো ভয়েই আসেন নাই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার মিরাজ হোসেন বলেন, “কাউন্সিলর প্রার্থী সবার এজেন্টই প্রতিটি বুথে আছেন। তবে একাধিক মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট আসেননি৷ যারা এসেছেন তারা সবাই উপস্থিত আছেন৷”
একই কথা বলেন নারীকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আরিফ সরকার৷
তবে মোবাইল ফোন প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের অভিযোগ, সবগুলো কেন্দ্রেই তিনি তার প্রার্থী নিয়োগ করেছিলেন৷ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তার লোকজন নির্বাচনের শুরু থেকে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন৷ ভয়ে এজেন্টদের অনেকেই ভোটের দিন কেন্দ্রে থাকার সাহস করেননি৷
একই অভিযোগ করেন নারিকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী তানভীর আহম্মেদও৷ তিনি বলেন, “সবগুলো কেন্দ্রে আমি এজেন্ট দিয়েছিলাম৷ এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্রে যেতে দেয় নাই৷ যারা কেন্দ্রে গেছে তাদেরও বের করে দিচ্ছে৷ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বুথ থেকে আমার এজেন্টকে সকালেই বের করে দিয়েছে৷ এমন আরও কয়েকটি জায়গা থেকে অভিযোগ পেয়েছি।”
ভোটগ্রহণ চলাকালীন আরও অনিয়মের অভিযোগ করেন তানভীর৷
তিনি বলেন, “নৌকার এজেন্টরা গোপন বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন৷ তারা ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন৷ আমাকে ভোট দেওয়ায় রামচন্দ্রদী হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে এক ভোটারকে মারধরও করা হয়েছে।”
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামচন্দ্রদী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টরা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে ভোটাররা কোন মার্কায় ভোট দিচ্ছেন তা নজরদারি করার অভিযোগ পাওয়া যায়৷
খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিদ্যালয়টির পুরুষ কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, একজন ভোটার ভোট দেওয়ার সময় বাইরে থেকে দুই ব্যক্তি গোপন কক্ষের পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছিলেন৷
পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের আলাদা দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বলে পরিচয় দেন৷ তবে তাদের গলায় কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয়পত্রের পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ব্যাজও ঝুলতে দেখা যায়।
এদের মধ্যে শাহীন মোল্লা উটপাখি প্রতীকের এবং অপরজন মো. জাহাঙ্গীর পানির বোতল প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বলে পরিচয় দেন৷
শাহীন মোল্লা বলেন, “ওই ভোটার কোন বোতাম চাপতে বুঝতে পারছিল না৷ তাই আমরা তাকে সাহায্য করতে গিয়েছিলাম, আর যাব না।“
গোপন কক্ষে প্রার্থীর এজেন্টদের উঁকি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই বুথে দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “বুথের সামনে প্রচুর ভোটার৷ আমি তাদের ফিঙ্গার স্ক্যান, ভোটগ্রহণ নিয়েই ব্যস্ত৷ এজেন্টরা শৃঙ্খলা মানছেন না, এটা তো দেখার কথা প্রশাসনের৷ সব আমি দেখলে তারা কী করবেন?”
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, “গোপন কক্ষে উঁকি দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে অফিসার পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু এমন অভিযোগের সত্যতা পাইনি৷ আর প্রার্থীরা অনেক কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি৷ কাউকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি৷”